অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশের পর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার পদত্যাগের দাবিতে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা এখন অনেকটা শীতল হয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে আসছে কিংবা সমাঝোতা করতে চাচ্ছে এমন কথা চাউর হলেও ভেতরে ঘটছে ভিন্ন ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেহেতু প্রধান বিচারপতিকে অপসারণ করার মতো কোনো অপশন সরকারের হাতে নেই তাই পদত্যাগ করতেও সরকার তাকে আর বাধ্য করবে না। পদত্যাগ করতে প্রধান বিচারপতিকে সরকার চাপ দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াতসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ উঠার পর এ পথ থেকে সরকার সরে এসেছে।
সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, প্রধান বিচারপতি যদি এখন স্বেচ্ছায়ও পদত্যাগ করেন তারপরও জনগণ মনে করছে সরকার তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। তাই সরকার এখন এনিয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বনের চিন্তা করছে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে অ্যানালাইসিস বিডি জানতে পেরেছে, রায়ের পর্যবেক্ষণে কারো একক নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়নি এমন মন্তব্য করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। এছাড়া সংসদকে অপরিপক্ক ও অকার্যকর মন্তব্যতো আছেই। এনিয়ে তারা সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে কোনোভাবেই ছাড় দেবে না। প্রধান বিচারপতির মেয়াদের যে ৫ মাস বাকী আছে ওই সময়টা সরকার নিরবেই অতিক্রম করবে। এসকে সিনহার সময়কালে রায় রিভিউ করারও চিন্তা করছে না সরকার। সরকারে খবর আছে, আপিল বিভাগের সব বিচারপতিই এ রায়ের পক্ষে। রিভিউ করলেও সেটা খারিজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তাই রায়ের পর্যবেক্ষণে দেয়া কয়েকটি শব্দ এক্সপাঞ্জ করার চেষ্টা করতে পারে সরকার।
আওয়ামী লীগের একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অবসরে যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের অ্যাকশনে যাবে সরকার। প্রধান বিচারপতির আয়-ব্যয়সহ বিভিন্ন ধরণের দুর্নীতির মামলা দিয়ে তাকে জেলে ঢুকাবে।
জানা গেছে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাও নিজের ভবিষ্যত নিয়ে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। সরকার এখন কী করছে এবং তার অবসরের পর কী করতে পারে সব তথ্যই তার কাছে আসছে। এ রায়ের পর বাঘের পিঠে চেপে বসেছেন বলেই মনে করছেন প্রধান বিচারপতি। এখান থেকে যে আর সহজে নামতে পারবেন না সেটাও বুঝতে পারছেন তিনি। এখন প্রধান বিচারপতি মনে করছেন বেঁচে থাকার জন্য এখন তার সামনে রাস্তা একটাই। সেটা হল বিষধর সাপকে মেরেই তাকে নামতে হবে।
জানা গেছে, ৫ মাস মেয়াদের সময় প্রধান বিচারপতি তার ক্ষমতার সবটুকুই কাজে লাগানোর চিন্তা করছেন। আপিল বিভাগের আরও কয়েকজন বিচারপতি আছেন যারা বিভিন্ন কারণে বর্তমান সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। প্রধান বিচারপতি তাদেরকে নিয়ে একটি বেঞ্চ গঠন করে বর্তমান সংসদের বিনাভোটে নির্বাচিত ১৫৪ জন এমপি অবৈধ ঘোষণা করে দিতে পারেন। সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক ৩০০ এমপির মধ্যে ১৫৪ এমপি অবৈধ হয়ে গেলে এই সংসদ ভেঙ্গে দেয়া ছাড়া রাষ্ট্রপতির সামনে আর কোনো পথ থাকবে না। তখন প্রধানমন্ত্রীও সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার অনুমতি দিতে বাধ্য হবেন।
এসব ঘটনাগুলো আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই ঘটে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, সংসদ ভেঙ্গে গেলে নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাও আবার ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যেহেতু দুইটি নির্বাচন হতে পারে বলে বিচারপতি খায়রুল হক মত দিয়েছিলেন।
Discussion about this post