অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক:
সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে যে প্রশাসনের কর্মকর্তারা একের পর এক দুর্নীতি-লুটপাটে জড়িয়ে পড়ছে সেটা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট। দুর্নীতি-লুটপাট বন্ধ হোক এটা সরকার চায় না। কারণ বিগত ১৬ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে সরকার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে শুধু বদলি করে দেয়। এর সর্বশেষ প্রমাণ হল এনবিআরের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল। দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার পরও সরকার তাকে আইনের আওতায় না এনে বগুড়ায় বদলি করেছে।
সম্প্রতি ১৫ লাখ টাকার ছাগলকাÐে ধরা খেয়েছে এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমান। দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছে মতিউর। বেনজীরের মতো মতিউরও দেশের বিভিন্ন জেলায় জমি কিনে গড়ে তুলেছে বড় বড় রিসোর্ট ও প্রাসাদ। মতিউরকে নিয়ে যখন সমালোচনা তুঙ্গে তখনই বেরিয়ে এল এনবিআরের আরেক কর্মকর্তা ফয়সালের অবৈধ সম্পদের তথ্য।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ঢাকার আদালতে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিবরণ তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফয়সাল ও তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে ৫ কাঠার দুটি প্লট, শ্বশুরের নামে থাকা ঢাকার রমনা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট, খিলগাঁওয়ে শাশুড়ির নামে ১০ কাঠা প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া ফয়সাল ও তাঁর আত্মীয়স্বজনের নামে থাকা ১৯টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮৭টি হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের আদেশে বলা হয়, এই জব্দের আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় এসব সম্পদ হস্তান্তর বা বিনিময় করা যাবে না।
দেখা গেছে, দুদকের তদন্তে ফয়সালের যত অবৈধ সম্পদের তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তিনি তার চেয়েও আরও বেশি সম্পদের মালিক। বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে, ফয়সাল দুর্নীতিবার মাধ্যমে অর্জন করা সব সম্পদই তার স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি, খালা শাশুড়ি, মামা শ্বশুর, শ্যালক ও অন্যান্য আত্মীয়দের নামে দিয়েছেন। আর এসব সম্পদ তিনি অর্জন করেছেন তার পদের প্রভাব খাটিয়ে। বড় বড় ব্যবসায়ীদের উপর চাপ সৃষ্টি করে তিনি শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
দেশের মানুষের ধারণা ছিল সরকার তাকে আইনের আওতায় আনবে। তাকে চাকরিচ্যুত করে জেলে ভরবে। কিন্তু সরকার যা করেছে সেটা সম্পূর্ণ মানুষের প্রত্যাশার বিপরীত। সরকার তাকে শাস্তি না দিয়ে বদলির আদেশ দিয়েছে।
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের পরও একজন কর্মকর্তার চাকরি থাকে কীভাবে? যেখানে ফয়সালের জেলে থাকার কথা সেখানে সরকার তাকে জামাই আদরে বদলি করে বগুড়ায় পাঠাচ্ছে। তাকে শাস্তি না দিয়ে বদলির আদেশ দুর্নীতিকে আরও বেশি উৎসাহীত করবে। এখন অন্যরাও মনে করবে দুর্নীতি করলে বদলি ছাড়া আর কিছুই হবে না। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে।
Discussion about this post