অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ইয়াবা সম্রাটকে পাশে দাঁড় করিয়ে রেখেই আজ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কক্সবাজারের একটা বদনাম আছে, এখান থেকে নাকি ইয়াবা পাচার হয়। ইয়াবা পাচার বন্ধ করুন। যারা ইয়াবা পাচারে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তারা যত শক্তিশালী হোক, ছাড় দেওয়া হবে না। কারণ তারা দেশের জন্য অভিশাপ।
প্রধানমন্ত্রী যখন কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দলীয় জনসভায় এসব কথা বলছিলেন, তখন জনসভা মঞ্চেই প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো ছিলেন মাদক ও ইয়াবা সম্রাট হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। মাদক সম্রাটকে পাশে রেখে মাদকের বিরুদ্ধে এ কঠোর হুঁশিয়ারি নিয়ে এখন পুরো কক্সবাজারজুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। লোকজন এমনও বলছে যে, ইয়াবা সম্রাটতো শেখ হাসিনার আচলের নিচেই বসে আছে। এমপি বদি ইয়াবা সম্রাট হিসেবে চিহ্নিত। তাকে ধরলেই সব বেরিয়ে আসবে। এই ইয়াবা সম্রাটই কক্সবাজারের সুনাম নষ্ট করছে। ইয়াবার জন্য কক্সবাজারের কখনো বদনাম ছিল না।
বর্তমান সময়ের প্রধান ও আলোচিত মাদক-ইয়াবার নাম উঠলেই এমপি বদির প্রসঙ্গ উঠে আসে। জানা গেছে, বর্তমান সরকারের শুরুতেই এমপি বদি তার লোকজন দিয়ে মিয়ানমার থেকে মরণনেশা ইয়াবা বাংলাদেশে পাচার শুরু করেন। সেই থেকে পুরো বাংলাদেশ ইয়াবায় সয়লাব হয়ে যায়। তিনি আড়ালে থেকে তার ভাই, বোন, ভাগিনা, বেয়াই ও কর্মীদের দিয়ে ইয়াবা পাচার চালিয়ে আসেন। বদি গডফাদার হিসেবে অন্তরালে থাকলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ইয়াবা পাচারকারীর তালিকার শীর্ষে রয়েছে বদির ভাই মো. আবদুল শুক্কর ও মৌলভী মুজিবুর রহমান, দুই সৎভাই আবদুল আমিন ও ফয়সাল রহমানের নাম। এ চার ভাইকে দিয়ে এক অপ্রতিরোধ্য ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন আবদুর রহমান বদি। চার ভাই ছাড়াও ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এমপি বদির স্ত্রী সাবেকুন্নাহার সাকী, বেয়াই আখতার কামাল, শাহেদ কামাল, মামা হায়দার আলী ও মামাতো ভাই কামরুল ইসলাম রাসেল। এছাড়া পারিবারিক এ মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করেছেন বোনের ছেলে নীপু। ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট একবার চকরিয়া থানা পুলিশের হাতে আটক হন স্ত্রী সাবেকুন্নাহার সাকী।
অপরদিকে, এমপি বদির কারণেই টেকনাফ হয়ে ওঠে মাদকের রাজধানী। ইয়াবার জোয়ারে তাই ভাসে গোটা টেকনাফ। এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান ব্যবসাই হয়ে ওঠে ইয়াবা। টেকনাফের রাজনীতি আর অর্থনীতি- সব ইয়াবাকে কেন্দ্র করেই চলে। জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি থেকে শুরু করে এমন কোনো সেক্টর নেই যে, যাদের ইয়াবার ব্যবসায়ে জড়িত করেননি বদি। ইয়াবাকে বদি এতটাই লাভজনক ব্যবসা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, লবণ চাষ, মাছ চাষ, কাঠ ব্যবসাসহ বিভিন্ন বৈধ ব্যবসা ছেড়ে শত শত ব্যবসায়ী ইয়াবায় অর্থ লগ্নি করছে। আর এসব কারণে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা টেকনাফ হয়ে উঠেছে মাদকের স্বর্গরাজ্য। মাফিয়াদের বিচরণে মুখর থাকে সুন্দরের লীলাভূমি এই টেকনাফ।
টেকনাফের সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ইয়াবার বাংলাদেশের গডফাদার এমপি বদির পরিবারের হাতে। এমপির সঙ্গে সব সময় চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের চলাফেরা। এমপির ভাই, বন্ধু ও সহযোগীরা বেপরোয়া ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি এমপির ক্ষমতার জোরেই চলছে, এ কথা সবাই জানে। এমপির এই ইয়াবা ব্যবসার কথা জানে সরকার ও দল। এর পরও তারা কিছু করছে না। এখানকার সাধারণ মানুষ এমপি এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গদের কাছে অসহায়। মাঝে-মধ্যে পুলিশ অভিযান চালায়। ক্রসফায়ার হয়। কিন্তু রাগব বোয়ালরা সব সময় থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
জানা গেছে, ক্ষমতার কাছে থাকায় ইয়াবা ব্যবসার বদি ও তার লোকজন সব সময়ই থাকে প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। বার বার বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিজিবি, কোস্টগার্ড, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় নাম এলেও তারা প্রকাশ্যেই ইয়াবার রাজ্যে দাপিয়ে বেড়ান। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এতটাই প্রভাবশালী যে, জেলা আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে বিষয়টি তোলার কেউ সাহস করেন না। কেউ বিষয়টি তুললেও এমপি বদি রেগে ফেটে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক ইয়াবার চালানও ছাড়িয়ে নিয়ে যান এমপি বদি। ইয়াবা পাচারে কখনো কখনো বদির গাড়িও ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রমতে, শুধু তা-ই নয়, এমপি বদি ও তার স্ত্রীর গাড়ি থেকে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। কুমিল্লায় একবার বদির উপস্থিতিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করে। কিন্তু বিতর্কিত এ সংসদ সদস্য প্রভাব খাটিয়ে পুরো ইয়াবার চালান নিয়েই ঢাকায় আসেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইয়াবার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী আজ যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তা শুধুই লোক দেখানো। প্রধানমন্ত্রী যদি সত্যিকার অর্থে মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে চান তাহলে আগে অবশ্যই ইয়াবা সম্রাট হিসেবে খ্যাত এমপি বদিকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
Discussion about this post