দেশের সব ইন্টারনেট সেবাদানকারী (আইএসপি) প্রতিষ্ঠানকে ‘আইপি লগ’ কমপক্ষে এক বছর সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। একই সঙ্গে সংস্থাটি ওয়াইফাই বা হট স্পট সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর পরিচয়ও সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছে।
সাইবার অপরাধীদের শনাক্ত করতে সম্প্রতি বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগ থেকে সব আইএসপি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে আইএসপিদের এই নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। ‘আইপি লগে’ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ডিভাইসের পরিচয়, সময়সূচি এবং ব্যবহারকারী কোন ওয়েবসাইট পরিদর্শন করছে (ইউআরএল) তা সংরক্ষণ করতে হবে।
তবে মানবাধিকারকর্মী ও সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে একজন ব্যক্তি কখন কোন ওয়েবসাইটে ঢুকবে তা তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। তাই এই তথ্যগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কখন, কীভাবে পেতে পারে সে বিষয়টি আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
কম্পিউটার কিংবা মুঠোফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হতে হলে একটি পরিচিতি নম্বর বা ঠিকানা লাগে, যা আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) অ্যাড্রেস নামে পরিচিত। কোন আইপি অ্যাড্রেসের বিপরীতে কোন ব্যক্তি কোন সময় ইন্টারনেট-সেবা নিচ্ছে, তা আইএসপিতে রেকর্ডভুক্ত করে রাখার উপায় হলো ‘আইপি লগ’। গোয়েন্দা সদস্যরা বলছেন, দেশে ঠিকমতো আইপি লগ সংরক্ষণ না করায় সুবিধা নিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা।
বিটিআরসির ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ওয়াইফাই বা হট স্পট সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর নাম, মুঠোফোন নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সময়ে নিরাপত্তা সংস্থা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে যেকোনো ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করতে পারে, সে জন্য আইএসপিকে আইপি লগ সরবরাহ করতে হবে।
আইপি লগ সংরক্ষণ করলে সাইবার অপরাধের অধিকাংশই শনাক্ত করা যাবে বলে মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইনফরমেশন সিস্টেমস অডিট অ্যান্ড কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের (আইসাকা) বাংলাদেশ অংশের প্রেসিডেন্ট নজরুল হায়দার। তবে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যে কেউ যাতে আইপি লগ পেতে না পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, ব্যক্তিগত তথ্য পেয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ফেলার একটা আশঙ্কা থেকে যায়।
মানবাধিকারকর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, দেশে ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের কোনো আইন নেই। এ ধরনের স্পর্শকাতর তথ্যপ্রাপ্তি এবং তা ব্যবহারের যুগোপযোগী নির্দেশনাসহ একটি আইনের খুবই প্রয়োজন।
বিটিআরসির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় পর্যায়ে যেসব আইএসপি আইপি লগ সংরক্ষণ করত না তাদের এরই মধ্যে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এম এ হাকিম।
অবশ্য আইপি লগ সংরক্ষণ না করলে আইএসপিদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে বিষয়টি বিটিআরসির চিঠিতে উল্লেখ নেই।
জানতে চাইলে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশনস বিভাগের মহাপরিচালক কর্নেল মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আইপি লগ’ সংরক্ষণের বিষয়ে আইএসপিদের আগেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা মানেনি। এবারও নির্দেশনা দেওয়ার পর তারা বাস্তবায়ন করতে অতিরিক্ত সময় চেয়েছিল। কিন্তু তা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। কোনো আইএসপি যদি আইপি লগ সংরক্ষণ না করে, তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post