রাত ১২টা। বনানীর ৮ নম্বর রোডের একটি বহুতল বাড়ির সামনে পাহারায় কয়েকজন অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী। বাড়িটির সামনে একের পর এক এসে থামছে দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি। গাড়ি থেকে নামছেন সমাজের নামিদামি ব্যক্তিরা। রাতেও যাদের চোখে দামি সানগ্লাস। কেউ কেউ আসছেন পুলিশ প্রটেকশনে। এভাবে রাত যত গভীর হচ্ছে বাড়িটির সামনে গাড়ির জটলা ততই বাড়ছে। সম্প্রতি যুগান্তর অনুসন্ধানী টিমের চোখে এ রকম দৃশ্য ধরা পড়ে। সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে আসে সমাজের হাইপ্রোফাইল লোকজনের অনেকের কদর্য চেহারা। বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে দেশজুড়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভে যখন উত্তাল তখনও রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোয় এমন প্রকৃতির ডাকসাইটে লোকজন এবং তাদের সন্তানদের রগরগে নিশুতি পার্টি বেশ জমজমাট।
জানা যায়, বনানীর এই বাড়িটি শোবিজ জগতের একজন বিশেষ ভিআইপির। যার নামের প্রথম আদ্যাক্ষরটি ইংরেজি ‘এস’ দিয়ে শুরু। শেষ শব্দ বাংলায় ‘হোসেন’। এসব আলো-আঁধারির পার্টিতে যারা গভীর রাত অবধি সময় কাটান তাদের কাছে তিনি এক নামে পরিচিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বনানীর আলোচিত ধর্ষণ ঘটনার পর গুলশান, বনানী, বারিধারা ও ধানমণ্ডি এলাকার অভিজাত অনেক ফ্ল্যাটে ভিআইপিদের আনাগোনা কমে গেলেও এই বাড়িটি ব্যতিক্রম। ‘প্রভাবশালীর’ বাড়ি হওয়ায় এখানে সবকিছুই চলছে আগের মতো। নাচ, গান, মদ, রুমপার্টি, পছন্দের বান্ধবী নিয়ে রাতভর একান্ত সময় কাটানো- বহাল আছে সবই। গভীর রাত অথবা ভোরের আলোয় তাদের বেরিয়ে আসার দৃশ্য বিশ্লেষণ করলে ভালো কিছু মনে করার কোনো কারণ নেই। শুধু বনানীর এই বাড়িটি নয়, যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে রাজধানীর অভিজাত এলাকার এমন অনেক বাড়ি ও ফ্ল্যাটের রমরমা খবর। যেখানে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সবই জায়েজ। তাদেরও কেউ কেউ সেখানকার সম্মানিত অতিথি। ফলে প্রভাবশালীদের এসব আড্ডাস্থল শেষ রাত পর্যন্ত নির্বিঘ্নে জমজমাট থাকে। ভেতরে প্রাইভেট পার্টির নামে ধনীর দুলালরা রাজা-বাদশাহদের মতো রীতিমতো সরাইখানা খুলে বসেছেন। পার্টির পরিবেশটা দেখলে তেমনটিই মনে হবে।
এ ধরনের প্রাইভেট পার্টিতে নিয়মিত যাতায়াত করেন এমন একজন তরুণ গার্মেন্ট ব্যবসায়ী যুগান্তরকে বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য এসব প্রাইভেট পার্টিতে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তারা। তিনি জানান, সেখানে সবকিছুই হয়। মদ, ইয়াবা থেকে শুরু করে একান্তে পছন্দের সঙ্গীর সান্নিধ্য পাওয়া যায়। অতিথিদের জন্য আভিজাত্যের সব চাহিদা সেখানে জোগান দেয়া হয়। বিনিময়ে শুধু মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হয়। যারা দিনের আলোয় দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামান তারা ও তাদের ছেলেমেয়েদের অনেকে রাতে এসব পার্টি আড্ডায় অবৈধ টাকা খরচ করেন দেদারসে।
যারা আছেন এ জগতে :
শেয়ারবাজার কেলেংকারি ও ঋণখেলাপি হিসেবে প্রায় যে বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর নাম শোনা গেছে তার কথিত ভাগ্নেও এ জগতের বাসিন্দা। নাম পাপ্পু। গুলশানের প্রাইভেট পার্টিতে তিনি একজন পরিচিত মুখ। পাঁচ তারকা হোটেলের প্রাইভেট পার্টিতে নিয়মিত যাতায়াত আছে তার। তবে পাপ্পু একা নন, প্রাইভেট পার্টি নামের এসব অন্ধগলির খাতায় নতুন করে নাম লিখিয়েছেন অনেক হাইপ্রোফাইল পরিবারের সন্তানরা। অনেকে নেশা আর নারীতে আসক্ত হয়ে ইতিমধ্যে বিপথগামিতার চরমে পৌঁছে গেছেন।
রাজধানীর আরেক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর ভাগ্নের নাম জিয়া। তিনি অবশ্য নিজে পার্টিতে যাওয়া ছাড়াও লাভজনক ভিন্ন এক পেশায় নাম লিখিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি শোবিজ তারকাদের পাঠিয়ে থাকেন। কথিত সেলিব্রেটি শো আয়োজনের আড়ালে তিনি এমন অনৈতিক ব্যবসা বেছে নিয়েছেন। আছেন বেশ ভালোই।
বনানী এলাকায় জনৈক শাহরিয়ার মাসুম ওরফে স্যাক্স নামের এক যুবক এখন রাজধানীতে ব্যাপক প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত। তিনি সরকারদলীয় প্রভাবশালী নেতা পরিচয়ে অভিজাতপাড়ায় প্রাইভেট পার্টির আয়োজন করেন। তার পার্টিতে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অনেকের নিয়মিত যাতায়াত আছে। মাসুমের সঙ্গে সমাজের প্রভাবশালীদের ঘনিষ্ঠতা থাকায় তার হাত অনেক লম্বা। সঙ্গত কারণে প্রশাসনের কেউ তাকে নিয়ে ঘাঁটাতে চান না।
সূত্র জানায়, মাকসুদুর রহমান বিশাল নামের জনৈক নাট্য পরিচালকের হাতের মুঠোয় আছেন সিনেমাপাড়া থেকে শুরু করে টিভি অভিনেত্রীদের এ সারির অনেকেই। বিশাল আয়োজনের টিভি নাটক বানানোর নামে মডেল অভিনেত্রীদের তিনি বশে আনেন। এরপর তাদের অনেককেই এসব প্রাইভেট পার্টিতে নিয়ে যান।
পুলিশ জানায়, রাজধানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে একটি বড়সড় ফ্যাশন হাউস চালান জনৈক হিরো নামের এক যুবক। তিনি নিজেও একজন প্রথম সারির ইয়াবা আসক্ত। উঠতি মডেলদের অনেকেই তার হাতের মুঠোয় বন্দি। তাই কারও কারও কণ্ঠে শোনা যায়, হিরো না থাকলে অনেক প্রাইভেট পার্টি রঙিন হয়ে ওঠে না। জানা গেছে, গুলশানের ‘ডলি আপা’ নামের অভিজাত এক নারীর হাতও নাকি অনেক লম্বা। কারণ প্রতি রাতেই তার অতিথি হন প্রভাবশালীদের অনেকে। এছাড়া তার সঙ্গে অনেক পুলিশ কর্মকর্তার বিশেষ ঘনিষ্ঠতার কথা এ জগতের কারও অজানা নয়।
সূত্র জানায়, ‘করবী’ নামের জনৈক টিভি উপস্থাপিকার ফ্ল্যাট বনানীর ১১ নম্বর রোডে। তার ফ্ল্যাটেও নিয়মিত চলে প্রাইভেট পার্টি। এই পার্টির সুবাদে হঠাৎ করেই তিনি বিশাল অর্থবিত্তের মালিকও বনে গেছেন। তবে তার এই হঠাৎ ধনাঢ্য হয়ে ওঠার পেছনে মূল অবদান রেখেছেন টিভি নাটকের কয়েকজন নায়িকা ও মডেল।
বনানী থানা পুলিশ জানায়, হাইপ্রোফাইলের চাপ সামলাতে না পেরে এক পর্যায়ে বনানীর ফ্লোর সিক্স নামের একটি সিসা লাউঞ্জ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। কারণ একাধিক মেয়ে বন্ধু নিয়ে সেখানে নিয়মিত আড্ডা জমাতেন সরকারদলীয় কয়েকজন তরুণ জনপ্রতিনিধি। সঙ্গত কারণে তাদের নামের আগে থাকা বিশেষ পরিচিতি প্রকাশ করা হল না। মাঝে মাঝে সেখানে যেতেন জনৈক মনির। যিনি এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ভাগ্নে। নানা শঙ্কায় থানা পুলিশ সেটিকে কৌশলে বন্ধ করে দেয়।
রাজধানীর এক সংসদ সদস্যের ছেলের নাম জনৈক সালমান। তিনিও এসব পার্টি জগতের পরিচিত নাম। বছরখানেক আগে গুলশানে কোটি টাকার ফ্ল্যাট কেনেন তিনি। এই ফ্ল্যাটেই একাধিক বন্ধুর সঙ্গে একান্ত ‘রুমপার্টিতে’ মশগুল থাকেন প্রায় দিন। সঙ্গে থাকে তার কথিত প্রেমিকা ইডেন।
রাজধানীর কয়েকটি অভিজাত হোটেলে দাপুটে ঘোরাফেরা ডেভিল নামের জনৈক ডিস্কো জকির (ডিজে)। প্রাইভেট পার্টি জগতে তিনি ডিজে ডেভিল নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম কাজী হাসিব। এছাড়া সাজু হাসান ওরফে গাড়ি হাসান নামের এক ধনাঢ্য যুবক মাঝে মাঝে ঢাকায় আসেন এসব পার্টির স্বাদ নিতে। উত্তরবঙ্গের ছেলে হলেও সাজু হাসান পার্টিতে এসে দু’হাতে টাকা ওড়ান। শুনতে অবাক মনে হলেও তিনি নাকি প্রতি রাতে লাখ লাখ টাকা খরচ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিজাত এলাকার এসব অন্ধকার জগতে অনেক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার ছেলেমেয়েরাও জড়িয়ে পড়ছেন। মানসম্মানের ভয়ে অনেকের পরিবার এ নিয়ে মুখ খুলে না। আবার বখে যাওয়া সন্তানদের এসব নিশুতি পার্টি থেকে ফেরাতেও পারছেন না। অনিক নামে জনৈক এক সচিবের ছেলেও প্রাইভেট পার্টিতে জড়িয়ে নিজের সবকিছু খুইয়েছেন। সম্প্রতি তাকে নিয়ে বেশ ঝামেলাও হয়েছে। তিনি রাজধানীর অন্যতম ইয়াবার ডিলার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। নিকুঞ্জ এলাকায় একটি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে বসবাস করেন অনিক। অভিযোগ আছে, নিকুঞ্জ থেকে গুলশান এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে নিজস্ব ডিলারদের মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসা করেন তিনি।
সূত্র জানায়, প্রাইভেট পার্টির আয়োজন করায় ধানমণ্ডির এইচটুও নামের একটি সিসা লাউঞ্জ দীর্ঘদিন ধরেই গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে রয়েছে। রেস্টুরেন্টের আড়ালে সেখানে মাদক সেবনের অভিযোগ বেশি। জনৈক প্রভাবশালীর ছেলে সৌরভ এই সিসা লাউঞ্জের হর্তাকর্তা।
এছাড়া অবাক করার মতো ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর ধানমণ্ডি এলাকায়। কারণ উড়ে এসে জুড়ে বসার মতোই জনৈক রাসেল মোল্লা নামের এক যুবক এখন নাকি ধানমণ্ডি এলাকার সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে এসে তিনি ধানমণ্ডির বড় ভাই হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছেন।
হ্যাভেন টাচ নামের একটি হোটেলে প্রাইভেট পার্টির নামে নিয়মিত জুয়ার আড্ডা বসে বলে জানা গেছে। এই হোটেলের মালিক জনৈক প্রভাবশালী একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী। নাম বিশ্বজিৎ বণিক। পুলিশের ওপর মহলে তার হট কানেকশন। বনানীতে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ঘটনার যে ক’জন স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হচ্ছে তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে আছে বিশ্বজিৎ বণিকের নাম।
জনৈক একজন সংসদ সদস্যের ছেলে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে প্রথম সারির বখাটেদের তালিকায় চলে আসেন। তিনি বনানী কাবানা লাউঞ্জ নামের একটি সিসা বারে ঘন ঘন যাতায়াত করতেন। এক পর্যায়ে সেখানে নিয়মিত ইয়াবা সেবনকারী হিসেবেও পরিচিতি পেয়ে যান। ক্ষমতার দাপটে মাথাটা বড্ড গরম। তাই একদিন রাতে কাবানা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে রিকশাচালককে গুলি করে বসেন। এভাবে গত বছর রাজধানীর আলোচিত ক্রাইম লিস্টে তার এ ঘটনাটি জায়গা করে নেয়।
একটি অভিজাত ক্লাবের সভাপতির নাম জনৈক নাসির। দুর্ভাগ্য, তার ছেলেও এখন বিপথগামী। যাকে প্রায় প্রতিদিন খিলক্ষেত এলাকার একটি অভিজাত হোটেলে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। অভিযোগ আছে, তিনিও নষ্ট খাতায় নাম লিখিয়েছেন। প্রতিদিন তার নতুন বন্ধুর প্রয়োজন হয়।
সূত্র জানায়, অভিজাত প্রাইভেট পার্টির সুবাদে দরিদ্র পরিবারের অনেক তরুণীরও ভাগ্য খুলে গেছে। এর জলজ্যান্ত উদাহরণ কান্তা নামের এক পার্টি গার্ল। তিন বছর আগেও ঠিকমতো বাসা ভাড়া দিতে পারতেন না। প্রাইভেট পার্টির বদৌলতে তারও ভাগ্য বদলেছে। রুদ্র নামে জনৈক কোটিপতির ছেলে তার প্রেমের ফাঁদে পা দেন। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তার সবই হয়েছে। রুদ্রের কাছ থেকে চাহিদামাফিক অঢেল টাকাও পান কান্তা। মাসের বেশির ভাগ দিন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান তিনি।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে ঢাকার অভিজাত এলাকায় ‘প্রাইভেট হাউস পার্টি’র কয়েকজন আয়োজকের নামও জানা গেছে। তারা হলেন ডিজে জুডো, ডিজে জিসান ও পিজে হেলেন। এদের মধ্যে পিজে হেলেন ছোটবেলা থেকেই মাদকাসক্ত। তার পরিবারের ঘনিষ্ঠজন একটি নাইট ক্লাবে ক্যাবারে ড্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। হেলেন সম্প্রতি পুলিশের হাইওয়ে থানার এক ওসির ছেলেকে গোপনে বিয়েও করেছেন। এছাড়া রাজধানীর একটি নামকরা চেইন বেকারি শপের মালিকের ছেলের নাম শামীম। তিনিও রাজধানীর বড় বড় প্রাইভেট পার্টিতে নিয়মিত অতিথি হন। অবশ্য শামীমের আরেকটি পরিচয় আছে। ঢাকার অদূরে রূপগঞ্জে ইয়াবা চোরাচালানেও জড়িত তিনি। চলাফেরা করেন নতুন মডেলের হেরিয়ার গাড়িতে।
সূত্র জানায়, প্রাইভেট পার্টিতে সোসাইটি গার্ল সরবরাহ করে দরিদ্র ঘরের সন্তান আরজু রনি ওরফে কালা রনি এখন কোটিপতি। অবশ্য কালা রনির একাধিক কথিত প্রেমিকাও আছে। এদের মধ্যে পুতুল নামের এক তরুণীর সঙ্গে তাকে বেশির ভাগ সময় দেখা যায়। এছাড়া পার্টি জগতের পরিচিত নাম ডিজে মিরাজ ও ফারজানাও এখন কোটিপতি। বিভিন্ন ক্লাবে তারা ‘বিশেষ পস পার্টি’র আয়োজন করেন। এসব পার্টিতে অংশ নেন মিরাজ ফারজানার আমন্ত্রিত অতিথিরা। সেখানে সাধারণের প্রবেশ থাকে একেবারে নিষিদ্ধ।
জানা গেছে, জনৈক সবুজ খান নামের এক ফটোগ্রাফার ভাগ্য বদলের জন্য পার্টি জগৎকে বেছে নিয়েছেন। গ্রামের দরিদ্র ঘরের আটপৌরে সুন্দরী মেয়েদের ঢাকায় এনে মডেল বানান তিনি। বিভিন্ন স্টাইলে ছবি তুলে এসব তরুণীকে বিত্তশালীদের কাছে পাঠান তিনি। এদের অন্যতম হচ্ছেন তাসনিম মেহনীল জয়া নামের এক তরুণী। পার্টি হিসেবে নাম লেখানোর পর জয়া কোটিপতি বনে গেছেন। অথচ ২০১০ সালেও তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে পার্ট টাইম গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। পোশাক বদলে অভিজাত মডেল বনে গেছেন জয়া। তবে শুধু জয়া নন, জনৈক নাট্য পরিচালক রয়েল খান আশ্চর্য প্রদীপের পরশে এখন গাড়ি-বাড়ির মালিক। তিনি নিজেই তার বন্ধুদের বলে থাকেন- এক মডেল দিয়ে আমি একটা করে গাড়ি কিনি। অবশ্য মডেলদের বিনিময়ে তিনি কিভাবে গাড়ি কেনেন তা বিস্তারিত বলার অপেক্ষা রাখে না।
জনৈক চিত্রনায়িকা ইমুকে নিয়ে অন্ধকার পার্টি জগতে নানা মুখরোচক কথাবার্তা শোবিজ মিডিয়ায় ছড়াছড়ি। এসবের কতটুকু সত্যি আর কতটুকু সে ফ গল্প তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে ইমুকে বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে গভীর রাত অবধি বিশেষ পোশাকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। তিথী নামের এক নামকরা সুরকারের স্ত্রীর নিয়মিত হাইপ্রোফাইল পার্টিতে যাতায়াতের খবর বেশ পুরনো। পার্টি শেষে গভীর রাত অবধি তাকে বাসায় ফিরতে দেখে প্রতিবেশীরা এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় থাকেন ধানমণ্ডি ২৬ নম্বর রোডের এক ফ্ল্যাটে। এমন ‘স্বাধীন’ জীবনযাপন তার খুব পছন্দ। রাজধানীর গুলশান-১ নম্বর এলাকায় জনৈক জনপ্রতিনিধির ফ্ল্যাট ঘিরেও নানা গুঞ্জন আছে। ওই ফ্ল্যাটে কলকাতার চিত্রনায়িকাদেরও আনাগোনা আছে। জানা গেছে, সেখানে প্রাইভেট পার্টি করেন ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া ধনাঢ্য পরিবারের কয়েকজন তরুণ। এদের অন্যতম হচ্ছেন কাজী সিহাম, ডিজে জিসান ও মিশু নামের তিন তরুণ।
সমাজ ও মনোবিজ্ঞানীদের কেউ কেউ যুগান্তরকে বলেন, বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’শিক্ষার্থী ধর্ষণ ঘটনার পেছনে অভিজাত এলাকার এসব কদর্য চেহারা অনেকখানি দায়ী। এজন্য এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করতে গলে প্রথমে পরিবার, তারপর সমাজ থেকে মাদককে সমূলে বিদায় জানানোসহ আধুনিকতার নামে ছেলেমেয়েদের বেপরোয়া জীবনযাপনের লাগাম টেনে ধরতে হবে। তা না হলে বনানীর মতো এ রকম ঘটনা বাড়বে বৈ কমবে না।
সূত্র: যুগান্তর
Discussion about this post