অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
চাঞ্চল্যকর বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় প্রকাশিত হয়েছে গতকাল রোববার। এই রায়ে বিচারিক আদালতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৮ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মধ্যে মাত্র ২ জনের ফাঁসি বহাল রেখে বাকি ৬ জনকে ফাঁসির দণ্ড থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ৪ ছাত্রলীগ কর্মীকে খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট।
প্রকাশ্য দিবালোকে টিভিতে লাইভ সম্প্রচারকৃত এই হত্যাকণ্ডে ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মীকে অংশ নিতে দেখা গেলেও মাত্র দুইজনের ফাঁসি বহাল রেখে বাকিদের খালাশ কিংবা দণ্ড শিথিল করায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। বিচারে হতাশা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করে বিশ্বজিতের বাবা বলেছেন, প্রকাশ্যে দিবালোকে আমার ছেলেকে হত্যা করা হল। এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আমরা উচ্চ আদালতের এই রায়ে আশাহত। বিচার পাওয়া নিয়েও শঙ্কায় আছি।
এদিকে এই হত্যাকাণ্ডের রায় দেয়া দুই বিচারকের মধ্যে একজনকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে। রায় প্রদানকারী দুই বিচারপতি হলেন বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর। এরমধ্যে বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস নিজেই রাজশাহীতে একটি খুনের মামলার প্রধান আসামী।
জানা যায়, ১৯৮৮ সালের ১৭ নভেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল লতিফ হলের ছাত্রশিবির কর্মী আসলামকে তার কক্ষে হত্যা করা হয়েছিল। পরদিন রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় ৩০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় প্রধান আসামী ছিলেন তৎকালীন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস বাবু। মামলার এজাহারে বলা হয়, রুহুল কুদ্দুস বাবু কিরিচ দিয়ে আসলামকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
আসলাম হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহ আলমের নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও মামলায় পুলিশি তদন্তের পরই প্রধান আসামী রুহুল কুদ্দুস বাবুসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জ গঠনের ওপর শুনানি শেষে আদালত রুহুল কুদ্দুসসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে।
মামলাটি নিম্ন আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ২০১০ সালের ৮ এপ্রিল মহাজোট সরকার এই মামলা থেকে রুহুল কুদ্দুস বাবুসহ ৯ জনের নাম প্রত্যাহার করে নেয়। এর তিনদিন পরে (১১ এপ্রিল ২০১০) রুহুল কুদ্দুস বাবুসহ ১৭ জনকে হাই কোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়।
রুহুল কুদ্দুস বাবুর নিয়োগ নিয়ে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রতিবাদের মুখে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম শুরুতে বাবুকে শপথ পাঠ করাননি।
বিচারপতি ফজলুল করিমের পর প্রধান বিচারপতি হন বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, যিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকই ৪ নভেম্বর ২০১০ তারিখে এই বিচারপতি রুহুল কুদ্দুসকে হাই কোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ পড়ান।
এদিকে ক্ষমতাসীন সরকারের ছত্রছায়ায় খুনের মামলা থেকে নিজের নামকে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করতে পারার প্রতিদান স্বরুপ বিতর্কিত বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস বিশ্বজিৎ হত্যা মামলা থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের রেহাই কিংবা সাজা শিথিল করেছেন বলে মনে করছেন অনেকে।
Discussion about this post