অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ কতৃক গণধর্ষণের ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসেছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে আগে থেকেই বন্ধ ছিল এই ছাত্রাবাস। বন্ধ ছাত্রাবাসে কীভাবে এমন একটি ঘটনা ঘটল, এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে শনিবার নতুন নির্দেশ দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ছাত্রাবাসের যেসব কক্ষে আবাসিক ছাত্ররা ছিলেন, সেসব কক্ষ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ‘বন্ধ’ ছাত্রাবাস আবার বন্ধের নির্দেশ এল।
দুপুরে ছাত্রাবাসে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কক্ষ তালাবদ্ধ। এর মধ্যে কয়েকটি কক্ষ থেকে আবাসিক শিক্ষার্থীদের মালপত্র নিয়ে চলে যেতে দেখা গেছে।
শুক্রবার রাতে গণধর্ষণের ঘটনার পর যোগাযোগ করা হলে এমসি কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে কলেজের পাঠদান বন্ধ। এ জন্য ছাত্রাবাসও বন্ধ।’ সে ক্ষেত্রে বন্ধ ছাত্রাবাস আবার বন্ধ ঘোষণা করে ছাত্রদের তা ছাড়ার নির্দেশ কেন এবং ছাত্রাবাসে কারা ছিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন বলেন, ‘এসব নিয়ে একাডেমিক সভা ডাকা হয়েছে। এই সভার পর সার্বিক পরিস্থিতি জানানো হবে।’
শুক্রবার রাতে টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজ ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষের সামনে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া তরুণীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করেছে ছাত্রলীগ নেতারা। করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রাবাস বন্ধ থাকলেও ছাত্রাবাসের ওই কক্ষ ২০১২ সাল থেকে ছাত্রলীগের দখল করা কক্ষ হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মোট নয়জনের নামে ওই তরুণীর স্বামী শাহপরান থানায় মামলা করেন। ঘটনার পর পুলিশ ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করে। ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমানকে অস্ত্র মামলায়ও আসামি করা হয়েছে।
এ ঘটনার দীর্ঘ সময় পার হলেও এখন কাওকে গ্রেফতার করতে পারিনি পুলিশ। অন্যদিকে ঘটনাকে ধামাপাচাপা দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা। একটি সূত্র জানায়, এই ধর্ষণের ঘটনা ধাপাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা । তারা আপস মীমাংসারও চেষ্টা চালান। প্রথমদিকে পুলিশও বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে এড়িয়ে যায়। পরে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় ধাপাচাপা দেয়ার চেষ্টা বিফলে যায়। তবে, দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের কারণে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় অভিযুক্তরা।
সন্ধ্যার পর এই খবর পেয়ে টিলাগড় এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা ও কয়েকজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। প্রথমে তারা বিষয়টি ধাপাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর তারা বিষয়টি আপসের চেষ্টা চালান। এসময় ধর্ষণের শিকার নারী ও তার স্বামীকে আপস মীমাংসার জন্য চাপ দেয়া হয় বলেও জানা গেছে।
তবে ধর্ষণের খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে হাজির হওয়ায় ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। এসময় আওয়ামী লীগ নেতারাও ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েন। তবে আপসের চেষ্টায় অনেক সময় ক্ষেপণের সুযোগে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা।
এদিকে প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে জুড়ে বিক্ষোভ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা গণধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেন। অন্যথায় তারা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে হুশিয়ারি দেন।