বন্যায় দেশের ১৩ জেলার ৪৫টি উপজেলায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কুশিয়ারা, ধরলা, ঘাঘটসহ ৮ নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে।
সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধাসহ বন্যার্ত ৯ জেলায় খাবার, সুপেয় পানি ও ওষুধের জন্য হাহাকার চলছে।
এর মধ্যে কয়েকটি জেলায় ৩ থেকে ৫ দিনেও কেউ সরকারি ত্রাণের দেখা পাননি। যেখানে পৌঁছেছে, সেখানেও চাহিদার তুলনায় পরিমাণ অপ্রতুল। সামান্য পরিমাণে ত্রাণের চাল পেলেও তা চারদিক পানিতে ডুবে যাওয়ায় রান্না করার মতো শুকনো স্থান নেই। ফলে অনেকেরই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে।
ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির দুর্গত মানুষ ত্রাণের নৌকা দেখলেই পানি ভেঙে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু পরিমাণ অল্প হওয়ায় সবার হাতে পৌঁছায় না খাদ্যসামগ্রী। ফলে অনেকেই ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসছেন শূন্য হাতে।
এ অবস্থায় সরকারি ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ত্রাণের জন্য ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা স্বজনপ্রীতি করছেন বলে অভিযোগ করছেন অনেকেই।
পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় বিপুলসংখ্যক গৃহহীন মানুষ বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন উঁচু জায়গায় খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। সঙ্গে আনা গবাদি পশুর সঙ্গে রাত যাপন করছেন। পশুপাখির সঙ্গে ভাগ করে খাচ্ছেন ত্রাণসামগ্রী ও পানি। সব মিলে বানভাসি মানুষ ভালো নেই।
তারা জানেন না কবে নাগাদ আগের জীবনে ফিরবে। তাদের কাছে আশ্রয় কেন্দ্রের দিনগুলো যেমন, তেমনই রাতও পাথরের মতো ভারি মনে হচ্ছে। একটি রাত যেন কয়েক দিনের মতো লম্বা সময় নিয়ে পার হচ্ছে।
এদিকে বন্যায় দুই জেলায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রামে পানিতে ডুবে এক কিশোরসহ দুইজন মারা যায়। বানের পানিতে ভেসে আসে অজ্ঞাত পরিচয় এক নারীর লাশ। এ ছাড়া জামালপুরে সাপের কামড়ে মারা গেছেন এক যুবক। পাঁচ জেলায় ৩৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। জামালপুরে বানভাসি মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ডাকাত আতঙ্ক।
সরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখ। ৩ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের জন্য ৪ হাজার টন চাল, এক কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ৯টি আইটেম সমৃদ্ধ শুকনো খাবারের সাড়ে ১৮ হাজার প্যাকেটও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকারি বরাদ্দের সঙ্গে বিতরণের কোনো মিল নেই। যে কারণে দুর্গত মানুষ চাহিদা অনুযায়ী ত্রাণ পাচ্ছেন না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই জানান, চাহিদা অনুযায়ী তারা ত্রাণ পাচ্ছেন না। ফলে দুর্গত মানুষকে তারা তেমন কিছু দিতে পারছেন না। আশ্রয় কেন্দ্র, বাঁধ বা স্থানীয় স্কুলে আশ্রয় নেয়া মানুষ খেয়ে-না খেয়ে দিন পার করছেন।
তবে ত্রাণের কোনো ঘাটতি নেই বলে দাবি করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ রয়েছে। ত্রাণ না পেয়ে বন্যার্তরা ফিরে যাচ্ছেন- এমন অভিযোগ নাকচ করে ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি সত্য নয়। পত্রপত্রিকায় যা প্রকাশিত হচ্ছে, তা সঠিক নয়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একটি পরিবারে বাবা ত্রাণ নিয়ে তার ছেলেকে পাঠাচ্ছেন। তালিকা অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিরা তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। কারণ একই পরিবারের সবাইকে তো ত্রাণ দেয়া যাবে না।
সরকারি এ বরাদ্দের পুরোটা এখনও বিতরণ করা হয়নি। সিলেট, মৌলভীবাজার, জামালপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট- এ ছয় জেলায় আড়াই হাজার টন চাল বরাদ্দ করা হলেও বুধবার পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ২ হাজার ৯০ টন। ছয় জেলার নগদ অর্থের ৬৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার সবই বিতরণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।
যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সিরাজগঞ্জ ও শাহজাদপুর : সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর, চৌহালী, বেলকুচি ও শাহজাদপুরের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলেও এখনও অনেক স্থানে তা পৌঁছেনি। শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের হাটপাচিল পূর্বপাড়া গ্রামে বন্যায় ভাঙনকবলিত ৫ শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশুর মাঝে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। বন্যাদুর্গত অনেকেই খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীমুন রাজীব ও কৈজুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ক্ষুধার্ত নারী, পুরুষ ও শিশুদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তাদের সাধ্যমতো সাহায্য করা হচ্ছে।
এদিকে কাজীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় উপজেলার ১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ২ হাজার ১০০ হেক্টর পাটক্ষেত বন্যায় তলিয়ে গেছে। বুধবার সকালে নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের ফুলজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা ভবনটি যমুনায় বিলীন হয়ে যায়। কাজীপুরের বাহুকা গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম ও ঢেকুরিয়া গ্রামের গৃহিণী চম্পা খাতুন জানান, বাড়িতে পানি ওঠায় পচা পানিতে হাত-পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। চরম কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন তারা।
জামালাপুর, বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী : বন্যায় জেলার ৬ উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও গো-খাদ্যের সংকট তীব্র। বন্যার কারণে জেলার ১৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
বন্যার্তদের অভিযোগ, তারা পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাবার জোগাতে না পেরে অনেকে কমমূল্যে তাদের গরু-ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছেন। ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের আকন্দপাড়া গ্রামের আবদুল করিম (৫০) বলেন, ‘বানের পানিতে বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় রান্না করার কোনো উপায় নেই। দু’দিন ধরে খাবার নেই।
একই ইউনিয়নের ৬৫ বছরের বৃদ্ধ আকবর আলী বলেন, ‘আমার জমাজমি সব নদীয়ে ভাইঙ্গা নিয়ে গেছেগা। গত ক’দিনের বন্যায় কাজ না পেয়ে ৫ দিন থেকে ভাত কি জিনিস দেহি না।’ পাথর্শী ইউনিয়নের, পাথর্শী পশ্চিমপাড়া গ্রামের পানা মিয়া (৫৮) বলেন, ‘আমরা এহন পর্যন্ত কোনো খাবার পাইনি। চেয়ারম্যান-মেম্বাররা কোনো ত্রাণ আমাদের দেয় না। সরকার আমাদের যা দেয়, তা সবই চেয়ারম্যান-মেম্বাররা খাইয়া ফেলে।’
মেলান্দহ উপজেলার চরমাহমুদপুর গ্রামের নারায়ণ চক্রবর্তী (৪৬) বলেন, ‘আমরা কাজ করে খাই। বন্যার কারণে আজ ৮ দিন ধরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পাচ্ছি না। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণের গন্ধও পাইনি। শুধু আমি একলা না আমাদের ইউনিয়নের কোনো মানুষ কবার পাবোনা ত্রাণ কিরহম জিনিস।’ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বরাদ্দ কম থাকায় তারা সবার মাঝে ত্রাণ পৌঁছাতে পারছেন না।
ত্রাণ স্বল্পতার অভিযোগ শুনে প্রথমেই নাকচ করে দেন জামালপুরের জেলা প্রশাসক আহমেদ কবীর। তিনি কোথায় ত্রাণ নেই, সুনির্দিষ্ট করে জানতে চান। তিনি বলেন, ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলায় ৪০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।
সিলেট : সিলেটে বানভাসি মানুষ পাচ্ছে না পর্যাপ্ত সরকারি ত্রাণ। অভিযোগ উঠেছে, নিজেদের পছন্দ মতো তালিকা করছেন সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নাম উঠছে না অন্য দলের সমর্থকদের। অনেক এলাকায় এখনও পৌঁছায়নি সরকারি ত্রাণ। তালিকায় থাকা সত্ত্বেও প্রথম দফা বন্যায় সরকারের বিশেষ বরাদ্দ ভিজিএফের চাল পাচ্ছেন না অনেকে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস থাকলেও অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
বুধবার দুপুরে সুড়িকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেসরকারিভাবে ত্রাণ দেয়ার সময় হুমড়ি খেয়ে পড়েন এ গ্রামের মানুষ। ত্রাণ নিতে আসা নাজিম উদ্দিন জানান, তার ঘরে পানি। খেয়ে-না খেয়ে আছেন, কিন্তু সরকারি কোনো ত্রাণ পাচ্ছেন না। তিনি জানান, সরকারি ত্রাণের তালিকা করছেন সরকারি দলের একজন। তাকে অনুরোধ করলে তিনি বলেন, ধানের শীষে যারা ভোট দেয় তারা ত্রাণ পাবে না। এ নিয়ে গ্রামের পঞ্চায়েতে বিচার দিয়েও লাভ হয়নি।
এদিকে বন্যার শুরুতে উপজেলা পরিষদে ৪৬০ জনকে ভিজিএফের ৩০ কেজি চাল ও ৫০০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও ৩৫ জন পাননি ৩০ কেজি চাল। এ নিয়ে কারও কাছে অভিযোগ করলে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। ১০ জুলাই আবারও সেই ভিজিএফের চাল নিতে আসেন ৪৬০ জন। সে সময়ই যুগান্তরকে এমন অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন।
মৌলভীবাজার ও বড়লেখা : মৌলভীবাজারে ৩ দফা বন্যায় বোরো ধান ও ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় ৩ লাখ ১০ হাজার ৮০ জন লোক মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। বুধবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলায় সরকারিভাবে নগদ ৪১ লাখ টাকা ও ৯২৫ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অভিযোগ, ত্রাণসামগ্রী চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল এবং জেলার কোনো কোনো এলাকায় জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিতরণে অনিয়ম করছেন। বিগত নির্বাচনে যারা তাদেরকে ভোট দিয়েছেন কেবল তাদেরকেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করছেন। এ বিষয়ে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আশরাফ আলী বলেন, বিতরণে অনিয়মের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে বড়লেখায় জলাবদ্ধতার কারণে ৬১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম, ভুরুঙ্গামারী, ফুলবাড়ী, চিলমারী, রৌমারী ও নাগেশ্বরী : নাগেশ্বরীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে দুধকুমোর, ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাধর, শংকোষ ও ফুলকুমোরের। ৬টি বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। চিলমারীতে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি। এ ছাড়া চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপজেলার ৩০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। রৌমারীতে লক্ষাধিক পানিবন্দি মানুষের মাঝে খাবারের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। রৌমারী ও রাজিবপুরে ৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। নদীভাঙনে বাস্তুহারা হয়েছে ৭০টি পরিবার।
ত্রাণের অপ্রতুলতার বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বঙ্গবাসী যুগান্তরকে বলেন, এই উপজেলায় ৮/৯ হাজার মানুষ পানিবন্দি। অথচ চাল পাওয়া গেছে ৩০ টন এবং নগদ অর্থ পাওয়া গেছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা। চাহিদার তুলনায় একদম কম। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সীমা নেই।
একই কথা বললেন উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল গনি। তিনি বলেন, তার ইউনিয়নে মাত্র ২ টন চাল দেয়া হয়েছে কোনো নগদ অর্থ মেলেনি। অথচ শত শত মানুষ ত্রাণের জন্য আহাজারি করছে। তাদের জন্য শুকনা খাবার দরকার। কিন্তু তা মিলছে না। সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, তার ইউনিয়নে ৬ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মাত্র ৮ মে. টন চাল পাওয়া গেছে, যা দিয়ে ৮০০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। চাল বিতরণকালে বুধবার সরেজমিন সেখানে গেলে শিতাইঝাড় গ্রামের মঞ্জু ও নূরজাহান জানান, গলা পানি ভেঙে পরিষদে এসে স্লিপ না পাওয়ায় ত্রাণ পাননি তারা।
জনপ্রতিনিধিদের এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান যুগান্তরকে বলেন, ত্রাণের কোনো অভাব নেই। এ পর্যন্ত বন্যার্তদের মাঝে সাড়ে ৩০০ টন চাল এবং ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা নগদ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ২০০০ শুকনা খাবারও বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরও বরাদ্দ দেয়া হবে।
গাইবান্ধা : সব নদ-নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৪ উপজেলার লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ বানভাসির কাছে এখনও ত্রাণ পৌঁছায়নি। ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের কাবিলপুর সাদেক আলীর বাজারে বুধবার ত্রাণ বিতরণ করেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার কাজী হাসান আহমেদ ও জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন বলেন, অনেকেই ত্রাণসামগ্রী না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, তার ইউনিয়নে ১ হাজার ৩৬৫ পরিবার পানিবন্দি। তারা চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। ২ মে. টন চাল দিয়ে সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব হয়নি। ওই ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ কাজে নিয়োজিত ট্যাগ অফিসার উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, অধিকাংশ বাড়িতে পানি ওঠায় রান্না করার পরিস্থিতি নেই। তাদের জন্য শুকনো খাবারের দরকার।
লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে নদীর পানি কমলেও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষাধিক মানুষের জন্য সরকারিভাবে ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হলেও গত তিন দিনেও অনেকেই ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধন এলাকার বৃদ্ধ আসাকাল আলী এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আজ তিন দিন ধরে বাড়িতে পানিবন্দি হয়ে পড়ে আছি। কেউ আমাদের এক মুঠো চাল পর্যন্ত দেয়নি। এলাকার মেম্বার-চেয়ারম্যানরা দেখতে এলেও কিছুই দেয়নি।’ দক্ষিণ বালাপাড়া গ্রামের গৃহিণী চুমকি বেগম বলেন, ত্রাণ না পেয়ে ২ ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।
এ ব্যাপারে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা ইতিমধ্যে দুইশ’ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করেছি। আর ৪-৫ হাজার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১০ মে. টন ত্রাণের চাল বিতরণে কাজ চলছে।
বগুড়া : বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বন্যার্তদের দুর্ভোগ দেখা যায়। অন্তত হাজার পরিবার বিভিন্ন বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। কুতুবপুরের রওশন বেগম এক সপ্তাহ আগে ৯ সদস্যের পরিবার ও গবাদিপশু নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। পাটখড়ি দিয়ে তৈরি ঘরে পশুর সঙ্গে গাদাগাদি করে থাকছেন। তারা একবার মাত্র ২০ কেজি চাল পেয়েছেন। তারা নিজেদের চেয়ে সবদিকে পানি থাকায় গবাদিপশুর খাবার নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
কাউনিয়া (রংপুর) : কাউনিয়া উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে প্রায় দেড় হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দুর্গত এলাকায় এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপঙ্কর রায় বলেন, বন্যাকবলিত এলাকার জন্য ৩০ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
সূত্র: যুগান্তর
Discussion about this post