শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফাঁকা বুলিতে সরকারের উন্নয়নের বেলুন ফুটো হয়ে গেছে। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইন তৈরি করে কুইক রেন্টালের নামে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি দেওয়া হয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জ। বিদ্যুৎ সরবরাহ ছাড়াই কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকদের এই টাকা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে। বিদ্যুৎ সরবরাহ ছাড়া ক্যাপাসিটি চার্জের নামে যে টাকা লুটপাট করা হয়েছে, এই টাকা দিয়ে দু’টি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব ছিল। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে শেখ পরিবারের ঘনিষ্ঠ সামিট গ্রুপ। সামিট গ্রুপ তখন প্রাইভেট সেক্টরে বিদ্যুতের চালকের আসন দখল করেছিল। রাষ্ট্রীয় এই টাকা যে লুটেপুটে নিয়েছে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা সেটার প্রমান পাওয়া গেছে সরকারের পক্ষ থেকে রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে।
এই লুটপাটের বিরুদ্ধে যাতে কোন আদালতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে সেজন্য আইন তৈরি করে ইনডেমনিটি দেওয়া হয় কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেনার আগে।
গত এপ্রিল মাসেই শেখ হাসিনার দাম্ভিকতার সাথে ঘোষণা করেছিলেন দেশ বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই। চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্যাপাসিটি রয়েছে দেশে। দেশে চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট, আর উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট। এরকম নানা ফাঁকা বুলি আওড়িয়ে আওয়ামী মন্ত্রীরা দেশের মানুষকে বোকা বানিয়ে ধোঁকা দেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন গত কয়েক বছর ধরে। অথচ, এখন সরকার নিজেই বলছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির কারণে লোডশেডিং হচ্ছে।
প্রচণ্ড গরমে লোডশেডিংয়ে অতীষ্ঠ মানুষ বিক্ষোভে নামতে শুরু করেছে। রবিবার দিবাগত রাতে সিলেটের ওসমানিনগর এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবীতে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভে ২ ঘন্টার বেশি যান চলাচল বন্ধ ছিল ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে।
এদিকে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী মসজিদে এসি বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিকে যুদ্ধাবস্থার সঙ্গে তুলনা করে ফ্যাসিবাদি সরকার প্রধানের এই উপদেষ্টা বলেন, ৮টার পর দোকানপাট বন্ধ থাকবে। কেউ খোলা রাখলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মসজিদে এসি ব্যবহার বন্ধ থাকবে। সরকারি অফিসের সময় কমানো ও সভা অনলাইনে করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সোমবার বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ড. তৌফিক ই ইলাহী বলেন, ডিজেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত রাখা হলো। ফলে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হবে। দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টা কোথাও কোথাও দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হবে। এছাড়া অফিস আওয়ার এগিয়ে আনা, যানবাহনে জ্বালানি সাশ্রয় করতে কর্মকর্তাদের গাড়ি ব্যবহার কমানোর বিষয়ে ভাবছে সরকার। একাধিক কর্মকর্তার জন্য পৃথক গাড়ি ব্যবহার না করে কয়েকজন মিলে একটি গাড়ি ব্যবহার করা যায় কিনা তার সম্ভাব্যতা যাচাই করার বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে । একান্ত অপরিহার্য না হলে সব বৈঠক ভার্চুয়াল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সপ্তাহে একদিন করে দেশের সকল পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা, মার্কেট সপ্তাহে একদিন বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও অন্যান্য জ্বালানী ঘাটতির কারণে।
সূত্র: আমার দেশ
Discussion about this post