অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ঢাকা থেকে গুম হওয়া নিখোঁজ ২৫ জন নেতাকর্মীর নাম প্রকাশ করেছে বিএনপি। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার বিকালে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গুম হওয়াদের তালিকা চাওয়ার প্রেক্ষিতে বিএনপি এই ২৫জন নেতাকর্মীর তালিকা প্রকাশ করলো।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ২০১৩ সাল থেকে শত শত মানুষকে অবৈধভাবে আটক করেছে এবং গোপন স্থানে আটকে রেখেছে। তাদের প্রতিবেদনটিতে অন্তত ৯০ জনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই গুম করা হয়েছে। তাদের তথ্যমতে এদের মধ্যে ২১ জনকে পরে হত্যা করা হয়েছে এবং নয়জনের পরে কোনো খোঁজই পাওয়া যায় নি।
আন্তর্জাতিক সংস্থাটি এই রিপোর্ট প্রকাশের সাথে সাথে অবিলম্বে এই প্রবণতা বন্ধ করে এসব অভিযোগের তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। তারা এমন সময় এই রিপোর্ট প্রকাশ করে যার মাত্র দুইদিন আগেই বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি ও গবেষক ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়।
ফরহাদ মজহার অপহরণ ও হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদন সম্পর্কে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছিলেন, ‘দেশব্যাপী একের পর এক এই ধরনের গুম-অপহরণ ও বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
রিজভীর বক্তব্যের জবাবে গত ৭ জুলাই ময়মনসিংহের এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির কতো নেতা-কর্মী ‘গুম’ বা খুন হয়েছে তা আমরা জানতে চাই।’ তারই প্রেক্ষিতে আজ এ তালিকা দেয়া হলো। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০১-২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের কতোজন নেতাকর্মী ‘গুম-খুন’ হয়েছিলো বিএনপিকে তারও তালিকা দিতে বলেন ওবায়দুল কাদের।
গুমের তালিকা প্রকাশের সময় রিজভী বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কেবল ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্থান ও আশপাশের জেলা থেকে ‘অন্তত ৫০ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যায়’। এদের বেশিরভাগই বিএনপি বা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যাদের কেউই আজ অব্দি ফিরে আসেনি। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৩ সাল থেকে গত মার্চ পর্যন্ত মোট ৪৩৫ জন ব্যক্তি ‘গুম’ হয়েছেন বলে দাবি করেন রিজভী আহমেদ।
বিএনপি প্রকাশিত গুম তালিকায় যাদের নাম রয়েছে- তাদের মধ্যে সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী, সাবেক সাংসদ সাইফুল ইসলাম হীরু, দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য চৌধুরী আলম, বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির পারভেজ, তেজগাঁও থানা ছাত্রদল সভাপতি আমিনুল ইসলাম জাকির, তেজগাঁও বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন, তার খালাতো ভাই জাহিদুল করিম (তানভীর), পূর্ব নাগালপাড়ার আবদুল কাদের ভুঁইয়া (মাসুম), পশ্চিম নাখালপাড়ার মাজহারুল ইসলাম (রাসেল), মুগদাপাড়ার আসাদুজ্জামান (রানা), উত্তর বাড্ডার আল আমিন, বিমানবন্দর থানা ছাত্রদল নেতা এ এম আদনান চৌধুরী ও কাওসার আহমেদ, সবুজবাগ থানা ছাত্রদলের সভাপতি মাহাবুব হাসান, খালিদ হাসান (সোহেল) ও সম্রাট মোল্লা, জহিরুল ইসলাম (হাবিবুল বাশার জহির), পারভেজ হোসেন, মো. সোহেল ও মো. সোহেল চঞ্চল, নিজামউদ্দিন মুন্না, তরিকুল ইসলাম ঝন্টু, কাজী ফরহাদ, সেলিম রেজা পিন্টু ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন কুসুমের নাম রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিব উন নবী খান সোহেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post