প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারের আমলে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দুর্নীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে, কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ রোববার সকালে সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ কথা বলেন। বর্তমান মেয়াদে দায়িত্ব পালনকালে এটি ছিল সরকারের সর্বোচ্চ আমলাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বৈঠক।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের অবস্থানকে সুস্পষ্ট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থান সুস্পষ্ট।’
নাগরিকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে চালুর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ সংশোধন করা হয়েছে। তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এবং জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইন ২০১১ প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণয়ন করা হয়েছে জাতীয় শুদ্ধাচারের কৌশলপত্র।’
প্রধানমন্ত্রী দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব প্রদানের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘ভালো কাজের পুরস্কার আর মন্দ কাজের জন্য তিরস্কারের ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিন। সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলো থেকে সেবা পেতে জনগণকে যাতে ভোগান্তির শিকার না হতে হয়, তার উদ্যোগ নিন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থবছরের শেষ দিকে তাড়াহুড়ো না করে অর্থবছরের শুরু থেকেই উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণের জন্য সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের তৃতীয় বছরে আজ বলেন, ‘বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়নের হার আরও বাড়াতে হবে। অর্থবছরের শেষ দিকে তাড়াহুড়ো না করে বছরের শুরু থেকেই বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করুন।’
একই সঙ্গে তিনি ‘ফাস্ট ট্রাক’ভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্যও তাঁদের আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে প্রকল্পের পেপার ওয়ার্ক সম্পন্ন করুন। আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের প্রয়োজন হলে তা দ্রুত করে ফেলুন। পাশাপাশি কাজের গুণগতমানের সঙ্গে কোনো আপস করা যাবে না। ফাস্ট ট্রাকভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য আরও আন্তরিক হোন।’
সচিবদের সরকারের অন্যতম চালিকাশক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি রাজনৈতিক সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্ষমতায় আসে। কিন্তু সচিবদের আরও অনেক দীর্ঘ সময় ধরে সেবা দেওয়ার সুযোগ থাকে। কাজেই এটা সচিবদের ওপরই নির্ভর করে দেশ কীভাবে চলবে।’
শেখ হাসিনা সচিবদের কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, তাঁর দলের রাজনৈতিক দর্শন এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি একটি ভালো দলের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়েছেন।
অপেক্ষাকৃত তরুণ কর্মকর্তা, যাঁদের আরও দীর্ঘদিন চাকরি করার সুযোগ রয়েছে, প্রশিক্ষণে তাদের অগ্রাধিকার প্রদানের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপেক্ষাকৃত তরুণ কর্মকর্তা যাঁরা দীর্ঘদিন চাকরি করবেন, প্রশিক্ষণে তাঁদের অগ্রাধিকার দিন।’
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আন্তক্যাডার বৈষম্য দূর করে সবার ন্যায়সংগত পদোন্নতি এবং পদায়ন নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান।
উন্নয়ন কর্মসূচি এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে, যাতে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ উপকৃত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গ্রাম উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে, কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। যাতে গ্রামের মানুষ কাজের খোঁজে শহরে না আসে। শহরের ওপর জনসংখ্যার চাপ যাতে না বাড়ে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। বৈঠকের শুরুতে আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলতে সরকারের সংস্কার কর্মসূচির উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম স্বাগত বক্তব্য দেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post