অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মিয়ানমারে দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত চলমান সহিংসতায় পালিয়ে আসা গৃহহীন অসহায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু বর্ডার এলাকায় দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। খাদ্য ও পানীয় ছাড়া খোলা আকাশের নিচে রোদ বৃষ্টিতে অসহায় মানুষগুলো তাকিয়ে আছে একটু সাহায্য আর নিরাপত্তার আশায়। কেউ গুলিবিদ্ধ, কেউ শারিরীক নির্যাতনের যন্ত্রনা নিয়ে তাকিয়ে আছে এপাড়ের মুসলিম প্রধান দেশটির সীমান্তের দিকে।
ইতোমধ্যেই বিভিন্নভাবে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে পূর্ব থেকেও হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরনার্থী আছেন, যারা নিয়মিত খাদ্য, চিকিৎসার মত মৌলিক সুবিধাবঞ্চিত।
এদিকে শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া এসব মানুষদের অসহায়ত্বের সুযোগে তাদের সাথে নির্মম আচরণ করছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, সাহায্য প্রদানের কথা বলে অসহায় রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করছে, তাদের কাছে থাকা গরু, ছাগল এক থেকে দেড় হাজার টাকা কিংবা নামমাত্র মূল্যে জোরপূর্বক কিনে নেয়া হচ্ছে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে রোহিঙ্গারা তাদের পশুগুলোকে পানির দরে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অসহায়ত্বের সর্বোচ্চ সুযোগ নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে সেখানে মানব ইতিহাসের নির্মম অধ্যায় রচনা করছে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মী। মুখ বুঝে নিজ ধর্মের এই মানুষগুলোর নির্যাতন সহ্য করে চলেছেন দূর্ভাগা রোহিঙ্গা শরনার্থীরা।
জানা গেছে, শরনার্থী শিবিরের অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী স্থানীয় বাংলাদেশিদের কর্তৃক ধর্ষনের শিকার হয়েছেন। কোনো কোনো বাংলাদেশিকে দেখা গেছে গোপনে একাই কয়েকজন রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করে বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক রোহিঙ্গাদের দেয়া রিলিফ আত্মসাত করতে। স্থানীয় লোকদের দাবি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে এমন ঘটনা অহরহই ঘটছে। তাদের মতে কিছু কিছু বাংলাদেশি বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের নেতাকর্মীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে নিজেদের ব্যবসা ক্যাম্প বানিয়ে ফেলেছে।
বাংলাদেশের নাগরিক না হওয়ায় অসহায় রোহিঙ্গারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তাও পাচ্ছে না। তারা বলেন, রাষ্ট্রীয় নিপিড়নের শিকার হয়ে নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে পাশ্ববর্তী মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে তারা বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এখানেও নিজ ধর্মের লোকদের দ্বারা এমন নিপীড়ন তাদেরকে দিশেহারা করে দিয়েছে। অনেকে আক্ষেপ করে বলছেন এত বিশাল বিশ্বে নিপীড়নমুক্ত এতটুকু যায়গাও কি তারা পাবে না?
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে দেশটির সেনা শাসিত সরকার সেদেশে কয়েক দশক ধরে বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর জাতিগত নির্মুল অভিযানে এ পর্যন্ত হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। তাদের হত্যা ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। সম্প্রতি আবার মিয়ানমার সরকার তাদের উপর দমন পীড়ন শুরু করেছে। এই দমন পীড়ন অভিযানে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে, প্রায় ২৬শ ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার কথা তারাই স্বীকার করেছে এবং কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ও অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু সীমান্তে গৃহহীন অবস্থায় অমানবিক জীবন যাপন করছে।
Discussion about this post