অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কথিত অভিযোগে ২০১০ সালের ২১ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট ভুঁইপোঁড় সংগঠন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল হক চাঁদপুরী।
মামলায় আসামি করা হয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৎকালিন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদী, ঢাকা মহানগর আমীর রফিকুল ইসলাম খান ও শিবির নেতা আবু সালেহ মুহাম্মদ ইয়াহিয়াকে।
কথিত এই মামলায় ঐ বছরের ২৯ জুন প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মাওলানা নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই গ্রেপ্তারের পর তারা কেউই আর কারাগার থেকে বের হতে পারেননি। এরপর তাদেরকে যুদ্ধাপরাধের মামলা দেয়া হয় এবং বিতর্কিত বিচারের মাধ্যমে নিজামী ও মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয় আর সাঈদীকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
পরবর্তিতে সবাই বুঝতে পারে যে, আওয়ামী লীগ সরকারই তাদের মদদপুষ্ট সংগঠন তরিকত ফেডারেশনকে দিয়ে সেদিন জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মামলাটি করিয়েছিলো। যা ছিলো মূলত যুদ্ধাপরাধের কথিত বিচার শুরুর প্রথম স্টেপ।
এরপর কয়েক বছর আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিলো তরিকত ফেডারেশন নামের ভুঁইফোঁড় সংগঠনটি। এ কয় বছর তাদের কোনো কর্মকাণ্ডই চোখে পড়েনি। হঠাৎ করেই আবার তাদের দেখা মেলে এ বছরের প্রথম দিকে নতুন নির্বাচন গঠন নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করার পর। এবারও আওয়ামী লীগ সরকার তাদেরকে দিয়ে বড় মাপের একটি কাজ করিয়ে নেয়। জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনিত নতুন নির্বাচন কমিশনের ৫ সদস্যের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাসহ ৩ জনকেই বাছাই করা হয়েছে তরিকত ফেডারেশনের দেয়া নাম থেকে।
এভাবেই সময়ে সময়ে নিজেদের জরুরি প্রয়োজনে তরিকতকে কাজে লাগিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল সম্পর্কিত রায় ও এর পর্যবেক্ষণ নিয়ে যখন সরকার ও বিচারবিভাগের মধ্যে ব্যপক টানাপোড়েন চলছে এবং এই রায় নিয়ে সরকার যখন ব্যপক অস্বস্তিতে পড়েছে, ঠিক তখনই আবার সেই পুরনো ভরসা তরিকত ফেডারেশনকে মাঠে নামিয়েছে আওয়ামী লীগ।
লড়াইটা বিচার বিভাগের মত সেন্সেটিভ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হওয়ায় আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে সরাসরি ব্যপক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারছেনা বিধায় বি টিমগুলোকে কাজে লাগচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা বিতর্কিত সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককেও মাঠে নামিয়েছে আওয়ামী লীগ। যাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পুরস্কার হিসেবে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বানিয়েছিলো আওয়ামী লীগ। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষায়ই আক্রমন করে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তাতেও ভরসা না পেয়ে একইসঙ্গে মাঠে নামানো হলো তরিকত ফেডারেশনকে।
ইতোমধ্যেই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তরিকত ফেডারেশন। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণের প্রতিক্রিয়া ও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেয় তারা। এতে এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের মহাসচিব এম এ আউয়াল এমপি।
সংবাদ সম্মেলনে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি বলেন, প্রধান বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন। তাকে পদত্যাগ করতে হবে। তবে এর আগে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় আইনগত সুযোগ থাকলে আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা করব।
তিনি বলেন, আজ হোক বা কাল হোক, আমার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। নজিবুল বশর আরো বলেন, প্রধান বিচারপতি আত্মস্বীকৃত শান্তি কমিটির সদস্য। তিনি নিজের মুখেই বলেছেন, ‘শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন।’ তিনি ১/১১ -এর সময় মঈন-ফখরুদ্দিনের দোসর ছিলেন এবং সিঙ্গাপুরে সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে শপথ ভঙ্গ করেছেন।’
তরিকত ফেডারেশনকে দিয়ে হয়তো আওয়ামী লীগ প্রধান বিচারপতি তথা বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অবস্থায় যেতে চাচ্ছে বা চূড়ান্ত সমাধানে যেতে চাচ্ছে। চাপ প্রয়োগে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগের জন্য বাধ্য করতে চাচ্ছে। কিন্তু প্রধান বিচারপতিও আজ সরকারকে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক সেদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়ার ব্যপারটি মনে করিয়ে দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনিও হয়তো জানান দিলেন আমার পদত্যাগ কোনো ছেলে খেলার ব্যপার নয়। এখন আওয়ামী লীগ তরিকতকে দিয়ে কতটুকু কী করতে পারবে কিংবা আদৌ কিছু করতে পারবে কিনা, সেটা ভবিষ্যতের জন্যই রেখে দিতে হবে।
Discussion about this post