অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত ১৭ মে ২০২২ তারিখে জোহরের নামাজের পর সিলেটের বন্দরবাজারের আবু তুরাব জামে মসজিদের সামনে থেকে জামায়াতের ইসলামীর নেতা কর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। কথিত গণকমিশন কর্তৃক ধর্মব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে ১১৬ জন আলেমের তালিকা প্রকাশের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ মিছিল বেরা করা হয়। মিছিলটি ছিল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ। যা মিছিল শুরু হওয়ার পরের ছবি দেখলে বুঝা যায়।
মিছিল শুরু হওয়ার পর কোনো কারণ ছাড়াই একদল সাদাপোষাকের পুলিশ সাথে নিয়ে মিছিলের পেছন থেকে হামলা চালায় সিলেট কোতোয়ালী থানা পুলিশ। এ হামলায় নেতৃত্ব দেন কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ। মিছিলের পেছন থেকে হামলার সময় ওসি আলী মাহমুদ নিজেও সাদা পোষাকে ছিলেন। যা নিচের ছবিতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
এরপর তিনি একজন শিবির কর্মীকে আটক করতে সক্ষম হন। এবং ফুটপাথের উপরেই শিবির কর্মী সামির উপর অমানবিক নির্যাতন করেন।
শিবির কর্মীর উপর অমানবিক নির্যাতন চালানোর পর তাকে পোষাকধারী পুলিশ সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেন তিনি।
এরপর পোষাকধারী পুলিশ সদস্যরাও ওই শিবির কর্মীর ওপর চালায় অমানবিক নির্যাতন।
এভাবে জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মিছিল ছত্রভঙ্গ করে গ্রেফতার করা হয় আরও এক জামায়াত কর্মীকে। তার নাম ফিরদাউস।
শিবির কর্মী সামির ও জামায়াত কর্মী ফিরদাউসকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হলে তাদের উদ্ধার করতে তৎপর হয়ে ওঠে তাদের সহযোদ্ধা রাজনৈতিক কর্মীরা।
তাদের দিকে মুহুর্মুহু রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পুলিশ সদস্যরা।
জামায়াত-শিবির কর্মীরা পুলিশের হামলার এক পর্যায়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে শুরু হয় নাটকের মঞ্চ সজ্জার কাজ। যাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন মিছিলে হামলায় অংশগ্রহণকারী আরেক পুলিশ সদস্য। তিনি বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ নিশু লাল দে। ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ এর মতই সাদা পোষাকে হামলা করেন জামায়াতে ইসলামীর শান্তিপূর্ণ মিছিলে। জামায়াত কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে ডিসি (উত্তর) আজবাহার আলীর নির্দেশে নিজেই পুলিশের একটি ইয়ামাহা-এফ জেড মডেলের মোটরসাইকেল ভাংচুর করেন।
ছবিতে মোটরসাইকেল ভাংচুরকারী সাদা পোষাকের পুলিশ নিশু লাল দে’র পরিহিত টি-শার্ট, প্যান্ট, বাঁ-হাতে পরিহিত স্মার্ট ঘড়ি ও জুতার দিকে ভালোভাবে দৃষ্টি রাখলেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। এসময় তাকে শিবিরকর্মীদের মত প্যান্ট ভাঁজ করে টাখনু গিরার উপরে উঠিয়ে রাখতে দেখা যায়।
বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ নিশু লাল দে মোটরসাইকেল ভাংচুর করতে গিয়ে অথবা কোনো জামায়াত কর্মীকে আটক করতে গিয়ে বাঁ হাতের কবজিতে হয়তো সামান্য চোট পেয়েছেন। যা পরবর্তীতে পুলিশের উপর জামায়াত কর্মীদের হামলা বলে নাটক সাজানো হয়েছে। এখানে লক্ষ্য করে দেখুন মোটরসাইকেল ভাংচুরকারীর টি-শার্ট, প্যান্ট, টাখনু গিরার কাছে প্যান্টের ভাঁজ এবং হাতের স্মার্ট ঘড়ি ঠিক আছে কিনা?
এ দেখুন তো জামায়াতের শান্তিপূর্ণ মিছিলে সাদা পোষাকে হামলাকারী সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ আলী মাহমুদ ও বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ নিশু লাল দে গংদের চিনতে পারছেন কিনা? হুম, মিছিলে সশস্ত্র হামলা করে তারাই আবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে এসেছেন। এবং দালাল মিডিয়াগুলোর সামনে ফটো সেশন করেছেন। এবং তাদের এই খবর ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছেন যেন তারা তাদের পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে এই খবর প্রচার করেন যে, ‘সিলেটে জামায়াত-শিবিরের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা, ওসিসহ আহত ২।’ কিংবা ‘সিলেটে শিবিরের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর হামলা, আটক ২।’
এবার এই শিরোনামগুলো লিখে গুগলে সার্চ দিয়ে নিজেই চমক দেখুন। আমাদের দেশের সাংবাদিক ও গণমাধ্যমগুলো জামায়াতে ই্সলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে কিভাবে তথ্যসন্ত্রাস চালায় তার জ্বলন্ত উদাহরণ নিজেই দেখতে পাবেন।
এবার একটু কষ্ট করে এখানে সংযুক্ত দ্বিতীয় ছবিতে ফিরে যান। লক্ষ্য করুন, জামায়াতের মিছিলে সাদা পোষাকে কোতোয়ালী থানার ওসি যখন হামলা করেন তখন পুলিশের সাদা মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশেই উল্টো দিকে মুখ করে দাঁড় করানো ছিল। যার পেছনের অংশ ছবিতে দৃশ্যমান। জামায়াতের মিছিল ওই মোটরসাইকেল অতিক্রম করলেও কেউই সেটি স্পর্শও করেনি। অথচ, ৮ম ছবিতে দেখুন সাদা পোষাকের পুলিশ নিশু লাল দে টাখনুর উপরে প্যান্ট পরে এসে মোটরসাইকেলটি ভাংচুর করে কিভাবে তার অভিযোগ জামায়াত নেতা-কর্মীদের উপর চাপিয়ে দিল! কিভাবে মিছিলে পুলিশ হামলা করে উল্টো জামায়াত শিবির নেতা-কর্মীরা পুলিশের উপর হামলা করেছে বলে চালিয়ে দিল!
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হতে যাওয়ার পর পরই তোলা হয় এই ছবি। দেখুন তো ওসি আলী মাহমুদ, ফাঁড়ি ইনচার্জ নিশু লাল দে কিংবা তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের সহাস্য বদন দেখে কি প্রমাণিত হয় না যে, এখানে মূলত আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে নয় বরং প্রতিবাদী জামায়াত কর্মীদের ফাঁসাতে নেপথ্যে কারও ইশারায় তারা একটি নাটক মঞ্চস্থ করতে এখানে এসেছেন?
Discussion about this post