অভিযুক্ত চোর, যৌন নিপীড়নকারী, ছিনতাইকারী, শিক্ষক ও ছাত্রীকে লাঞ্ছনাকারী এবং বহিষ্কার হওয়া ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে। এ ছাড়া কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি, দোকানদারকে মারধর এবং দোকানে বাকি খাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এসব অভিযোগ নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
গত শুক্রবার রাতে শাখা ছাত্রলীগের ২১৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এর আগে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর এই কমিটির সভাপতি মো. জুয়েল রানা এবং সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চলের নাম ঘোষণা করা হয়। এর চার মাস পর এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হলো।
নতুন কমিটির সহসভাপতি আবু সাদাত সায়েম এবং সহসম্পাদক মো. জামশেদ আলমের বিরুদ্ধে রয়েছে যৌন নিপীড়ন এবং শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগ। এ ঘটনায় গত বছরের ২৭ জানুয়ারি তাঁদের দুজনকেই শাখা ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।
সহসভাপতি মিনহাজুল আবেদীন এবং মো. ইউনুস আলী পরশের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের বটতলার দোকানে বাকি খাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাকি পরিশোধের দাবিতে ২০১৫ সালের ২২ মার্চ দোকান বন্ধ রাখেন বটতলার দোকানদারেরা। এর আগের দিন ২১ মার্চ বটতলার চায়ের দোকানদার নাহিদকে মারধর করেন ছিদ্দিকুর রহমান ওরফে প্রত্যয়। নতুন কমিটিতে তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন।
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিম জুয়েলের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে। ওই দিন দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনের সামনে থেকে বহিরাগত এক ব্যক্তির মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেন তিনিসহ আরো কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী।
সহসভাপতি হামজা রহমান অন্তর ২০১৫ সালের ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে এক ছাত্রীর গায়ে রং ছিটিয়ে দেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিন মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে হল প্রশাসনের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায়-চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ১৮ এপ্রিল অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে শিক্ষার্থীদের উসকানি দিয়ে হল কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করে প্রশাসন।
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গত ১৮ ডিসেম্বর পুলিশে সোপর্দ করা হয় এস এম শরীফ আহমেদকে। ওই অভিযোগে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছিল। নতুন কমিটিতে তিনি উপপরিবেশবিষয়ক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন।
এ ছাড়া কমিটির আরও ছয় নেতা ও এক সদস্যের বিরুদ্ধে ছিনতাই, সাধারণ ছাত্রদের মারধর, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের গেরুয়া বাজারে দোকানপাট ও গাড়ি ভাঙচুর করার পৃথক অভিযোগ রয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা এবং সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, ত্যাগী ব্যক্তিদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এই কমিটিতে। কিছু ভুলত্রুটি যাঁদের আছে, তাঁদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু সব অভিযোগ সব সময় সত্য হয় না। আমরা যাচাই-বাছাই করে কমিটি ঘোষণা করেছি।’
প্রথম আলো ও এনটিভি অবলম্বনে
Discussion about this post