ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন কাজী আনারকলিকে ফিরিয়ে এনেছে সরকার। বাসায় নিষিদ্ধ মাদক মারিজুয়ানা রাখার অভিযোগে ফেরত আনা এই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ জাকার্তায় আনারকলির বাসায় গত মাসের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ অভিযান চালায় ইন্দোনেশিয়া সরকারের মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ওই বাসা থেকে মাদক উদ্ধার করা হয় ও তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে দূতাবাসের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি জানার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাৎক্ষণিক তাকে দেশে ফেরার আদেশ জারি করা হয়।
মারিজুয়ানা-কাণ্ডে জাকার্তার বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন কাজী আনারকলিকে ঢাকায় প্রত্যাহার করে আনার ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক ও বিব্রতকর হিসেবে বর্ণনা করেছেন ফ্যাসিবাদি সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এটা ইনভেস্টিগেট করছি। নিউজটা আমরা দেখেছি, নিউজটা শুধু দেখার বিষয় না, আমরা সেই কর্মকর্তার বিষয় কয়েক দিন আগ থেকেই জানি। আমরা তদন্ত করছি। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর।
প্রকাশিত সংবাদ গুলোতে বলা হয়, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ জাকার্তায় আনারকলির অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালায় ইন্দোনেশিয়া সরকারের মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। এরপর তাকে আটক করা হলেও ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী কূটনৈতিক দায়মুক্তির কারণে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে ইন্দোনেশিয়া সরকারের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে তাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।
তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে এই কূটনীতিকের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, পররাষ্ট্র ক্যাডারের যে হাই স্ট্যান্ডার্ড, এটার সাথে আমরা কখনোই কম্প্রোমাইজ করব না। তদন্তে যদি সে দোষী সাব্যস্ত হয়, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এ বিষয়ে এটুকু বলতে পারি।
কূটনৈতিক দায়মুক্তি থাকলেও আনারকলির বাসায় অভিযান চালানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে, এখানে কোনো ভুল নাই। এবং সেই বাসায় আরেকজন বিদেশি নাগরিক ছিল বলে আমরা শুনেছি। সেক্ষেত্রে পুলিশ যেতে পারে।
তবে আমরা ধন্যবাদ জানাই ইন্দোনেশিয়া সরকারকে, তারা সহযোগিতা করেছেন আমাদের। এবং আমাদের ডিপ্লোম্যাট আমাদের কাস্টডিতে আছেন, আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছেন। এটা আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। তবে আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে পারি, এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। এবং সঠিক পথেই সেটা যাবে।
এ ঘটনায় কোন প্রেক্ষাপটে সরকার ‘বিব্রত’- এমন প্রশ্নে শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের একজন কর্মকর্তা এটার মধ্যে ইনভলভড, এটাকে স্টোরি বলি বা ঘটনা বলি, বা ইনসিডেন্টই বলি, তিনি এটার মধ্যে ইনভলভড।
উল্লেখ্য, গৃহকর্মী নিখোঁজের দায়ে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চাপে কাজী আনারকলিকে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছিল ঢাকা। যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনাকে মানব পাচার হিসেবে সন্দেহ করেছে। মার্কিন সরকারের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে তাকে জাকার্তায় জরুরি পদায়ন করা হয়েছিল এবং ইন্দোনেশিয়ার ভিসা পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।
Discussion about this post