অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে দ্বিতীয় স্ত্রীসহ অবরুদ্ধ করে রেখে লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। এই ঘটনায় প্রতিবাদে সোনারগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভও করেছে হেফাজত ইসলাম।
জানা যায়, মাওলানা মামুনুল হক শনিবার বেলা ৩টায় দ্বিতীয় স্ত্রী আমিনা তাইয়েবাকে নিয়ে সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর দেখতে যান। জাদুঘর বন্ধ থাকায় তিনি সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর রুমে উঠেন স্ত্রীকে নিয়ে। এর আগে এ খবর পেয়ে স্থানীয় যুবলীগ-ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীরা ওত পেতে বসে থাকে। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টায় দলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে রিসোর্টের ভেতর গিয়ে স্ত্রীসহ মামুনুল হককে সেখানে অবরুদ্ধ করে। বিভিন্ন প্রশ্ন করে ও শারীরিক ভাবে হেনস্তা করে।
এই ঘটনার মদদ দিয়েছিলো সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সোহাগ রনি, পৌরসভা ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান রবীন। উদ্দেশ্য মূলক ভাবে ফেসবুকসহ স্থানীয় বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালের পেজ থেকে লাইভ করে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, হেফাজত নেতা মামুনুল হক বলছেন, আমি আল্লাহ পাকের শপথ করে বলছি, এটা আমার বিবাহিতা স্ত্রী। তার পরেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাকে বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
এ দিকে খবর পেয়ে সোনারগাঁও উপজেলা প্রশাসনের ইউএনও মো: আতিকুল ইসলাম, এসিল্যান্ড গোলাম মোস্তফা মুন্না এবং সোনারগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) তবিদুর রহমানসহ কয়েকজন পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। মামুনুলল হককে গ্রেফতার করে বিভিন্ন রকম জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। এসময় হেফাজতের নেতাকর্মীরা রিসোর্টে এসে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর মামুনুল হককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এলাকায় বিক্ষোভ করে।
এ সময় রিসোর্টের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সোনারগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম, এসিল্যান্ড গোলাম মোস্তফা মুন্না, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টি আই মোশাররফ হোসেন, সোনারগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) তবিদুর রহমানসহ এবং সাংবাদিকরা। হেফাজতের লোকজনের আসার খবরে পালিয়ে যায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান জানান, হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হক তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টে এসেছিলেন। যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদেরকে লাঞ্ছিত করে। ধস্তাধস্তিতে মামুনুল হকের পরনে থাকা জামাটিও ছিঁড়ে গেছে।
মামুনুল হক বলেন, আমি আমার ২য় স্ত্রীকে নিয়ে সোনারগাঁওয়ে বেড়াতে আসি। সোনারগাঁও জাদুঘরে গিয়ে জাদুঘর বন্ধ থাকায় আমি বেলা ৩টায় সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্টে এসে অবস্থান নেই। পরে এলাকার যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন আমার সাথে খারাপ আচরণ করে। তারা আমাদেরকে হেনস্তা করে একপর্যায়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন ও পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মুক্ত হয়ে মামুনুল হক তৌহিদি জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ভালোবাসার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। সাংবাদিক ও পুলিশ আমার সাথে কোনো খারাপ আচরণ করেনি। কিছু বাইরের লোক খারাপ আচরণ করেছে।
এদিকে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। শনিবার এক বিবৃতিতে এই কথা বলেন।
বিবৃতিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হকের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মাওলানা মামুনুল হকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকারদলীয় ক্যাডার বাহিনী তাকে হেনস্তা করেছে। এ ধরনের আচরণ দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর। মামুনুল হকের সাথে অশোভন আচরণকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। নেতৃদ্বয় বলেন, হামলা মামলা করে মামুনুল হকের আওয়াজকে বন্ধ করা যাবে না। এ ধরনের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এর দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
Discussion about this post