অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে বিতর্কিত ও সমালোচিত সেক্টর হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, খুন, ছিনতাই, নির্যাতন, আটক করে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়াসহ র্যাব-পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। দিন যত যাচ্ছে র্যাব ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অপরাধ কর্মকাণ্ড ততই বাড়ছে। কিছু কিছু অভিযোগ পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নজরে আসলেও অনেক ঘটনাই থেকে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলোচিত কয়েকটি ঘটনার মধ্যে রাজধানীর পল্টনে শিকড় পরিবহনে আইয়ুব নামে ব্যাংক এশিয়ার এক কর্মচারীকে মারধর, বাংলাদেশ ব্যাংকের পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে নিযাতন করে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি, এরপর ধর্ষণের অভিযোগে যাত্রাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে আদালতে মামলা, মীর হাজীরবাগে কর্তব্যরত অবস্থায় সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে আহত, গভীর রাতে কমলাপুর রেল স্টেশনে ওভারব্রিজের ওপর এক হিজড়াকে যৌন হয়রানি ও মারধর, শ্যামলীতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ব্যাগে ইয়াবা দিয়ে ফাসানোর অভিযোগ, ময়মনসিংহে এক নারী পুলিশ কনস্টেবলকে ধর্ষণ, বাড্ডা থানার ওসিসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে চাদাবাজির অভিযোগে মামলা। এছাড়া প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সাধারণ মানুষকে হয়রানি, মাদক দিয়ে ফাসানোসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে।
জানা গেছে, সাধারণ মানুষ এখন কোনো সমস্যায় পড়লেও নিরাপত্তার জন্য পুলিশের কাছে যেতে চায় না। কারণ, চোর-ডাকাত, ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের দহরম মহরম সম্পর্ক রয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। কোনো অভিযোগ নিয়ে পুলিশের কাছে গেলে উল্টো আরও হয়রানির শিকার হতে হয়। জানমালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী এখন সাধারণ জনগণের জন্য আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, শুধু ২০১৫ সালে বিভিন্ন অপরাধে ৯ হাজার ৯৫৮ পুলিশকে বিভাগীয় শাস্তি দেয়া হয়েছে। ৭৬ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে থানা এবং আদালতে মামলা হয়েছে।
আর র্যাবের বিরুদ্ধেতো আন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোই কিছু দিন পর পর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছে। র্যাবের বিরুদ্ধে গুম-খুনের অভিযোগও রয়েছে। রাজনৈতিক দলসহ দেশি ও বিদেশি মানবাধিকার সংস্থা থেকে একাধিকবার র্যাব বিলুপ্তির জন্যও দাবি করা হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিনিই কোথাও না কোথাও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পুলিশ কর্তৃক হয়রানির শিকার হচ্ছে। এরপরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দাবি করছেন পুলিশ জনগণের বন্ধু।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ১০ বছর আগে পুলিশ ছিল আতঙ্ক। আর এখন পুলিশ হলো জনগণের বন্ধু। এখন তারা জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, র্যাব-পুলিশ বন্ধু হলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বন্ধু হতে পারে। জনগণের সঙ্গে নয়, বরং পুলিশ সদস্যরা ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিরোধীদল সহ সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করলেও এদেশের জনগণ র্যাব-পুলিশকে নিজেদের বন্ধু মনে করে না। কারণ, বিরোধীদলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছে।
তাদের মতে, র্যাব-পুলিশের মধ্যে এখন পেশাদারিত্ব নেই। বর্তমানে সরকারদলীয় নেতাকর্মী আর পুলিশের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তারা একে অপরের পরিপুরক।
Discussion about this post