লাইনচ্যুত বিএনপি আবার ধীরে ধীরে লাইনে আসছে। ২০ বছরের জোটসঙ্গী জামায়াতকে ছাড়া যে অবৈধভাবে পাথরের মতো জাতির ঘারে বসে থাকা আওয়ামী লীগকে সরাতে পারবে না সেটা মনে হয় বুঝতে শুরু করেছে। এটা একটা ভাল দিক যে গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হওয়ার আগেই বিএনপি বিষয়টি উপলব্দি করতে পারছে।
বিএনপি এখন পর্যন্ত যা করেছে এগুলোকে সরকার পতনের আন্দোলন বলা যায় না। তবে এটা সত্য যে এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে ভবিষ্যতের বড় আন্দোলনের জন্য অনেকটা প্রস্তুত করতে পেরেছে। মহাসমাবেশের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি চাঙ্গা।
আর সরকারের অনুমতি নিয়ে যেসব কর্মসূচি পালন করা হয় এগুলো সরকার পতনের আন্দোলন বলা যায় না। সরকারের পতন ঘটাতে হলে অনুমতি ছাড়া রাজপথে নেমে সরকারকে ধাক্কা দিতে হবে। রাজপথ দখলে নিয়ে সরকারকে একঘরে করে ফেলতে হবে। এজন্য প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয় ঘেরাও করতে হবে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সচিবালয় ঘেরাও করে রাখতে পারলে সন্ধ্যার পরই ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবে শেখ হাসিনা।
এখন প্রশ্ন হল-বিএনপির একার পক্ষে কি এমন কর্মসূচি সফল করা সম্ভব হবে? বিগত ১৫ বছরের ইতিহাস বলছে-সরকার পতনের এমন ঝুকিপূর্ণ কর্মসূচি সফল করা বিএনপির একার পক্ষে সম্ভব না। কারণ, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের দুইটি সরকারবিরোধী টানা আন্দোলনই এর প্রমাণ। দুইটি আন্দোলনেই বিএনপি নেতারা মাঝপথে হাল ছেড়ে দিয়েছিল। জামায়াত সাথে থাকার পরও যেখানে বিএনপি নেতারা গ্রেফতার নির্যাতনের ভয়ে মাঝপথে আন্দোলন ছেড়ে দিয়েছিল, সেখানে জামায়াতকে ছাড়া বিএনপির পক্ষে শেখ হাসিনা ক্ষমতচ্যুত করা মোটেও সম্ভব না। আর বিএনপির সাথে যে ৩৬ দল আছে সবগুলোর মিলিয়ে মাঠে নামার মতো ২০০ কর্মী হবে না। নাম ও ব্যানার সর্বস্ব দল দিয়ে কখনো স্বৈরাচারী সরকারের পতন আন্দোলন হয় না।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ছিন্নমূল কিছু বাম ও রামপন্থীদের পরামর্শে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও বিএনপির আরও কিছু নেতা চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন থেকে জামায়াতকে দূরে ঠেলে দেয়। তারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ভুলভাল বুঝিয়েছিল। কয়েকটি বড় সমাবেশ করেই বিএনপি মনে করেছিল সরকার পতন হয়ে যাবে। জাামায়াতের আর দরকার হবে না।
কিন্তু গত ২৯ জুলাই ঢাকার চারপাশের প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিএনপি বুঝতে পারছে যে পাথরের মতো ঘারে বসে থাকা আওয়ামী লীগকে হঠানো এত সহজ না। শেখ হাসিনাকে সরাতে হলে জীবনের ঝুকি নিয়ে পুলিশের গুলির মুখে দাড়াতে হবে। জেলে যেতে হবে। শেখ হাসিনা মরণকামড় দিবে। এমনকি আরেকটি গণহত্যাও চালাতে পারে। এমনটা ধরে নিয়েই রাজপথে নামতে হবে। আর এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে শুধু একমাত্র জামায়াতই। কারণ, জামায়াত খালেদা জিয়ার কাছে পরীক্ষিত। অতীতের আন্দোলনগুলোতে জামায়াত-শিবিরের ভুমিকার বিষয়ে খালেদা জিয়া ভাল জানেন। সুতরাং আন্দোলন সফল করতে হলে জামায়াতকে লাগবেই।
সম্প্রতি একাধিক গণমাধ্যমের রিপোর্টে বলা হয়েছে-বিএনপির বিভিন্ন ফোরামে এখন জামায়াত নিয়ে কথা বলছে। চলমান আন্দোলনে তারা এখন জামায়াতের প্রয়োজনীয়তাও ফিল করতেছে। খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপির কয়েকজন নেতা জামায়াতের সাথে যোগাযোগ করছেন। আগামী দিনের একদফার আন্দোলনে তারা জামায়াতকে সাথে থাকার জন্যও বলছে।
Discussion about this post