অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের সুন্দরবনের পাশে নির্মাণাধীন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে ইউনেস্কো। সরকার যখন মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুরো জাতিকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই ইউনেস্কো এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে মানুষের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিয়েছে। ইউনেস্কো তাদের ৪১তম অধিবেশনের সিদ্ধান্তে বলেছে সুন্দরবনের পাশে বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে তাদের আপত্তি বহাল আছে।
ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার(আইইউসিএন) এর রিঅ্যাকটিভ মনিটরিং মিশন ২০১৬ সালে সুন্দরবন এলাকা ঘুরে যাওয়ার পর তাদের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ করেছিল, তার বাস্তবায়ন এবং এসইএসহ অন্যান্য সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানিয়ে ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিবেদন দিতে বলেছিল হেরিটেজ কমিটি। ২০১৯ সালে হেরিটেজ কমিটির ৪৩তম অধিবেশনে এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
আর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১ তম সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী দেশে এসে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ইউনেসকো আগে প্রকল্প বন্ধ করতে বলেছিল। সুন্দরবন এলাকায় রামপালসহ সব অবকাঠামো উন্নয়ন বন্ধ রাখতে বলেছিল। এখন রামপালের বিষয়ে সেই কথা তারা তুলে নিয়েছে।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও বলেছেন, ‘ওদের এজেন্ডায় যে নিষেধাজ্ঞাটা ছিল সেটা এখন আর নেই। আমরা কাজ করতে পারব। অফকোর্স দেয়ার আর সাম কনসার্ন; একটা এনভায়রনমেন্টাল এসেসমেন্ট রিপোর্ট দিতে হবে আমাদের। দ্যাটস অল।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতেও বলা হয়, দীর্ঘ আলোচনার পর হেরিটেজ কমিটি যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে সুন্দরবনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব এড়িয়ে বাংলাদেশ সরকার পরিকল্পিত স্থান রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে ‘অনুমোদন করেছে’। পাশাপাশি হেরিটেজ কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী দেশের সুন্দরবনসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) চালাতে রাজি হয়েছে।
কিন্তু, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১ তম সভার সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর দেখা গেছে বাংলাদেশ সরকার যে দাবি করেছে তা ভিত্তিহীন। ইউনেসকো স্পষ্ট করে বলেছে, সুন্দরবন এলাকার কৌশলগত পরিবেশ মূল্যায়নের (এসইএ) আগে সেখানে যাতে বড় কোনো শিল্প বা অবকাঠামো নির্মাণ করা না হয় তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। এসইএ শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি পর্যালোচনার জন্য হেরিটেজ সেন্টারে পাঠাতেও অনুরোধ করা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।
পোল্যান্ডের ক্রাকাও শহরে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪১তম সভায় সুন্দরবন বিষয়ে শুনানির পর ওই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভার সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ইউনেসকোর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় রোববার।
সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ থেকে ৬৭ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে পরিবেশের ওপর যে প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে ইউনেসকোর উদ্বেগ এবারের প্রতিবেদনেও স্পষ্ট।
সরকারের ওই দাবি নিয়ে সে সময়ই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রবিরোধী আন্দোলনকারীদের সংগঠন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
ইউনেস্কোর এই সিদ্ধান্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এনিয়ে সারাদেশে আবার সমালোচনার ঝড় উঠেছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সরকার দেশবাসীর সঙ্গে ভয়ঙ্কর প্রতারণা করছে বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করছেন। অনেকে আবার এটাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেই ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারির সঙ্গেও তুলনা করছেন।
Discussion about this post