অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্কৎ
বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন একেবারে খাদের কিনারে। প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ মাত্র ৩১ বিলিয়ন ডলার। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বলছে-যেকোনো মুহূর্তে এই রিজার্ভ গভীর খাদে পড়ে যেতে পারে।
বৈদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়াকে অর্থনৈতিক সক্ষমতার দিক দিয়ে বিবেচনা করলে এখনই সতর্ক পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। তারা বলছেন, রিজার্ভ কমে যাওয়া মানে হচ্ছে অর্থনেতিক সক্ষমতা কমে যাওয়া।
তথ্য বলছে, এই ৩১ বিলিয়ন ডলার দিয়ে মাত্র ৩ মাসের কিছু বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। প্রতিমাসে এক্সপোর্ট ও রেমিট্যান্স থেকে যে পরিমাণ আয় আসে, তার থেকে আমদানি ব্যয় অনেক বেশি হয়। আল মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয়ও দিন দিন বাড়ছে। তাই দিন যত যাচ্ছে ততই রিজার্ভ কমছে। অপরদিকে, প্রতিমাসে কমছে রেমিট্যান্সও। সুতরাং পরিস্থিতি দিন দিন চরম খারাপের দিকে যাচ্ছে।
লক্ষণীয় বিষয় হল-এই তিন মাসের রিজার্ভ নিয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত চাপাবাজি করছেন। থামছে না তার খামখোলীপনা। তিনি গণমাধ্যমে বলছেন-৯ মাসের আমদানি ব্যয় আছে। অথচ প্রকৃত হিসাব বলছে-যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে তিন মাস চলবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ এখন ৩,৯৪৯ কোটি ডলার। এখন প্রশ্ন উঠছে, এই ৩৯ বিলিয়ন ডলারের পুরোটাই কি ব্যবহারযোগ্য? কারণ, বিভিন্ন খাতে রিজার্ভ থেকে দেওয়া আছে ৮ বিলিয়ন ডলার, যা চাইলেই সহজে ফেরত পাওয়া যাবে না। সংকট বাড়লে পুরো রিজার্ভও ব্যবহার করা যাবে না।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের অর্থ বিদেশে বিভিন্ন বন্ড, মুদ্রা ও স্বর্ণে বিনিয়োগ করে রেখেছে। আবার রিজার্ভের অর্থে দেশেও তহবিল গঠন করেছে। রিজার্ভ থেকে ৭০০ কোটি ডলার (৭ বিলিয়ন) দিয়ে গঠন করা হয়েছে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল। আবার রিজার্ভের অর্থ দিয়ে গঠন করা হয়েছে লং টার্ম ফান্ড (এলটিএফ), গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ)।
বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে ও সোনালী ব্যাংককে অর্থ দেওয়া হয়েছে। আবার পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতেও রিজার্ভ থেকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। এসব মিলিয়ে ব্যবহার হয়েছে আট বিলিয়ন ডলার। ফলে প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ৩ হাজার ১০০ কোটি (৩১ বিলিয়ন) ডলার।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএমএফ যে প্রশ্ন তুলেছে, এটা যৌক্তিক। রিজার্ভ যতটুকু ব্যবহারযোগ্য, তা–ই বলা উচিত। কারণ, এটা সংকটের সঙ্গী।’ বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেদের হিসাবের জন্য রিজার্ভের হিসাবকে দুই ভাবে করে থাকে। মোট রিজার্ভ ও প্রকৃত রিজার্ভ। আর প্রশ্ন ওঠায় এখন আইএমএফের কাছেও রিজার্ভের দুই ধরনের হিসাব পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শুধু মোট রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করছে, যা ৩ হাজার ৯৪৯ কোটি ডলার। এর মাধ্যমে রিজার্ভকে বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
Discussion about this post