অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
যাদের বিরুদ্ধে সরকার উৎখাতের চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছিল, সেই হেফাজতে ইসলামের আমিরসহ প্রায় তিন শতাধিক কওমী আলেমকে গণভবনে ডেকে নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর এনিয়ে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বত্রই বইছে সমালোচনার ঝড়। বিশেষ করে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে বাম সংগঠনগুলো। হেফাজতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এ বৈঠক ও তাদের দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার ঘটনাকে নিজেদের জন্য ভবিষ্যত বিপদসংকেত বলে মনে করছে বাম ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা।
২০১৩ সালের ৫ মে’র মতিঝিলের শাপলা চত্বরের ঘটনার পর হেফাজতে ইসলাম ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় হেফাজত সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। আর হেফাজতের অভিযোগ ছিল সরকার রাতে গণহত্যা চালিয়েছে।
এঘটনার পর থেকে কওমী মাদরাসা কেন্দ্রীক গড়ে উঠা সংগঠন হেফাজতকে নিজেদের আয়ত্তের মধ্যে আনতে বিভিন্ন কৌশলে কাজ শুরু করে। জানা গেছে, সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী ও উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত হাটহাজারী মাদরাসায় নিয়মিত যোগাযোগ করতে থাকে। তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়েও সরকার আস্তে আস্তে নমনীয় হতে থাকে। এরপর ২০১৬ সালে পাঠ্যবই প্রণয়নের আগে সরকারের কাছে হেফাজতের পক্ষ থেকে ১৬ দফা দাবি পেশ করা হয়। সরকার তাদের বেশ কিছু দাবি মেনেও নিয়েছে।
হেফাজতের দাবি মেনে নিয়ে পাঠ্যবই প্রণয়ন করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে দেশের বামপন্থী ধারার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ, সরকার মৌলবাদীদের সঙ্গে আতাঁত করেছে। পাঠ্যবই থেকে এসব বাদ দেয়ার দাবিও জানিয়ে আসছে তারা। যদিও পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তিত বিষয়গুলো আগে থেকেই ছিলো, মাঝখানে দুই বছর ছিলোনা কেবল।
সর্বশেষ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ভাস্কর্য সরানোর দাবির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সহমত পোষণ ও কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্সের সমমান প্রদানের স্বীকৃতি দেয়ায় সরকারের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বামপন্থীরা। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতি বলেও মনে করছে তারা।
স্বাধীনতার পর থেকেই এদেশের বামপন্থী সংগঠনগুলো অস্তিত্বহীন অবস্থায় রাজনীতির মাঠে কোনো রকমে টিকে আছে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কোনো সময় নিজেদের মধ্যে জোট করে আবার কোনো সময় বামপন্থীদের ঠিকানা হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগের ছায়ায় আশ্রয় নেয়। আওয়ামী লীগের নৌকায় পা দিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর প্রথমবারের মতো ক্ষমতার কাছে আসে তারা। তখন কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগও তাদেরকে নিজেদের ছায়ায় রেখেছে। এ সুযোগে বামপন্থীরা যে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে যথেষ্ট শক্ত হয়ে বসেছে সেটাও বুঝতে পারছেন শেখ হাসিনা।
দেশের রাজনীতিতে এখন প্রতিদিনই নতুন নতুন প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারকেও নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে। আওয়ামী লাগ ভাল করেই জানে যে, এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ বিএনপি-জামায়াত জোটের সমর্থক। বিএনপি-জামায়াতের বড় একটা ভোট ব্যাংক। অপরদিকে, বামপন্থি দলগুলোর সারাদেশে কোনো অস্তিত্ব নেই। তাদের কোনো ভোটও নেই। তাই আগামী নির্বাচনে ভোটের বিবেচনায় সরকার হেফাজতে ইসলাম ও কওমী মাদরাসার আলেমদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার কৌশল নিয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বামপন্থীরা মনে করছে, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের এ সম্পর্ক আগামী নির্বাচনে প্রভাব পড়বে। আওয়ামী লীগের কাছে আর আগের মতো তাদের গুরুত্ব থাকবে না। তাই তারা এখন ভবিষ্যতে নিজেদের অস্তিত্ব সংকটের আশঙ্কা করছে।
Discussion about this post