শেখ হাসিনার মনোনীত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল তলোয়ারের বিপরীতে রাইফেল নিয়ে দাঁড়ানোর পরামর্শ নিয়েছেন রাজনৈতিক দল গুলোকে।
রোববার (১৭ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথিত সংলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
কিন্তু নির্বাচনের সময় পুলিশ, বিজেপি,আনসার ও সামরিক বাহিনী যখন একযোগে ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখতে ভোট ডাকাতি করবে সেটা কিভাবে সামাল দিবে সেটার কোন নির্দেশনা দিবেন সেটা তিনি বলতে পারেননি। সব দলকে নির্বাচনে নিয়ে আসাই হচ্ছে তাঁর এখন প্রধান এ্যাজেন্ডা। এই এ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই হাবিবুল আওয়ামী বিভিন্ন সময় চটকদার কথা বলে রাজনৈতিক দল গুলোকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।
হাবিবুল আওয়াল রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেছেন, সব দল সহযোগিতা না করলে আমরা সেখানে ব্যর্থ হয়ে যাব। আপনাদের সমন্বিত প্রয়াস থাকবে, কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে। আপনি যদি দৌড় দেন, তাহলে আমি কি করব? কাজেই আমরা সাহায্য করব। পুলিশের উপর, সরকারে উপর আমাদের কমান্ড থাকবে।
তলোয়ার ওয়ালাদের সহযোগিতায় যখন, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি থাকবে তখন কি হবে সেটাও বলেননি হাবিবুল আওয়াল।
সিইসি বলেন, আমরা সহিংসতা বন্ধ করতে পারব না। আপনাদেরও (রাজনৈতিক দলের) দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ খেলোয়াড় কিন্তু আপনারা। আপনারা মাঠে খেলবেন, আমরা রেফারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা আছে। ক্ষমতা কিন্তু কম না, ক্ষমতা প্রয়োগ করব।
২০১৪ এবং ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের অনিয়মের বিষয়ে পরোক্ষ স্বীকারোক্তি দিয়ে ফ্যাসিবাদি সরকারের পুরস্কৃত সাবেক এই আমলা বলেন, আমি আপনাদের স্পষ্ট করে জানাতে চাচ্ছি যে ১৪ সালের এবং ১৮ সালের নির্বাচনের দায় আমাদের উপর চাপাবেন না। আমাদের নির্বাচনের দায় আমরা বহন করব। নির্বাচনটাকে অংশগ্রহণমূলক করতে আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করব নিরপেক্ষ করতে। সবদল সহযোগিতা না করলে আমরা সেখানে ব্যর্থ হয়ে যাব।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের পাল্টায় এনডিএম–এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, শর্ট গান নিয়ে দাঁড়ানো বিষয়টি আইন সমর্থন করে না। তবে এর জবাবে সিইসি আর কোনো মন্তব্য করেননি।
ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠাকারী শেখ হাসিনার পক্ষে ইনিয়ে বিনিয়ে সাফাই গেয়ে হাবিবুল আওয়াল বলেন, নির্বাচনের সময় যেটি থাকবে সেটি কিন্তু সরকার। আমি বারবার বলেছি, রাজনৈতিক দল আর সরকার এক নয়। প্রধানমন্ত্রী উনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। কিন্তু যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী কখন তিনি সরকার প্রধান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নয়। এটি বুঝতে হবে। আমরা সরকারের সাহায্য চাইব। সরকার যদি সহায়তা না করে, তাহলে নির্বাচনের পরিণতি খুবই ভয়াবহ হতে পারে।
কিন্তু ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটচুরির সময়ও যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন সেটাই বিষয়টা হাবিবুল আওয়াল উল্লেখ করেননি। তখন কি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে ভোটচুরির আয়োজনে নেতৃত্ব দেন নাই!
সংলাপ শুরুর আগে স্বাগত বক্তব্যে সিইসি বলেন, ইতোপূর্বে আমরা বহুবার বলেছি, যে সকল রাজনৈতিক দল বিশেষত প্রধানতম দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়া খুবই প্রয়োজন। কোনো দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অবশ্যই বাধ্য করতে পারব না। তবে সকল দলকে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে আমরা বারবার আহ্বান করে যাব। সে প্রচেষ্টা আমরা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, আজকেও আপনাদের মাধ্যমে সকল দলকে আহ্বান জানাচ্ছি সক্রিয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা না থাকলে জনমতের সঠিক প্রতিফলন হয় না। পক্ষ-প্রতিপক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাঠ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সম্ভাব্য অনিয়ম, কারচুপি, দুর্নীতি, অর্থ শক্তির বৈভব ও পেশি শক্তির প্রয়োগ ও প্রভাব বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। নির্বাচন কমিশন সকলের অংশগ্রহণ, সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করতে চায়। অন্যথায় অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমাদের প্রয়াস যতই আন্তরিক হোক, ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। সেটা কাম্য নয়।
সিইসি আরও বলেন, বাংলাদেশ সাংবিধানিকভাবে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। একটি মাত্র দল ৩০০টি আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে সাংবিধানিকভাবে কোনো বাধা নেই। তবে ইতিহাস বলে সেক্ষেত্রে অচিরেই গণতন্ত্রের অপমৃত্যু হবে। স্বৈরতন্ত্র মাথা জাগিয়ে তুলবে। গণতন্ত্রের আরাধ্য পুনরুদ্ধার হয়ে পড়বে দুরূহ।
ইভিএম-এর পক্ষেও সাফাই গান শেখ হাসিনা কর্তৃক পুরস্কৃত সাবেক এই অমলা। তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে পাঁচ-সাতটি কর্মশালা করার পর আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এবং বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত সভা করেছি। কেউ কোনো ত্রুটি দেখাতে পারেনি। ইভিএম এবং ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনে তুলনামূলক সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আরপিও ২৬ অনুযায়ী, কারচুপির বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো প্রতিপালন করা হলে কারচুপি প্রতিরোধ করা সম্ভব বলেও জানান সিইসি।
ইভিএম-এর বিরুদ্ধে পাল্টা যুক্তি ও প্রচারণাকে অপপ্রচার আখ্যায়িত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, এতো কিছুর পরেও অপপ্রচার সমানে চলছে, ইভিএম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আমরা সত্যি উদ্বিগ্ন হচ্ছি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনিয়ম, সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাই হলে প্রতিরোধ কতটা সম্ভব হবে। আমাদের প্রত্যাশা জাতীয় নেতৃবৃন্দ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে নিবিড়ভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা ও মতৈক্য হয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর নিরসন করে আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য অনুকূল পরিবেশ ও সমতল ভিত্তি সৃষ্টি করবেন।
সিইসি বলেন, অরাজনৈতিক সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিগন সংগঠিত হয়ে এগিয়ে আসতে পারেন। তারা জাতির একটি সংকটময় মূহুর্তে তাদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞান প্রয়োগ করে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সংলাপে আহ্বান জানাতে পারেন। আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক মতৈক্য সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারেন। আমরা নির্বাচন করতে চাই অনুকূল পরিবেশ ও শক্ত ভিত্তির ওপর। এ জন্য সকলের সহায়তা কাম্য।
সূত্র: আমার দেশ
Discussion about this post