অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সিলেটে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় শিবিরকে দায়ী করে কঠিন জবাব দেয়া হবে বলে পৃথকভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারি। শিবিরের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততাকে নাকচ করা হয়েছে। অন্যদিকে ছাত্রলীগ নেতৃদ্বয়ের হুমকীর পরপরই গতকাল রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন সাধারণ ছাত্রকে শিবির সন্দেহে রাতভর নির্যাতন ও পায়ে গুলি করে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে ছাত্রলীগ।
এদিকে সিলেটের ঘটনায় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শিবিরকে দায়ি করা হলেও জানা গেছে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কোন্দল ও পুরনো দ্বন্দ্বের জেরেই এই হামলা ও আহতের ঘটনা ঘটেছে।
সিলেটের ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার বেলা ১টার দিকে। পত্রিকার ভাষ্যমতে, নগরীর সোবহানীঘাটস্থ জালালাবাদ কলেজের সামনে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহত দুইজনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন- মদন মোহন কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী শাহীন আহমদ (২২) ও জালালাবাদ কলেজের ছাত্র, ছাত্রলীগকর্মী আবুল কালাম আসিফ (১৮)। আহত ছাত্রলীগ কর্মীরা সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাহাত তরফদার গ্রুপের কর্মী বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, হামলাকারীরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে শাহীন ও আসিফদের উপর হামলা চালায়।
পূর্বের বিভিন্ন ঘটনা, ঘটনার দিনের ভাংচুরের ঘটনা থেকে অনেকটাই স্পষ্ট যে, এই হামলা ও কোপানোর ঘটনা সিলেট মহানগরী ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাহাত তরফদারের সমর্থক দুটি উপগ্রুপের দ্বন্দ্বের জেরেই ঘটেছে।
পুরোনো হামলা ও কোপানোর জের
গত জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখ সিলেট নগরীর সোবহানীঘাট এলাকার জালালাবাদ কলেজ সংলগ্ন একই জায়গায় ঐ ছাত্রলীগের সিলেট মহানগর সাবেক সভাপতি রাহাত তরফদারের দুই গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে মোটরসাইকেল পার্কিংকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং সাবেক শিক্ষার্থী শাকিলের উপ গ্রুপের ১০-১২ জন কর্মী অন্য উপ গ্রুপের কর্মী সাঈদকে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। পরে মারাত্মক আহত সাঈদকে ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। (তথ্যসূত্র: https://goo.gl/Z5XipX , https://goo.gl/Drf1ji )
সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব
বিগত কয়েকদিন ধরে ওই এলাকার কিছু কলেজ ছাত্রের মধ্যে সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং তরফদার গ্রুপের লোক। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে কয়েকদিন আগেও দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ৭ আগস্ট সোমবারের ঘটনার দুইদিন আগে ৫ আগস্ট শনিবার রাত ১০টায় নিজ বাসার সামনে সন্ত্রাসী হামলায় আহত হন মহানগর ছাত্রলীগ কর্মী নাবিল আহমদ। স্থানীয় পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, দুটি সিএনজি অটোরিকশা করে একদল মুখোশধারী সন্ত্রাসী তাঁর উপর দেশিয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। সন্ত্রাসীরা এসময় তাঁর পায়ে চাকু দিয়ে ছুরিকাঘাত করে মাটিতে ফেলে ওই দুটি সিএনজি অটোরিকশায় করে পালিয়ে যায়। (তথ্যসূত্র: https://goo.gl/tK3NK8)
৫ আগস্টের ঘটনার বদলা হিসেবেই ৭ আগস্টের হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারন দুটি হামলার সাথে ব্যপক মিল পাওয়া যায়। দুটি ঘটনাতেই আহত ছাত্রলীগ কর্মীদের পায়ে কোপানো হয়, পাশাপাশি হাতেও কোপানো হয় সোমবারের ঘটনায়।
পুলিশকে ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেয়ায় হাসপাতালে ছাত্রলীগের হামলা
এদিকে সোমবারের হামলায় দুই ছাত্রলীগ কর্মী আহতের ঘটনার পর ঘটনাস্থলের একটি হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পুলিশকে দেয়ায় সেই হাসপাতাল ভাংচুর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়- রাত সাড়ে ৮টার দিকে একদল যুবক লাঠি-সোটা নিয়ে সোবহানীঘাট এলাকায় জালালাবাদ কলেজ এবং সিলেট মা ও শিশু হাসপাতালে ভাংচুর চালায়। হাসপাতালে স্থাপিত সবকটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা তারা ভেঙে ফেলে। এসময় তারা হাসপাতালের সামনে থাকা একটি এম্বুলেন্স (ঢাকা মেট্রো ঠ ১১-৮৩৪৮), একটি সিএনজি অটোরিকশা (সিলেট থ ১১-৩০৫১) এবং কলেজের ভেতরে আসবাপত্র ভাংচুর করে। ভাংচুরকারীরা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
পুলিশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইলিয়াছ। তিনি বলেন, আমরাতো পুলিশকে ফুটেজ না দিয়ে পারবোনা। তাদেরকে সাহায্য করেছি মাত্র। এর কারনেই আমাদের উপর হামলা হয়েছে। (তথ্যসূত্র: https://goo.gl/7zDsgY)
পুরনো গ্রুপভিত্তিক দ্বন্দ্ব, জুনিয়র-সিনিয়র দ্বন্দ্ব, দু’দিন আগে ছাত্রলীগ নেতা নাবিলকে পায়ে কুপিয়ে আহত ও পুলিশকে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেয়ায় হাসপাতালে হামলা, ইত্যাদি ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, সোমবারের দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনা তাদের দলীয় কোন্দলেই সংগঠিত হয়েছে। তবে সর্বশেষ ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেয়ায় হাসপাতাল ভাংচুর ও শিবিরকে দায়ী করায় এই ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
Discussion about this post