অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আজ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরকে প্রকাশ্য সমাবেশে টাকা ও চাকরি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
২০১৬ সালে টিএসসিতে ছাত্রলীগের একটি সভায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছিলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শরীরের ক্ষত চিহ্নই তাদের যোগ্যতা। বিসিএস পরীক্ষায় তোমরা শুধু অংশগ্রহণ করলেই চলবে। বাকীটা আমরা দেখবো।
এইচ টি ইমামের ওই বক্তব্য নিয়ে তখন সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে এমন কোনো স্থান নেই যেখানে সমালোচনার ঝড় উঠেনি। এনিয়ে তখন সরকারও রীতিমত বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরাও ওই সময় এইচ টি ইমামের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এইচ টি ইমামের বক্তব্যকে সরকারের ভেতর বিস্ফোরণ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। সেই বিস্ফোরণের রেষ কাটিয়ে উঠতে সরকারকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল।
এরপর কিছু দিন আগে আরেক বিস্ফোরণ ঘটালেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগ করে এটাই তাদের বিশেষ যোগ্যতা। তারা সারাদিন দলের জন্য কাজ করে। আমি তাদেরকে চাকরি না দিয়ে অন্য কাউকে দিতে পারি না। ড. মিজান কোনো প্রকার নিয়ম-কানুন ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিভিন্ন সেক্টরে ছাত্রলীগের ৩৩ নেতাকর্মীকে চাকরি দিয়েছেন।
ড. মিজানের এ বক্তব্য ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চাকরি দেয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এনিয়ে দেশব্যাপী আবার সমালোচনার ঝড় উঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও সরকার, ড. মিজান ও ছাত্রলীগের কঠোর সমালোচনা করা হয়।
সর্বশেষ বিস্ফোরণ ঘটালেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রোববার বুয়েট অডিটোরিয়ামে ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনকালে ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, তোমরা অপকর্মে লিপ্ত না হয়ে টাকার দরকার হলে আমার কাছে এসো। যখন ছাত্রত্ব শেষ করবে চাকরি দরকার আমার কাছে আসবে। রাজনীতি করতে করতে বয়স শেষ হয়ে গেলেও আমি তোমাদের চাকরির ব্যবস্থা করব। এটা নেত্রী আমাকে বলে দিয়েছেন। এমন কিছু করবে না যাতে সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। তবে আমি ক্ষমতাসীন দল করি বলেই আমি চাকরি পাব তা নয়। রিটেনে (লিখিত পরীক্ষা) টিকবে তারপর।
ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পরই দেশব্যাপী আবার বইছে সমালোচনার ঝড়। কাদেরের এই বক্তব্যে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। কেউ কেউ এটাকে সরকারের ভেতর মহাবিস্ফোরণ বলে আখ্যা দিচ্ছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরাও এনিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, ওবায়দুল কাদের কত টাকার মালিক? এত টাকা পেল কোথায়? তাহলে শেয়ারবাজার আর ব্যাংক লুটের টাকা দিয়ে কি মাদকাসক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পোষছে সরকার? আর রাজনীতি করতে করতে বয়স শেষ হয়ে গেলেও ওবায়দুল কাদের তাদেরকে চাকরি দেবেন কীভাবে? তারপর রিটেনে টিকলেই তিনি তাদেরকে চাকরি দিয়ে দিবেন। তাহলে অন্য মেধাবী ছাত্রদের কী হবে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাদের মতে, সাম্প্রতিককালে ছাত্রলীগের অপকর্মের কারণে সরকারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মাদকসহ আটক হচ্ছে। মানুষের বাসা-বাড়িতে গিয়ে ক্ষমতার জোর খাটিয়ে নারীদেরকে ধর্ষণ করছে। এমন অবস্থার মধ্যে আবার দলের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন তারা। এমনকি আগামী নির্বাচনে ভোটের মাঠে ছাত্রলীগের অপকর্মের বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলেও মনে করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।
Discussion about this post