অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দেশের বাজার ও সরকারি মজুতে চালের যেই মাহসঙ্কট দেখা দিয়েছে তাতে করে দেশে ফের ১৯৭৪ সালের মত ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের গন্ধ পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রাইস মিল মালিকরা।
দেশে চাল সংকট নেই সরকারের পক্ষ থেকে এমন দাবি করা হলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত পরিমাণ চাল মজুত নেই। সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত চাল নেই বলেই ওএমএসের চালের দাম দ্বিগুণ করে ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায় নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলসহ দেশের মানুষের চরম বিরোধীতা সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে আতপ চাল এনে ঘাটতি মোকাবেলার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।
এদিকে আওয়ামী লীগপন্থী রাইস মিল মালিকদের একটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান একেএম খোরশেদ আলম খান অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বর্তমানে চালের সঙ্কট ও এত কেলেঙ্কারির জন্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ কায়কোবাদ ও খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান সমানভাবে দায়ী। কারণ, আমরা যখন বলেছি, ৩৪ টাকায় চাল পাবেন না, চালের দাম বাড়ান, আমাদের সেই পরামর্শ শোনেননি। আমরা যখন বলেছি, চাল আমদানির অনুমতি দেন, তখন দেননি। আমরা যখন বলেছি, চালের ওপর থেকে আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে দেন, আমাদের এ পরামর্শও শোনেননি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পরামর্শ শুনলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না। আমি বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলেছি ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষের গন্ধ পাচ্ছি।’
জানা গেছে, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম নিজের ব্যর্থতা ও দুর্ণীতি ঢাকতে রাইস মিল মালিকদের মূল সংগঠন ‘বাংলাদেশ অটো, মেজর, হাসকিং রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদেরকে বিএনপি-জামায়াত আখ্যা দিয়ে তারাই কৃত্রিমভাবে চাল সংকট তৈরি করে সরকারকে বিব্রত করছে বলে প্রচার করছেন। তারা সরকারকে সহযোগীতা করছেনা বলেও প্রচার করা হচেছ।
বাংলাদেশ অটো, মেজর, হাসকিং রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বাংলা ট্রিবিউনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামই সব জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন, আমি নাকি জামায়াতের রাজনীতি করি।’ তিনি বলেন, ১৯৬৯ সালে রাজশাহী নিউ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র থাকাবস্থায় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের নায়ক, তৎকালীন ডাকসুর ভিপি, বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ১১ দফার পক্ষে রাজপথে আন্দোলন করেছি। সেই আমি এই সময়ে এসে জামায়াত হলাম কিভাবে?’ ‘আমি তো জামায়াতবিরোধী ছিলাম, এখনও আছি। সারা জীবন আমার রাজনৈতিক শত্রু ছিল জামায়াত-শিবির। অথচ এখন বলা হচ্ছে, আমি নাকি জামায়াতের রাজনীতি করি।’
খাদ্যমন্ত্রীর এমন অভিযোগের প্রতিবাদ করছেন না কেন- জানতে চাইলে লায়েক আলী বলেন, ‘আমি তো আর রাজনীতিই করি না, যে চিল্লাচিল্লি করব!’
সরকারকে অসহযোগীতার ব্যপারে জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে লায়েক আলী বলেন, ‘অভিযোগ রয়েছে, ধান ও চাল সংগ্রহে আমরা নাকি সরকারকে সহযোগিতা করছি না। এমন অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা যদি সরকারের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সদস্য হতাম, তাহলে কমিটির মিটিংয়ে ধান-চাল সংগ্রহে সরকারকে পরামর্শ দিতে পারতাম। অনেকবার বলার পরও আমাদেরকে সদস্য করা হয়নি। এরপরও আমরা ওই কমিটির বাইরে থেকে সরকারকে ধান ও চাল সংগ্রহে লিখিত পরামর্শ দিয়েছি। যদিও সে পরামর্শ নেওয়া হয়নি।
এদিকে সরকার সমর্থিত ‘বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতারা সুবিধা নিতে তাদের প্রতিপক্ষ সংগঠনের নামে এ সব অভিযোগ চাপিয়ে ফায়দা নিতে চাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে সংগঠনটির চেয়ারম্যান একেএম খোরশেদ আলম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্য সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জামায়াত করেন, এমন কথা আমরা কখনও কোথাও বলিনি। তিনি যে জামায়াত করেন, তা খাদ্যমন্ত্রী (রবিবার ১৭ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। আমরা সেখান থেকেই জেনেছি যে, উনি জামাতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।’
এমন দোষারোপের মধ্যেই অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে খাদ্যের ঘাটতি রয়েছে। যদিও সরকার বিষয়টি ধামচাপা দিয়ে যাচ্ছে। যে কয়টি দেশ থেকে সরকার চাল আমদানি করার চুক্তি করেছিল, এখন পর্যন্ত একটি দেশ থেকেও চাল আসেনি। সেজন্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম মিয়ানমার গিয়েছিলেন চালের জন্য। সেখান থেকেও তিনি খালি হাতে ফিরেছেন। যদিও সংসদে দাবি করেছেন যে চুক্তি করে এসেছেন। এছাড়া ভারতও আপাতত বাংলাদেশে চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। সব মিলিয়ে চাল নিয়ে সরকার এখন চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে।
এদিকে দেশে ৭৪-এর মতো ভয়াল দুর্ভিক্ষ ধেয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। আর এজন্য সরকারের লুটপাটের নীতিকে দায়ী করেছে সংসদের বাহিরে থাকা দেশের প্রধান বিরোধী দলটি। মঙ্গলবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে একথা বলা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের ভাষায় ‘সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা পরিকল্পিতভাবে চালের দাম বাড়িয়েছে। দেশে কোনো চালের সংকট নেই।’ তাহলে, সরকারি পরিচালনায় খোলাবাজারে যে চাল বিক্রি হয় সেটা নিয়ন্ত্রণ করছে কোন সিন্ডিকেট? খোলাবাজারের চালের দাম দিগুণ হলো কেন? তাদের মতে, লুকুচুরি না করে চালের বিষয়ে সরকারকে এখনই জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় দেশে সত্যি সত্যি ৭৪ এর ন্যায় দুর্ভিক্ষ নেমে আসলে তার সকল দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।
Discussion about this post