অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক সময়ের বডিগার্ড, রাজধানীর পুরান ঢাকার ত্রাস হিসেবে খ্যাত দখলদার ও দুর্নীতিবাজ অবৈধ এমপি হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।
সাজার বিরুদ্ধে হাজী সেলিমের আপিল আবেদন খারিজ করে মঙ্গলবার বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে আত্মসমর্পণও করতে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হাসিনার এক সময়ের দেহরক্ষী হাজী সেলিম কি আসলেই আত্মসমর্পণ করবেন? নাকি আবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন নেবে? কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুলেছেন হাজী সেলিমের এমপি পদ কী আসলেই বাতিল হবে? নাকি সেনা প্রধানের দুই ভাইয়ের মতো সরকার হাজী সেলিমকেও প্রতিবন্ধী বানিয়ে সাজা মাফ করে দেবে।
দেখা গেছে, এর আগে ক্ষমতার দাপটে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরেও হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে দুইবার সংসদ নির্বাচন করেছেন। যেখানে অন্য দলের কোনো প্রার্থী সামান্য ঋণ খেলাপি হলেই তার প্রার্থীতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। আর হাজী সেলিম সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও তার জামিনের ব্যবস্থা করে তাকে প্রার্থী করেছেন শেখ হাসিনা।
এছাড়া গত কয়েক মাস আগে হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধর করার পর র্যাব তাকে গ্রেফতার করে। র্যাব কর্মকর্তারা তার বাসায় অভিযান চালিয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্রও দেশি-বিদেশি মদ উদ্ধার করলেও পুলিশ তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছে, ইরফানের বাসায় কোনো অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তাকে ফাঁসানোর জন্য অন্য কেউ অস্ত্র ও মদ তার বাসায় এনে রেখেছিল। তাই অস্ত্র ও মদ উদ্ধারের মামলা থেকে ইরফান সেলিমকে অব্যাহতি দিয়েছে পুলিশ।
কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্নকথা। দেখা গেছে সেলিমের বাসা থেকে অস্ত্র আর মদ তো উদ্ধার করেছিল র্যাব। সে সময়ের পত্রিকার পাতা জুড়ে তখন সেলিম পুত্রের বাড়ির এলাহি কাণ্ড। সে সময় র্যাবের অভিযানে শুধু অবৈধ অস্ত্র ও ব্রান্ডের মদ নয় পওয়া যায় বিদেশি মদের বোতল, বিয়ার ও বিপুল পরিমাণ ওয়াকিটকি এবং ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসও। যেসবের মাধ্যমে সে এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো।
অনুসন্ধান বলছে সরকারের উপর মহলের নির্দেশে পুলিশ তাদের তদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তন করা হয়েছে। সে জন্য পুলিশ মহলে মোটা অংকের টাকাও ঢেলেছেন সেলিম পরিবার। শুধু তাই নয় তার এই চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে জমি দখলের এসব ভাগবাটোয়ারার টাকা পৌঁছায় উপরমহল পর্যন্ত।
সচেতন মহল বলছেন-আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী হাজী সেলিম আত্মসমর্পণ করার পর উচ্চ আদালত তাকে জামিন দিয়ে দিবে। শেখ হাসিনা কোনোভাবেই হাজী সেলিমের এমপি পদ বাতিল হতে দিবে না। দুর্নীতির দায়ে হাজী সেলিমের এমপি পদ বাতিল হলে হাসিনার ইমেজ ক্ষুন্ন হবে। হাসিনা তার ইমেজ ক্ষুন্ন হতে দিবে না। দরকার হলে আদালতকে বলে দিবে হাজী সেলিমকে জামিন দেয়ার জন্য। আর হাজী সেলিম সুপ্রিম কোর্টে গেলেও সরকারের নির্দেশে হাজী সেলিমকে সাজা থেকে অব্যাহতিও দিতে পারে আদালত।
Discussion about this post