অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়কে কেন্দ্র করে সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে সৃষ্ট সংকট ক্রমেই ঘনিভূত হচ্ছে। প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে সরকারের মন্ত্রীদের হুমকি-ধামকি দেখে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ আবারো বিচারপতিদের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করার দিকেই এগুচ্ছে।
২০০০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের হত্যা মামলায় একজন বিচারপতি দ্বিধাবিভক্ত রায় দেয়ায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের নেতৃত্বে বিচারপতিদের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করেছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এমনকি আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা রায়দানকারী বিচারপতির দরজায় হামলা ভাঙচুরও চালিয়েছিল। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়েও তারা সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে বলেই মনে করছেন সচেতন মানুষ।
বাতিল হওয়া ষোড়শ সংশোধনীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর প্রথম কয়েকদিন আওয়ামী লীগ নেতারা চুপচাপ ছিলেন। প্রথম মুখ খুললেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তিনি বললেন, আদালত যতবার ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করবে, আমরা ততবার সংসদে তা পাস করবো। তার এ বক্তব্য নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনা উঠার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বললেন এটা অর্থমন্ত্রীর ব্যক্তিগত মতামত।
এরপর মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী রায়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার নির্দেশ দেয়ার পরই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ নেতারা। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে অনবরত হুমকি-ধামকি দিয়ে যাচ্ছেন সরকারের মন্ত্রীরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম প্রধান বিচারপতির প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, বিচারপতিদের হাত এত লম্বা হয়নি যে সংসদকে ছুতে পারবে। এরপর বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিচারপতিদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যারা সংসদকে অপরিপক্ক বলে তারাই অপরিপক্ক। এছাড়া বুধবার গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও প্রধান বিচারপতিকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছেন।
এদিকে, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আজ সরকারের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, রায়ে দ্বিমত থাকলেও আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রাজনৈতিকভাবে নয়, আইনি কাঠামোর মাধ্যমেই আমরা এ রায়ের মোকাবেলা করবো। ষোড়শ সংশোধনী ও সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিলের রায় প্রধান বিচারপতির বিদ্বেষপ্রসূত বলেও মন্তব্য করেন আইনমন্ত্রী।
রাজনৈতিকভাবে রায়ের মোকাবেলা করা হবে না আইনমন্ত্রী এমন বক্তব্য দিলেও দেখা গেছে ঘটনা ঘটছে সম্পূর্ণ বিপরীত। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম একটি অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যে হুঙ্কার ছেড়েছেন তা খুবই ভয়ঙ্কর বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চলতি মাসের মধ্যে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ না করলে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল।
কামরুলের এ বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা পাশাপাশি জনমনে বেশ কিছু প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা এখন কী করবেন? সরকার যদি রায় রিভিউ করার কিংবা কিছু শব্দ এক্সপাঞ্জ করার আবেদন করে তাহলে সেই আবেদন কি তিনি গ্রহণ করবেন? জনগণ প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আছে। তিনি কি এই কঠিন সময়ে অনঢ় থাকতে পারবেন? থাকতে পারলে হয়তো ইতিহাসে তার নাম অন্যভাবে লিখা থাকবে।
Discussion about this post