অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের উপর যুবলীগের সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলার ঘটনাকে চুরি ঘটনা বলে আখ্যাদিয়েছে শেখ হাসিনার অনুগত র্যাব বাহিনী। তবে, র্যাব এটাকে চুরির ঘটনা বললেও ধীরে ধীরে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘোড়াঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ও ঘোড়াঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাফে খোন্দকার শাহেনশাহ ও যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম ওই এলাকার খাস জমি দখলে নিতে চেষ্টা করেন। তাদের এ কাজে বাধা হয়ে দাড়ান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদা খানম। এরপর থেকেই ওয়াহিদা খানমের সাথে তাদের বিরোধী দেখা দেয়।
এই বাধা দূর করতেই পরিকল্পিতভাবে ইউএনওর বাসায় গত বুধবার গভীর রাতে ঢুকে তার উপর হামলায় চালায় যুবলীগ নেতারা। উপজেলা চেয়ারম্যান শাহেনশাহর পরিকল্পনায় যুবলীগের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম ও আসাদুল ইসলাম হামলায় অংশ নেয়।
পরের দিন জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে র্যাব তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
জানা গেছে, গোয়েন্দা রিপোর্টে সরকারের কাছে খবর এসেছে, যুবলীগ নেতারাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদা খানমের উপর হামলা চালায়। এঘটনা প্রকাশ্যে আসলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে, তাই সরকারের উপরের নির্দেশেই এটাকে চুরির ঘটনা বলে আখ্যাদিয়েছে র্যাব।
এদিকে র্যাবের তদন্তকারী দল আটক জাহাঙ্গীরকে ছেড়ে দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে এক ধরনের সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি, ঘটনা ভিন্ন খাতে চলে যাচ্ছে কি না তা তারা বুঝতে পারছে না।
জানা গেছে, জাহাঙ্গীর-আসাদুল ও মাসুদ বাহিনীর কাছে জিম্মি ঘোড়াঘাটের মানুষ। চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, হামলা-মামলা এসব নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল এ তিন ব্যক্তির কাছে। এসব অপকর্ম দূর করতেই ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম জাহাঙ্গীর-আসাদুল ও মাসুদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে থাকেন। এসব কারণেই ইউএনওর ওপর চড়াও হন তারা।
গণমাধ্যমের কাছে যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও বার্তা আসে। সেখানে দেখা যায়, এই যুবলীগ নেতা জেলার হাকিমপুরের হিলি এলাকায় গিয়ে মাদক সেবন করছেন। এ সময় হাতেনাতে পুলিশের কাছে ধরা খেয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা বলে পরিচয় দেন। পরে পুলিশের কাছে সেবারের মতো ক্ষমা চেয়ে পার পান।
ঘোড়াঘাট উপজেলার রানীগঞ্জ বাজার এলাকায় নুনদহ ঘাটে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন সিংড়া ইউনিয়নের যুবলীগ সভাপতি মাসুদ রানা। সেখানে ইউএনও ওয়াহিদা খানম বেশ কিছুদিন আগে বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম পুড়িয়ে দেন। ফলে ইউএনওর ওপর ক্ষিপ্ত হন যুবলীগ নেতা মাসুদ রানা। বালু উত্তোলনের ঘটনাই শেষ নয়, এ বছর ১৪ মে ইউএনওর কাছে মুক্তিযোদ্ধা সায়েদ আলীর জামাতা আবিদুর রহমান জমি দখল ও চাঁদা দাবি করার অভিযোগ করেন জাহাঙ্গীর আলম ও মাসুদ রানার বিরুদ্ধে।
অভিযোগে আবিদুর রহমান জানিয়েছেন, দুই বছর ধরে জাহাঙ্গীর আলম ও মাসুদ রানা ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। মৃত্যুভয়ে তিনি ২ লাখ টাকা জাহাঙ্গীর ও মাসুদকে দেন। পরে বাকি ৩ লাখ টাকা দিতে না পারায় উপজেলার কলোনিপাড়া এলাকায় এক একর জমি দখল করে নেয় জাহাঙ্গীর বাহিনী। এ বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানম গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন। সেই সঙ্গে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের বিষয়ে তৎপরতা চালান।
অভিযোগ আছে, জাহাঙ্গীর-আসাদুল ও মাসুদ রানা প্রায় সময় উপজেলার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে জমি কেনাবেচার সময় চাঁদা নিয়ে আসছিলেন। চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বাহিনী দিয়ে সেই জমিতে দখলদারি করতেন। এ বাহিনীর প্রধান অর্থদাতা হিসেবে ছিলেন মাসুদ রানা। তিনি ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩নং সিংড়া ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
এমন একটি হামলার ঘটনাকে চুরির ঘটনা বলে আখ্যা দেয়ায় এখন পুরো দিনাজপুর জুড়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। মানুষের অভিযোগ-ক্ষমতাসীন দলের লোকদেরকে বাচাতেই র্যাব এমন অপকর্ম করছে।