জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন, ‘কোনোকালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়েছে- শক্তি দিয়েছে বিজয় লক্ষ্মী নারী।’
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ক্যারিশম্যাটিক লিডার ও লৌহমানব তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। এই ক্যারিশম্যাটিক লিডার হয়ে উঠার পেছনে যার নিরন্তর প্রেরণা রয়েছে- তিনি আর কেউ নন, আরব বংশোদ্ভূত তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিনি গুলবারান এরদোগান।
শুধু এরদোগান নিজেই কি ব্যাপক জনপ্রিয়? না, সেই সাথে ৬১ বছর বয়সি ফার্স্ট লেডি এমিনি গুলবারান এরদোগানও বিশ্বের জনপ্রিয়।
এমিনি এরাদোগান বিশ্বজুড়ে আলোচিত ফার্স্ট লেডিদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও ‘রোলমডেল’। এককথায় পথিকৃৎ।
শুধু নিজের দেশ তুরস্কে নয়, যেখানে লঙ্ঘিত হয়েছে মানবতা সেখানেই ছুটে গেছেন তিনি। এর আগে সূদুর ইউরোপ থেকে ত্রাণবাহী জাহাজ নিয়ে চলে এসেছিলেন মায়ানমারের আরাকানে।
তুরস্কের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ দাভুতোগলুকে সঙ্গে নিয়ে চরম বৈরি আবহাওয়ার মাঝেও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের খোঁজখবর নিয়েছিলেন, নিজ হাতে ত্রাণ বিতরণ করেছিলেন। এইতো সেদিনও মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুর্দশায় তাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সফর করে গেলেন এমিনি এরদোগান।
একটি প্রাইভেট বিমানে ঢাকা পৌঁছান। তার সফর সঙ্গী ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলেত কাভাসুগলোও। এমিনি এরদোগান শুক্রবার বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শরণার্থীদের জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন, বললেন- রোহিঙ্গাদের জন্য যা যা করার সবই করবেন।
এছাড়া তিনি বলেন, ‘তুরস্ক এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত তৈরির চেষ্টা করছে। কারণ এই সংকট নিরসনে সারা বিশ্বের দায়িত্ব রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, তুরস্ক এই ইস্যুটি কাজাখস্তানে অনুষ্ঠেয় ১৩তম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনেও উপস্থাপন করবে।
শুধু রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্বের সব নির্যাতিতদের জন্য উদার এই মহিয়সী নারী। গত রমজানে তুরস্কে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার নারী ও শিশুদের সম্মানে ইফতার ও ডিনারের আয়োজন করেন ফার্স্ট লেডি এমিনি।
মক্কা থেকে রাসুল (সা.)-এর হিজরতের পর মদিনায় আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যকার সম্পর্কের ইতিহাস টেনে এসময় তিনি শরণার্থীদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে বলেন, ‘তোমরা কেউ গৃহহীন নও, আমাদের দেশ তোমাদেরও দেশ, তোমাদের দ্বিতীয় মাতৃভূমিতে তোমাদের স্বাগতম।’
(তুরস্কে সিরিয় শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করা তিন শিশুকে কোলে তুলে নেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও এমিনি এরদোগান)
(সোমালিয়া সফরকালে সেদেশের এক হাসপাতাল পরিদর্শনকালে দুই সোমালিও শিশুকে কোলে তুলে নেন এরদোগান দম্পত্তি)
২০১০ সালে পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা পর্যবেক্ষণে পাকিস্তান সফরে আসেন এমিনি এরদোগান। ভয়াবহ সে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তিনি।
নিজ দেশ তুরস্কে তাদের সাহায্যের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন এমিনি এবং তাদের সাহায্যের জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালান। এমনকি পাকিস্তান সফরকালে তার নিজের গলার হার বন্যায় দুর্গতদের সহায়তার জন্য দান করেন।
সেবছরের ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তানের ২০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। দুই হাজারের অধিক মানুষ প্রাণ হারায়। প্রায় দুই কোটি মানুষ দুর্ভোগের শিকার হন।
তার এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাকিস্তানের সরকার সে বছর তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘নিশান ই পাকিস্তানে’ ভূষিত করেন।
১৯৬৫ সালের ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি তুরস্কের ইস্তান্বুলে জন্মগ্রহণ করেন এমিনি গুলবারান। আরব বংশোদ্ভূত পাঁচ ভাই-বোনের পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ এমিনি। তুরস্কের একটি আর্ট কলেজে অধ্যয়ন এমিনি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই শিক্ষাজীবনের সমাপ্তি টানেন।
১৯৭৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এবং এমিনি গুলবারান এরদোগান বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এবং এমিনি এরদোগানের সংসারে রয়েছে ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। তারা হলেন- বিলাল এরদোগান, আহমেত বুরাক এরদোগান, সুমাইয়া এরদোগান ও ইসরা এরদোগান।
তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। যোগ দিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক সেমিনারে।
তুরস্কে গত ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থানচেষ্টাকালে পর্যটন শহর মারমারিসে প্রেসিডেন্ট এরদোগানসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেই ছিলেন এমিনি।
এমনকি এরপরেও বিভিন্ন শহরে জনগণের সাথে অবস্থানকালে এরদোগানের সাথে সাথেই থেকেছেন তিনি। সাক্ষাৎ করছেন অভ্যুত্থান প্রতিরোধে হতাহতদের পরিবারের সাথে।
তুরস্কের সরকারি ওয়েবসাইট টিসিসিবি.গভ.টিআর, ডেইলি সাবাহ, ডেইলি হুররিয়াত ও আনাদোলু নিউজ এজেন্সি অবলম্বনে
সূত্র: আরটিএনএন
Discussion about this post