অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে কয়টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে অন্যতম হল সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পার হলেও তদন্তকারী সংস্থা আজ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে পারেনি।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে অনেক হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছে। শেখ হাসিনা তার বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচারের করেছে। কথিত যুদ্ধাপরাধের বায়ুবীয় অভিযোগ তুলে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদেরকে বিচারের নামে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। অথচ সাগর-রুনি হত্যার তদন্তটাও আজ পর্যন্ত করেনি সরকার।
কি কারণে শেখ হাসিনা সাগর-রুনি হত্যার বিচার করছে না? কেন তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে তদন্ত কাজে বাধা দেয়া হচ্ছে? এই বিচার নিয়ে শেখ হাসিনা এত টালবাহানা করছে কেন? এসবের পেছনে মূল কারণ কি?
জানা গেছে সময় নেয়ায় সেঞ্চুরিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ তদন্ত এখন আর দেশে নেই। ঝুলে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকে কবে ফরেনসিক ও ডিএনএ প্রতিবেদন আসবে তা কেউ বলতে পারছেন না।
এই মামলার যেহেতু কোনো চার্জশিট হয়নি তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পিপিও নিয়োগ দেয়া হয়নি। আদালতে মামলাটি দেখছেন জেনারেল রেকর্ড অফিসার (জিআরও)। মামলার তদন্তকারী যেমন বদলি হয় তেমনি জিআরও বদলি হয় বারবার। তদন্তকারীরাও আদালতে যান না। জিআরও সময় চেয়ে একটি মুখস্থ আবেদন করেন । আর নতুন সময় ধার্য হয়ে যায়। তারিখের পর তারিখ বাড়ে।
এখন এই মামলার জিআরও হলেন, সাব ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দিন। তিনি জানান,”আমার কাছে যে মামলাগুলো আছে তার মধ্যে এই মামলাটিতেই সবচেয়ে বেশি সময় নেয়া হচ্ছে। আর কোনো মামলায় ৮৫ বার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় চাওয়া হয়েছে বলে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমার অভিজ্ঞতায়ও এরকম ৮৫ বারেও তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারার ঘটনা দেখিনি। ফৌজদারি মামলায় আমার অভিজ্ঞতায় এত সময় লাগে বলে আমি আর দেখিনি। হয়তো মামলাটা সেনসেটিভ তাই এত সময় লাগছে।”
গত বছরের ২৪ জানুয়ারি ছিলো এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার ৮৫ তম তারিখ। জমা না দেয়ায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট তরিকুল ইসলামের আদালত মামলার পরবর্তী প্রতিবেদন দেয়ার সময় ধার্য করে ২৩ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন র্যাবের কোনো কর্মকর্তা আদালতে জাননি । জিআরওর মাধ্যমে সময় চেয়ে আবেদন করেন।
র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা এখন আর সাগর-রুনি হত্যা মামলা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে কথা বলেন না। তাই মামলাটির তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কেও তেমন কিছু জানা যায়নি।
রুনির ভাই নওশের রোমান জানান,”আমাদের সাথে এখন আর এই মামলা নিয়ে র্যাবের কেউ যোগাযোগ করেন না। গত বছর এইদিনে তারা একবার যোগাযোগ করেছিলেন। এবার তাও করেননি। এখন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কে তাও আমরা জানি না।”
মূলত এখন মামলাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফরেনসিক ও ডিএনএ টেস্টের নামে ঝুলে আছে। ছয় বছর আগে সেখানকার দুইটি বেসরকারি ল্যাবে এই টেস্টের জন্য নমুনা পাঠানো হয় ।
র্যাবের সহকারী পরিচালক( মিডিয়া) এএসপি এ এন এম ইমরান খান বলেন,”আমরা এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিএনএ এবং ফরেনসিক প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি। কবে পাব বলতে পারছি না। সে কারণেই আমরা তদন্ত শেষ করতে পারছি না। আমাদের তদন্ত এখনো চলছে।”
তাই পুরো বিষয়টিই এখনো অনিশ্চিত। সামনের তারিখে কেন, আরো কত তারিখ পর র্যাব প্রতিবেদন দিতে পারবে তার কোনো নিশ্চয়তা নাই। কারণ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ছয় বছরে প্রতিবেদন আসেনি। কবে আসবে তাও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি) আব্দুল্লাহ আবু বলেন,”সাগর-রুনির মামলায় অন্যান্য মামলার চেয়ে সময় বেশি লাগছে। সাধারণভাবে এত বেশি সময় লাগতে আমি দেখিনি। সাদা চোখে দেখলে এটাকে অস্বাভাবিকই মনে হবে। তবে আমি যতদূর জানি মামলাটির গভীর তদন্ত হচ্ছে। মামলা ডিটেক্ট না হলে তো প্রতিবেদন দিতে পারবেন না তদন্তকারীরা। তাই তারা সময় নিচ্ছেন। আর এটা সাংবাদিক দম্পতি হত্যা মামলা। অনেক সেনসেটিভ। তাই হয়তো তারা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে প্রতিবেদন দেবেন।”
আর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ আহমেদ গাজী বলেন,”আমার আইন পেশা জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় বলছি কোনো হত্যা মামলায় ৮৫ বারেও তদন্তকারীদের প্রতিবেদন না দিতে পারার ঘটনা নজীরবিহীন। আমি এরকম আর দেখিনি। এখানে তদন্তকারীদের অবহেলা স্পষ্ট। মামলার মেরিট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
তিনি আরো জানান,”সাগর-রুনি মামলায় এখন তদন্তকারীরা আদালতে আসেন না। জিআরও আবেদন করে নতুন তারিখ নেন। সময় বাড়ানোর আবেদনে কোনো কারণও উল্লেখ থাকে না। আবার কখনো কখনো আবেদনও করা হয় না। আদালত কাউকে না পেয়ে নতুন তারিখ দিয়ে দেন।”
একাধিক সূত্র বলছে, সরাসরি শেখ হাসিনা ও তার ছেলে জয়ের নির্দেশে তদন্তকারী সংস্থাগুলো সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে না। এই মামলার তদন্ত কাজ এখন পুরোপুরি বন্ধ আছে। তদন্তকারী টিমের সদস্যরা চাইলেও অগ্রসর হতে পারছে না।
জানা গেছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের সাথে শেখ হাসিনা ও তার ছেলে জয় জড়িত। তাদের প্রত্যক্ষ নির্দেশেই সাগর-রুনিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।
সূত্রে জানায়, সামিট গ্রুপের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাত থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শেখ হাসিনার পরিবার। লুটপাটের সব তথ্য সংগ্রহ করেছিল সাংবাদিক সাগর-রুনি। এই তথ্য প্রকাশ হলে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ইমেজ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হত। মূলত-হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি চাপা দিতেই তারা পরিকল্পিতভাবে সাগর-রুনিকে হত্যা করে। শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কারণেই তদন্তকারী সংস্থা কোনো তদন্ত করতে পারছে না।
Discussion about this post