অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আসছে সরকারের জঙ্গি বিরোধী অভিযান। র্যাব-পুলিশের আবিষ্কৃত কথিত জঙ্গি আস্তানায় নিহতের অনেকের পরিবার থেকেই অভিযোগ এসেছে যে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে তাদের কাউকে ৬ মাস ও কাউকে আবার ১ বছর আগে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে আনা হয়েছে।
সর্বশেষ চট্টগ্রামে এক অভিযানে চারজন নিহত হওয়ার পর তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাদেরকে কয়েক মাস আগেই বাসা থেকে তুলা নেয়া হয়। এরপরই সরকারের কথিত জঙ্গি অভিযানের গোমর ফাঁস হয়ে যায়।
এরপর থেকে সরকার কথিত জঙ্গি অভিযান নিয়ে নতুন কৌশল অবলম্বন করে। সিলেটের আতিয়া মহল ও মৌলভীবাজারের কথিত জঙ্গি আস্তানায় নারী-শিশু ও পুরুষদের গুলি ও ব্রাশ ফায়ার করে দেহগুলোকে একেবারে ছিন্নভিন্ন করে ফেলা হয়েছে। যাতে করে কারো লাশ আর সনাক্ত করতে না পারে।
তারপর কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের আগের দিন সন্ধ্যায় শহরে একটি বাড়িতে কথিত জঙ্গি আস্তানা আবিষ্কার করে র্যাব-পুলিশ। প্রথমে বলা হয়েছে যে বাড়ির ভেতরে কয়েকজন জঙ্গি আছে। অভিযান চালিয়ে বাড়িটির ভেতরে প্রবেশ করে দেখলো কেউ নেই। পরে র্যাব-পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে চট্টগ্রাম থেকে বিশেষজ্ঞদল আসতে আসতে জঙ্গিরা পালিয়ে গেছে। এনিয়ে তখন সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়। বিএনপির প্রার্থী সাক্কুকে ফেল করানোর জন্যই সরকার জঙ্গি নাটক সাজিয়েছিল বলে মনে করেছে বিশিষ্টজনসহ সাধারণ মানুষ।
সর্বশেষ গতকাল শনিবার নরসিংদীর গাবতলী এলাকায় আবিষ্কার করা হয় কথিত আরেক জঙ্গি আস্তানা। র্যাব-পুলিশ বাড়িটিকে ঘিরে ফেলে। অভিযানের জন্য ঢাকা থেকে নরসিংদী যায় সোয়াতের টিম। আর সরকারি মিডিয়াগুলো আমেজের সঙ্গে লাইভ সম্প্রচার করে। র্যাবের পক্ষ থেকে দাবিও করা হয়েছে যে, আতিয়া মহলের জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আছে।
কিন্তু, হঠাৎ বিধিবাম। ভেতর থেকে আবু জাফর মিয়া নামে এক যুবক ফেসবুকে দুইটি স্ট্যাটাস দেয়। স্ট্যাটাসে তিনি তাদের বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য কামনা করেন। তারা নিজেদেরকে নিরপরাধ আওয়ামী লীগ কর্মী বলেও দাবি করেন। এরপরই পুরো ঘটনা পাল্টে যায়।
জানা গেছে, আবু জাফরের স্ট্যাটাসের পর সরকারের ওপর মহলের নির্দেশে অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকে র্যাব-পুলিশ। ভেতরের ছেলেদেরকে রক্ষায় নতুল কৌশল অবলম্বন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সকালে শুরু হয় কথিত আত্মসমর্পণ। বাসার ভেতর থেকে যুবকরা একের পর এক বের হয়ে আসতে থাকে।
পাঁচ যুবক বের হয়ে আসার পর বাসার ভেতরে প্রবেশ করে র্যাব-পুলিশ। কিছুক্ষণ পর তারা বাসাটিকে সিলগালা করে এসে গণমাধ্যমকে জানায়, ভেতরে বিস্ফোরক জাতীয় কিছুই মেলেনি।
নরসিংদীর এ ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদেরকে আওয়ামী লীগ কর্মী দাবি করে যুবকদের দেয়া স্ট্যাটাস ও ভেতরে কিছুই না পাওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরে চলছে ব্যাপক আলোচনা। ওরা আওয়ামী লীগ কর্মী হওয়ার কারণেই তাদের আস্তানা থেকে পুলিশ কিছুই পায়নি বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
আবার কেউ কেউ বলছেন যে, ওরা যদি নিজেদেরকে আওয়ামী লীগ কর্মী বলে দাবি না করতো তাহলে হয়তো ঘটনা ভিন্ন রূপ নিতো। ওই বাসা থেকেই পুলিশ অস্ত্র-গুলি, বিস্ফোরকসহ জিহাদী বই উদ্ধার করতো। এমনকি পাঁচ যুবককেও ছিন্নভিন্ন লাশ হয়ে বের হতে হতো। তাদের পরিবারও হয়তো জানতো না যে কারা এখানে নিহত হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে যেমনটা দেখা যায়।
Discussion about this post