অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শেয়ারবাজার লুট থেকে শুরু করে ব্যাংক লোপাট, কুরবানির চামড়া এমনকি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটিয়ে নেয়ার পেছনে যার হাত রয়েছে তিনি হলেন দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমান। এবার করোনার টিকা নিয়েও সেই কালো হাত দৃশ্যমান হয়েছে।
জানা গেছে, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন চড়া মুল্যে কিনছে সালমান এফ রহমানের কোম্পানী বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিকেলস। পরে বেক্সিমকো থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য অধিদফতর এ টিকা কিনে নেবে। এতে সরাসরি কেনার চেয়ে অনেক বেশি দাম পড়বে। সরাসরি কেনার সুযোগ থাকার পরেও বর্তমান সরকারের এমন সিদ্ধান্ত সরকারের খামখেয়ালিপনা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, অর্ধেক টাকায় সরাসরি কেনার সুযোগ থাকলেও চড়া মুল্যে ভারতের কোম্পানী থেকে কিনছে বাংলাদেশ সরকার। সেটাও আবার বাংলাদেশের দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো কোম্পানীর মাধ্যমে। যার মাধ্যমে সরকার ইতিপূর্বে শেয়ারবাজার থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের নামে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। সরাসরি কম দামে কেনার সুযোগ থাকার পরেও সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেয় ঠিক হয়নি। দরিদ্র দেশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দামে হয়তো বাংলাদেশকে প্রতিটি টিকা পরিশোধ করতে হতো না। আর কম দামে বাংলাদেশ পেতে পারত সরাসরি ওই কোম্পানির সাথে চুক্তি করতে পারলে। কিন্তু তা না করে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের আড়ালে এসব দরবেশদের লুটপাটের সুযোগ করে দেয় হচ্ছে।
সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান বেলজিয়ামের বাজেট স্টেট মিনিস্টার ইভা ডি ব্লিকারকে উদ্ধৃত করে করোনার টিকার দাম বিষয়ক একটি নিউজ প্রকাশ করেছে। ইভা ডি ব্লিকার করোনার বিভিন্ন কোম্পানির একটি গোপনীয় দাম উল্লেখ করেন তার টুইটে। যদিও কিছুক্ষণ পর তার টুইটটি তিনি মুছে দেন; কিন্তু তার ফলোয়াররা তার টুইটটির স্ক্রিনশট নিয়ে রাখেন এবং গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এ বিষয়ক রিপোর্টটি প্রকাশ করে।
টুইটে ইভা ডি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতি ডোজ টিকার দাম উল্লেখ করেছেন ১.৭৮ ইউরো (১.৬১ পাউন্ড)। জনজন অ্যান্ড জনসনের টিকা ৮.৫০ ডলার (৬.৩০ পাউন্ড), সানোফি-জিএসকের টিকা প্রতিটি ৭.৫৬ ইউরো, ফাইজার-বায়োএনটেক ১২ ইউরো, কিউরভ্যাক ১০ ইউরো এবং মডার্নার টিকা প্রতিটি ডোজ ১৮ ডলার। ইভা ডি ব্লিকার উল্লেখ করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য ১.৭৮ ইউরো (২.১৫ ডলার) দিতে সম্মত হয়েছে।
দেশে এখন দরবেশদের শাসন চলছে
এদিকে সরকারের এই খামখেয়ালি মনোভাব জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। যেখানে সরকার সরাসরি কিনলে প্রায় অর্ধেক টাকায় কিনতে পরবে সেখানে ভারত থেকে অন্য একটি কোম্পানীর মাধ্যমে ভ্যাকসিন ক্রয় কেন? দেশ কি আসলে এসব দরবেশদের শাসন চলছে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেক্সিমকো থেকে প্রতি ডোজ টিকা ৫ ডলারে কিনবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করেছে। এখানে সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউকেলসের ব্যবসা রয়েছে। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার সম্ভাব্য টিকাটি অনুমতি নিয়ে ভারতে উৎপাদন করবে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার যদি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য টিকা সরাসরি অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোম্পানি কিনতে পারত তাহলে প্রতি ডোজ টিকা ২.১৫ ডলারে অথবা এর কাছাকাছি দামে কিনতে পারত।
বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক বলছেন, বাংলাদেশ সিরামের করোনা টিকাপ্রাপ্তির চেষ্টা না করে সরাসরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে চুক্তি করতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারত। সিরাম-বেক্সিমকোর মাধ্যমে টিকা আনতে গিয়ে বাংলাদেশকে প্রতি ডোজ টিকায় বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে ২.৮৪ ডলার। টাকার অঙ্কে তা দাঁড়ায় ২৪১.৯৩ টাকা। এই হিসেবে তিন কোটি ডোজ টিকায় বাংলাদেশকে বেশি ব্যয় করতে হবে ৭২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার বেশি। সিরাম-বেক্সিমকো থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনতে বাংলাদেশকে ১৫ কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে। ১৫ কোটি ডলার বাংলাদেশী টাকায় হয় এক হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। সরাসরি অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে টিকা আনতে পারলে এই তিনকোটি ডোজে বাংলাদেশকে ব্যয় করতে হতো ৫৪৯ কোটি ২২ লাখ টাকা অথবা এর কাছাকাছি কোনো অঙ্ক পরিশোধ করতে হতো। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, দরিদ্র দেশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দামে হয়তো বাংলাদেশকে প্রতিটি টিকা পরিশোধ করতে হতো না। আর কম দামে বাংলাদেশ পেতে পারত সরাসরি ওই কোম্পানির সাথে চুক্তি করতে পারলে।
টিকা সংগ্রহ বিষয়ে অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, প্রথম দিকে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে চুক্তি করতে পারলে লাভবান হতো। আমরা সে সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করিনি। তবে আমাদের এখনো সময় আছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাথে চুক্তি করে কম দামে বাংলাদেশ টিকা নিয়ে আসার।
দেখা গেছে এর আগেও স্যাটেলাইট নির্মাণ প্রকল্পটি বিটিআরসির অধীনেই এর নিয়ন্ত্রণ থাকার কথা থাকলেও সরকার কৌশলে এই স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এই দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের হাতেই অর্পণ করে।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইতিপূর্বে টেন্ডার ছাড়াই স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব বেক্সিমকোকে দেয়ার পেছনে যিনি পর্দার আড়ালে কলকাঠি নেড়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়। এবারও তার ইশারাতেই টাকা লুটিয়ে নিতে করোনা টিকাও তাদের মাধ্যমে কেনা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: লুটপাটের আরেক মেগা প্রকল্প?
গরিবের চামড়ায়ও কামড় দিলেন সেই দরবেশ!
মুজিব বর্ষ পালন করতেই শেয়ার বাজার লুট!
ছেলেধরার আড়ালে শেয়ারবাজার লুটে নিলেন শেখ হাসিনা!