অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জাতীয় সংসদ হলো একটি রাষ্ট্রের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এটাকে রাষ্ট্রের প্রাণ বলা যায়। জাতীয় সংসদ হলো সবকিছুর কেন্দ্র বিন্দু। গণতন্ত্র, নাগরিকদের বাকস্বাধীনতার প্রতীক। এখান থেকেই আইন প্রণয়নসহ নাগরিকদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই সংসদে এসে নিজ নিজ এলাকার মানুষের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি, সার্বভৌমত্বের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ, নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা ও শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সংসদের বিকল্প নেই। বলা যায়, অধিবেশন চলাকালীন সংসদের প্রতিটি মিনিট সময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ বেশ কয়েক বছর যাবত যেন আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছে। আড্ডা খানায় যেমন কেউ গান গায়, কেউ গল্প বলে, কেউ কবিতা আবৃত্তি করে ও কেউ বিশিষ্ট কোনো ব্যক্তির স্মৃতিচারণ করে, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেও বর্তমানে ঠিক সেই রকম গান, গল্প, কবিতা ও স্মৃতিচারণ চলছে। বর্তমানে সংসদে জাতীয় ইস্যু তথা রাষ্ট্রের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও জাতীয় সমস্যাগুলো বরাবরই উপেক্ষিত। প্রতিদিন অধিবেশনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমপি-মন্ত্রীরা শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুণকীর্তন করতে করতেই সময় পার করে দেন। শেষ মুহূর্তে এসে স্পিকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত সময়ে জনগণের জন্য কিছু কথা বলেন।
জানা গেছে, সংসদ অধিবেশন চলাকালীন ১ মিনিটে খরচ হয় ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। এ হিসাবে অধিবেশন যদি ৩ ঘণ্টা চলে তাহলে প্রতিদিন মোট খরচ হয় ২ কোটি টাকা। অধিবেশনের সময় যদি বাড়ে তাহলে সে অনুযায়ী খরচও বাড়ে।
দেখা গেছে, বর্তমান বাজেট অধিবেশনে বাজেটের ওপর আলোচনার জন্য কাউকে ২০ মিনিট, কাউকে ২৫ মিনিট ও কাউকে ১৫ মিনিট সময় দেয়া হচ্ছে। অধিকাংশ এমপি-মন্ত্রীরাই তাদের নির্ধারিত সময়ের অর্ধেক নষ্ট করেন শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার গুণকীর্তন করে। হিসাব করলে দেখা যাবে, অধিবেশনের অর্ধেক সময় নষ্ট হয় শুধু দুই জনের প্রশংসা ও গুণকীর্তন করতে করতে। আর বাকী সময়ের অর্ধেক নষ্ট করে তারা বিরোধী দল তথা বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা ও গালাগালি করে। এ হিসাবে অধিবেশন চলাকালীন সময়ের চার ভাগের তিন ভাগ চলে যায় দুই ব্যক্তির গুণকীর্তন ও বিএনপি-জামায়াতকে গালাগালি করতে করতে। আর জাতীয় সমস্যা ও নাগরিকদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হয় সামান্য সময়।
এদিকে খরচের হিসাবে দেখা গেছে, প্রতিদিন রাষ্ট্রের ১ কোটি টাকা অপব্যয় হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার গুণকীর্তন বাবদ, বিএনপি জামায়াতের সমালোচনা বাবদ খরচ হচ্ছে ৫০ লাখ টাকা আর জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করে খরচ হচ্ছে ৫০ লাখ টাকা।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমানে সংসদ গান, গল্প, কবিতা আর গুণকীর্তণের আসরে পরিণত হয়েছে। এখানে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে গান গাওয়া হয়, গল্প করা হয়, কবিতা আবৃত্তি করা হয়। কিন্তু, নাগরিকদের মৌলিক মানবাধিকার নিয়ে কোনো কথা বলা হয় না। জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো আলোচনা হয় না। এমপি-মন্ত্রীরা শুধু তোষামোদি করতে ব্যস্ত থাকেন। তারা একবারও চিন্তা করে না যে, প্রতি মিনিটে রাষ্ট্রের লাখ টাকারও বেশি খরচ হচ্ছে।
কেউ কেউ বলছেন, দেশ ও জাতির কোনো স্বার্থে সংসদ অধিবেশন আহ্বান করা হয়নি। বিরোধী দলকে দমনের জন্য যখন নতুন আইন প্রণয়নের দরকার হয় ও লুটপাটের জন্য বড় ধরণের কোনো প্রকল্প হাতে নেয়ার দরকার হয় তখনই সরকার সংসদ অধিবেশন আহ্বান করে এগুলো করিয়ে নেয়। এই সংসদ অধিবেশন দিয়ে জনগণের কোনো উপকার হচ্ছে না। কারণ, কিছু দিন পর এমপি-মন্ত্রীদেরকে বিভিন্ন প্রকল্প বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয় শুধু লুটপাটের জন্য।
Discussion about this post