অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শেখ মুজিবের ভাস্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে দেশে এখন চরম ধর্মীয় বিতর্ক চলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক প্রকার গায়ের জোরেই বলা হচ্ছে যে, ভাস্কর্য কোনো মূর্তি না। দেশের শীর্ষস্থানীয় সকল ওলামায়ে কেরামের কথাকে দলটির নেতারা কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ একাত্তর টিভির টকশোতে প্রকাশ্যেই বলেছেন, দেশের মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্ররা ১ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। তাদের কথায় দেশ চলবে না। সেই সুরে সুর মিলিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘দেশের আলেম সমাজ ও বিশেষজ্ঞগণ বলছেন-মূর্তি আর ভাস্কর্য এক নয়। মৌলবাদী গোষ্ঠী ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।’
এখন প্রশ্ন হলো-ওবায়দুল কাদেরের সেই আলেম সমাজ কারা? যারা বলছে ভাস্কর্য আর মূর্তি এক নয়। কাদের সাহেব কোনো আলেমের নাম বলতে পারেননি।
টিভি টকশোতে দেখা গেছে, কথিত মাওলানা জিয়াউল হাসান নামে সরকারের গৃহপালিত একজন আলেম ভাস্কর্যের পক্ষে কথা বলেছেন। শুধু তাই নয় কাবা শরীফকে ভাস্কর্য বলে মন্তব্য করেছেন এই কথিত আলেম। তার এই বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে সাধারণ মানুষও প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। পবিত্র কাবাঘরকে ভাস্কর্য বলায় তাকে গ্রেফতারেরও দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
আর কথিত মাওলানা জিয়াউল হাসান একজন সুবিধাভোগী ও দরবারি আলেম হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তিনি ব্যক্তিগত সুবিধা নেয়ার জন্য বিগত ১২ বছর ধরেই সরকারের চামচামি করে কুরআন-হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন। ইসলামিক স্কলাররাতো দূরের কথা-সাধারণ মানুষও জিয়াউল হাসানকে আলেম বলে মনে করে না।
বিপরীত দিকে দেখা গেছে, কওমী, আলিয়া, সুন্নী, হেফাজত, জামায়াত, চরমোনাই, ফুলতলীসহ দেশের সকল ওলামায়ে কেরাম এই ভাস্কর্যের বিপক্ষে ফতোয়া দিয়েছেন। তারা পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন যে, মানুষের ভাস্কর্য ও মূর্তি একই জিনিস।
লক্ষণীয় বিষয় হলো-মুফতি গিয়াস উদ্দিন তাহেরি, ড. মুফতি এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ও ফুলতলীর পীর সবাই দেশে জামায়াত ও কওমী বিরোধী হিসেবে পরিচিতি। তারাও হেফাজতেরও বিরোধী। কিন্তু ভাস্কর্য প্রশ্নে তারাও একই কাতারে এসেছেন। শুধু তাই নয় দেশের সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরাম ভাস্কর্যে প্রশ্নে এককাতারে সামিল হয়েছেন। এনিয়ে দেশের আলেমদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই।
কিন্তু দেখা গেছে, গৃহপালিত জিয়াউল হাসান ছাড়া দেশে ভাস্কর্যের পক্ষে কেউ কথা বলছেন না। আর ফরিদ উদ্দিন মাসুদ নামে আরেকজন আছেন। যাকে দেশের মানুষ ভন্ড হিসেবেই জানে। তিনি আলেম হলেও তার কোনো নীতি আদর্শ নেই। সুবিধার জন্য তিনি সব কিছুই বিসর্জন দিতে পারেন। তার কোনো চরিত্র নাই। তাই, ওবায়দুল কাদের যে আলেম সমাজের কথা বলছেন-সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। দেশের প্রকৃত কোনো আলেম ভাস্কর্যের পক্ষে কথা বলেননি।
আলেম সমাজ বলছেন, যারা ভাস্কর্যের সমার্থন দিয়ে যাচ্ছে তারা আমে নয় আওয়ামী সমাজ। একজন আলেম কখনও কাবা ঘর নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেনা। ইসলামে মূর্তির কোন স্থান নেই। একটি মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি কখনই কাম্য নয়। তারা বলেন, দেশের আলেম সমাজকে আরও বেশি কঠর হতে হবে। তাহলে স্বৈরাচারী ইসলাম বিদ্বেষী সরকার পিছু হাটতে বাধ্য হবে।