অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিনাভোটে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ১২ বছরে শেখ হাসিনার সরকার যেমন গুম, খুন, ধর্ষণ, লুটপাটসহ বিভিন্ন নৈরাজ্যে রেকর্ড গড়েছে তেমনি তার পরম বন্ধু ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গত এক যুগে সবচেয়ে বেশি নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করেছে। শুধু তাই নয় গত এক দশকে চলতি বছরে সবচেয়ে বেশি মানুষ হত্যা করেও নতুন রেকর্ড গড়েছে।
চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৪৫ জন বাংলাদেশীকে সীমান্তে হত্যার মাধ্যমে নূতন রেকর্ড স্পর্শ করেছে বিএসএফ। ভারতের প্রতি নতজানু ফ্যাসিবাদি সরকার এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ তো করেই নাই, বরং ভারতের পক্ষেই সাফাই গেয়ে চলেছে। সরকারের মন্ত্রী ও সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিজিবি মহাপরিচালিক উল্টা বাংলাদেশের নাগরিকদেরই দোষারোপ করে চলেছেন। ফ্যাসিবাদি সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অন্য মন্ত্রীরা ইন্ডিয়ার সাথে সম্পর্কের উন্নয়নের উচ্চতা নিয়ে বড়াই করছেন হরহামেশা।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গত ১২ বছরে ৪৪৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ২০১০ সালের পর থেকে সীমান্ত হত্যা কমতে শুরু করেছিল। পরে সেটি আবার বাড়তে শুরু করে। ২০১৯ সালে বিএসএফের গুলি বা নির্যাতনে সর্বাধিক ৪৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০০৯ সালে সীমান্ত হত্যার সংখ্যা ছিল ৬৬, ২০১০ সালে ৫৫, ২০১১ সালে ৩১, ২০১২ সালে ৩৮, ২০১৩ সালে ২৯, ২০১৪ সালে ৩৫, ২০১৫ সালে ৪৪, ২০১৬ সালে ২৯, ২০১৭ সালে ২৫, ২০১৮ সালে ১১, ২০১৯ সালে ৪১ সবশেষে ২০২০ সালে ৪৫ জন সীমান্ত হত্যার শিকার হন।
তবে সরকারের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (এএসকে) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ২৬, ২০১৪ সালে ৩৩, ২০১৫ সালে ৪৬, ২০১৬ সালে ৩১, ২০১৭ সালে ২৪, ২০১৮ সালে ১৪ এবং ২০১৯ সালে ৪৩টি সীমান্ত হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
দেখাগেছে, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বিএসএফ সীমান্তে গুলি করে হত্যার পর কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশী কিশোরী ফেলানীর লাশ। সেই বর্বর দৃশ্য আজও দেশের মানুষকে ব্যথিত করে। সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ভারতের সাজানো বিচারে বিএসএফের হত্যাকারীরা সব বেকসুর খালাস পেয়েছে। সীমান্ত এলাকাগুলোতে বাংলাদশীদের নিয়মিত হত্যা করেই চলেছে বিএসএফ।
সীমান্তে হিন্দুত্ববাদী বিএসএফের এমন বর্বর আচরণের কড়া প্রতিবাদ কখনো বাংলাদেশের তরফ থেকে করা হয়নি। বরং বিভিন্ন সময় বিএসএফের সাফাই গেয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে বর্ডার গার্ড (বিজিবি) এর প্রধান।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কমপক্ষে ১,১৮৫ বাংলাদেশিকে গুলি বা নির্যাতন করে হত্যা করেছে বিএসএফ। এরমধ্যে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১ ডিসেম্বরের মধ্যে, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কমপক্ষে ৪৫ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি বা নির্যাতন করে হত্যা করেছে বিএসএফ।
অন্যদিকে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিএসএফের হত্যাযজ্ঞের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যেবছর (২০১১ সালে) কিশোরী ফেলানীকে হত্যার পর কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রেখেছিলো বিএসএফ, সেই বছর তাদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হন নিরীহ ৩১ জন বাংলাদেশী। ফেলানীকে হত্যার পর বাংলাদেশের মানুষ ফুঁসে উঠলে আরো কর্তৃত্ববাদী আচরণ দেখায় ভারত। বাংলাদেশের মানুষের ক্রোধকে তোয়াক্কা না করে পরের বছর (২০১২ সালে) গুলি করে হত্যা করা হয় ৩৮ জন বাংলাদেশীকে। আওয়ামী লীগের গোলামী আচরণের কারণে বছরের পর বছর এমন বেপরোয়া আচরণ করে আসছে হিন্দুত্ববাদী ভারত।
২০১৩ সালে অবশ্য সীমান্তে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমে আসে। সেই বছর বিএসএফের গুলিতে মারা যান ২৯ জন বাংলাদেশী। এর পরের বছর (২০১৪ সালে) ফের হিংস্র দানবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় বিএসএফ। তাদের গুলিতে প্রাণ হারান ৩৫ জন বাংলাদেশী। ২০১৫ সালে বিএসএফ সীমান্তে খুনের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দেয়। সীমান্তে ৪৪ জন বাংলাদেশীকে গুলি করে উল্লাস করে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বন্ধু ভারতের খুনী সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
২০১৬ সালে ২৯ জন বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করে তারা। এ সংখ্যা কিছুটা কমে আসে ২০১৭ সালে। সে বছর বিএসএফের গুলিতে প্রাণ হারান ২৫ জন।
প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাবকে ব্যবহার করে যে বছর মধ্যরাতে ভোট ডাকাতি করেছিল শেখ হাসিনার সরকার, সেই বছর অবশ্য রহস্যজনক কারণে সীমান্তে খুনের মাত্রা কমিয়ে আনে ভারত। পরমবন্ধু শেখ হাসিনাকে গদিতে রাখতেই সম্ভবত সেই বছর (২০১৮ সালে) সীমান্তে কম খুন-খারাবি করে বিএসএফ। শেখ হাসিনার মুখ রক্ষা করতে ২০১৮ সালে অনেক সংযত ছিলো ভারতীয় এই বাহিনী। ভোট ডাকাতির বছর বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে প্রাণ হারান ১১ জন বাংলাদেশী।
ভোট ডাকাতির পরের বছর (২০১৯ সালে) সীমান্তে ফের নিজেদের দানবীয় রূপ দেখায় বিএসএফ। তাদের গুলিতে নিরীহ ৪৩জন বাংলাদেশীর রক্তে রঞ্জিত হয় সীমান্ত এলাকা।
করোনা মহামারীর বছরেই সীমান্ত হত্যার রেকর্ড ভেঙেছে বিএসএফ
শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর বছরে ভারত তাদের কর্তৃত্ববাদী আচরণ দেখাতে সীমান্ত এলাকায় (১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত) ৪৫ জনকে হত্যা করে। বাংলাদেশের বিজয় দিবসেও সীমান্ত এলাকা রক্তে রঞ্জিত হয় এক বাংলাদেশী তরুণের তাজা রক্তে।
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী তরুণের মৃত্যুর পরদিনই গুজরাটের কসাই বলে পরিচিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ভার্চুয়াল সম্মেলনে যোগ দেন শেখ হাসিনা। এই বৈঠককে ‘বন্ধনের সোনালি অধ্যায়’ বলেও অভিহিত করেন হিন্দুত্ববাদী মোদীর বন্ধু শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ নেত্রীর সাথে বৈঠকের আগের দিন সীমান্তে বাংলাদেশীকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করার মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ববাদী চরিত্র ইচ্ছাকৃত জাহির করার চেষ্টা করেছে ভারত।
নির্মম সেই হত্যাকাণ্ডের পরদিন ভারতের পক্ষেই নির্লজ্জ সাফাই গান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, ‘সীমান্ত হত্যায় ভারত একতরফাভাবে দায়ী নয়। আমাদের কিছু দুষ্টু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে সীমান্তের ওপারে যায় এবং তাদের কাছে অস্ত্র থাকে। তখন ভারত বাধ্য হয়ে ভয়ে ওদের গুলি করে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের কিছুদিন আগে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছিলেন, ‘ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কাঁটাতারের বেড়া কেটে গরু আনতে গিয়ে ইন্ডিয়ার গুলি খেয়ে মারা যায়, তার জন্য দায়-দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকার নেবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজিবি প্রধান যখন ভারতের প্রতি নতজানু আচরণ দেখান, তখন আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে বিএসএফ। অতীতে এর খেসারত বিভিন্নভাবে দিয়েছে বাংলাদেশে। চলতি বছরের ১০ই নভেম্বর র্যা বের দুই সদস্যকে চড়, ঘুষি ও লাথি মেরে এবং পরে জামাকাপড় ছিঁড়ে টেনে ভারতে নিয়ে যায় বিএসএফ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মারধর খাওয়া র্যা ব সদস্যদের ছবিও প্রকাশ হয়েছিল। বিএসএফ সদস্য কর্তৃক বাংলাদেশে ফেনসিডিল সহ মাদক পাচারের তথ্য সংগ্রহ করতে সীমান্ত এলাকায় বিজিবির সাথে গিয়েছিলেন র্যাবের সদস্যরা।
সীমান্তের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলামকেও প্রতিবাদের পরিবর্তে বিভিন্ন সময় নজতানু ভূমিকায় দেখা গেছে। বাংলাদেশীদের হত্যার প্রতিবাদ বা দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে অবস্থান নেয়া তো দূরের কথা ভারতের পক্ষেই সাফাই গাইতে শোনা গেছে তাঁকে।
“সন্ত্রাসীরা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। সে কারণে বিএসএফ-এর গুলিতে বাংলাদেশী হত্যার ঘটনা ঘটছে”- অতীতে এমন বক্তব্য দিয়ে বিএসএফের খুনের বৈধতা দিয়েছিলেন বিজিবি প্রধান।
সম্প্রতি রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরে বিজিবি ও বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন শেষে বিএসএফ এর মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা সাংবাদিকদের কাছে বলেন যে, সীমান্তে পরিস্থিতি চরমে পৌঁছলে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে তাদের।
অপরদিকে বিজিবি কর্তৃক সরাসরি গুলি করার অনুমোদন নেই বলে জানা গেছে। বিজিবি অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বা আক্রান্ত হলেও ওপরের অনুমতি ছাড়া গুলি ছুঁড়তে মানা। গুলি ছুঁড়তে হলে ওপর মহলের অনুমতি নিতে হয় বিজিবিকে। ফলে বিএসএফ-এর আগ্রাসন প্রতিরোধের পরিবর্তে বিজিবিকে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যায় তাদের সহযোগিরূপে দেখা যাচ্ছে।
শূন্য মৃত্যুর প্রতিশ্রুতির পরও চলতে থাকে হত্যা
ভারত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সীমান্তের মৃত্যু শূন্যে আনার বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছিল, কিন্তু সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার। তবে বিএসএফের প্রতিশ্রুতির সাথে বাস্তবতা ভিন্ন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, তারা সীমান্ত হত্যা হ্রাসে ব্যবস্থা নেবেন।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও বিএসএফের মহাপরিচালকরা ঢাকায় চার দিনের সম্মেলনে বৈঠক করেন যেখানে তারা সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি, হত্যা ও আহত করা এবং মাদক পাচারের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তারপরও একের পর এক চলতেই থাকে অমানবিক হত্যাকাণ্ড।
সর্বশেষ, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় জাহিদুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি যুবককে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ।
এর আগে ১০ ডিসেম্বর একই ইউনিয়নের সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে আবু তালেব নামে ৩২ বছর বয়সী আরেক বাংলাদেশি মারা যান।
মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, করোনাভাইরাস সঙ্কটের সময়েও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও সীমান্তে সেসব অস্ত্রের ব্যবহার অব্যাহত ছিল।
তিনি বলেন, “সীমান্তে নিহত হওয়া কোনও লোককে কোনও অস্ত্র বা বিস্ফোরকসহ পাওয়া যায়নি, এটা স্পষ্ট যে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী আমাদের নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করছে।”
কেবল দুই দেশের মধ্যে আলোচনাই সংকট সমাধান করতে পারে না, বাংলাদেশকে বিষয়টির আন্তর্জাতিক সমাধানের জাতিসংঘসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে উপস্থাপন করার মাধ্যমে বিষয়টির যথাযথ সমাধান করতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন গত ১৭ ডিসেম্বর সীমান্ত হত্যাকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে একটি দাগ বলে বর্ণনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনের পরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোমেন বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন যে সীমান্তে কোনও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না এবং আশ্বাস দিয়েছেন যে তিনি (মোদী) এই বিষয়ে নতুন করে বাহিনীকে (বিএসএফ) নির্দেশ দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেছিলেন যে হত্যাকাণ্ডকে শূন্যে নামাতে উভয় পক্ষ সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় কাজ করবে।
“দক্ষিণ এশিয়ার ভয়াবহ হত্যাকেন্দ্র”
বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি গত রবিবার (২০ ডিসেম্বর) অভিযোগ করেছে যে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত একটি “দক্ষিণ এশিয়ার ভয়াবহ হত্যাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে”।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, “যখন সীমান্তে পাইকারি হারে বাংলাদেশি নিহত হচ্ছে, তখন আমাদের সরকার শুধু নীরব থাকছে না, বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের হত্যার বৈধতা দিচ্ছে।”
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, “ভোট না দিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকারের নতজানু বৈদেশিক নীতির কারণে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এখন বিশ্বের রক্তাক্ত একটি দেশ। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মারাত্মক হত্যাকেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন, সীমান্ত হত্যাকাণ্ড নিয়ে পতাকা বৈঠক করা এবং নিহতদের মরদেহ গ্রহণ করা ছাড়া বিজিবির কোনও তত্পরতা চোখে পড়ে না।
দলটি সোমবার (২১ ডিসেম্বর) বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের নির্বিচারে হত্যার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।
দলীয় চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএসএফ ধারাবাহিকভাবে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করছে।
সীমান্ত হত্যা: ডিজি-পর্যায়ের সম্মেলনকে অগ্রাধিকার
দ্বিপাক্ষিক ও সীমান্ত নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়ে মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) থেকে শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী মহাপরিচালক (ডিজি) পর্যায়ে আসামের গুয়াহাটিতে একটি সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে।
বৈঠকে যৌথ সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার বিষয়, অবিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলোকে বেড়া দেওয়া এবং আন্তঃসীমান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করা হবে। বৈঠকে বাংলাদেশ সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধে জোর দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন এবং ভারতীয় পক্ষের নেতৃত্ব দেবেন বিএসএফের ডিজি রাকেশ আস্থানা।
বিজিবির পরিচালক (অপারেশনস) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, সীমান্ত হত্যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় এবং সম্প্রতি বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে সমাধানের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া সম্মেলনে আমরা বিষয়টিকে আবারও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে চাপ প্রয়োগ করব। এছাড়া সীমান্ত লঙ্ঘন, চোরাচালান ও সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার বিষয়েও সম্মেলনে আলোচনা করা হবে।”