অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
অবশেষে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন ধ্বংসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের বিনাভোটের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুই মিলে প্রাকৃতিক সুন্দর্যেল লীলাভুমি হিসেবে বাংলাদেশের সুন্দরবন ধ্বংস কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন।
পরিবেশবিদ, বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠন , বিশিষ্টজন ও দেশের মানুষের সকল প্রকার মতামতকে উপেক্ষা করে ২০১১ সালে সুন্দরবনের রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভারতের সাথে চুক্তি করে হাসিনা। এই চুক্তির পরই দেশের মানুষ ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছিল। সুন্দরবনে কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র না করার দাবিতে লংমার্চও করেছিল কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন।
এছাড়া, বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সেমিনারে বিশিষ্টজনেরা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে বলেছিলেন যে, বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনের কাছে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হলে হুমকির মুখে পড়বে উপকূলীয় দুর্যোগের প্রাকৃতিক ঢাল সুন্দরবন। এমনকি সুন্দরবন ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে পৃথিবীর বিরল প্রজাতির গাঙ্গেয় ও ইরাবতী ডলফিন হারিয়ে যাবে, মরে যাবে পশুর নদী, বাড়বে খুলনা অঞ্চলের লবণাক্ততা।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করে থাকেন বিপজ্জনক শিল্প হিসেবে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, বিভিন্ন ক্ষুদ্র কণিকা, কার্বন মনো অক্সাইড, মারকারি বা পারদ, আর্সেনিক, সীসা, ক্যাডমিয়ামসহ পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান নির্গত হয়। এসবের পাশাপাশি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের আরেকটি সমস্যা ছাই। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা পুড়ে ছাই হয় এবং কয়লা ধোয়ার পর পানির সঙ্গে মিশে তৈরি হয় আরেকটি বর্জ্য কোল স্লাজ বা স্লারি বা তরল কয়লা বর্জ্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাই এবং স্লারি উভয় বর্জ্যই বিষাক্ত, কারণ এতে বিষাক্ত আর্সেনিক, মার্কারি বা পারদ, ক্রোমিয়াম এমনকি তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম থাকে। তারা নিবিড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের ২৩ ধরনের ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে। এসব ক্ষতির মধ্যে রয়েছে- সুন্দরবনের স্বাভাবিক চরিত্র বিনষ্ট হবে, তৈরি হবে অসংখ্য কয়লাডিপো, শুরু হবে গাছ কাটা, বনে আগুন লাগানো, বাঘ, হরিণ ও কুমির ধরা। কয়লা পোড়া সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ইত্যাদি সুন্দরবনের জৈবিক পরিবেশ ও বায়ুমণ্ডলকে বিঘি্নত করবে। বায়ুমণ্ডলের সালফার ডাই অক্সাইড ও কার্বন যৌগসমূহ থেকে সৃষ্ট গ্রিন হাউস গ্যাস বনের জন্য অতি মারাত্মক ক্ষতিকর অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটাবে এবং তা শুধু সময়ের ব্যাপার।’
কিন্তু কে শুনে কার কথা? ভারত বলেছে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে হবে। শেখ হাসিনা তাই করলেন। কিন্তু হাসিনা কখনো চিন্তা করেননি যে ভারত কেন সুন্দরবনের কাছেই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কথা বলছে। ভারতের আসল উদ্ধেশ্য হল-বাংলাদেশের সুন্দরবনকে শেষ করে দেয়া। অবশেষে ভারতের সেই এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করলেন শেখ হাসিনা।
Discussion about this post