অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বর্তমান সরকারের এক মহাপ্রতাপশালী কর্মকর্তা হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। তার বিগত কয়েক মাসের কর্মকাণ্ড দেখে এটা বলার কোনো সুযোগ নেই যে, তিনি কারো অধীনে চাকরি করেন। মনে হয় তিনি নিজেই সরকারকে চালাচ্ছেন। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে কারো ক্ষমতা নেই আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার।
করোনার প্রথম থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে থাকে। এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারিতে স্বাস্থ্য ডিজি আবুল কালাম আজাদ সরাসরি জড়িত ছিলেন। কারণ, মুগদা হাসপাতালের একজন ডাক্তার মাস্কের মান নিয়ে চিঠি দেয়ার পর স্বাস্থ্য ডিজি এটার যাছাই না করে উল্টো তাকে শাস্তি দিয়েছেন।
করোনা চিকিৎসার সরঞ্জাম যথেষ্ট পরিমাণ না থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য ডিজি এসবকে চাপা দিয়ে জোর গলায় বসে আসছেন যে, আমাদের সব ব্যবস্থা আছে। করোনা মোকাবেলায় কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু পরবর্তীতে স্বাস্থ্যখাতের ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসে। চিকিৎসার অভাবে মানুষ হাসপাতালের সিড়ি, বারান্দা, মাঠ ও রাস্তা-ঘাটে পড়ে মারা গেছে।
এরপর, প্রতিদিনিই স্বাস্থ্যখাতের কেনাকাটা নিয়ে ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসছে। একটি গোষ্ঠী হাতিয়ে নিচ্ছে শত শত কোটি টাকা। কিন্তু এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য ডিজি কোনো মুখ খুলছেন না। নির্লিপ্ত ভুমিকা পালন করছেন।
তারপর বেরিয়ে আসে ডা. সাবরিনার জেকেজির করোনা টেস্টের ভয়াবহ অনিয়ম। করোনা টেস্টের নামে তারা অসহায় মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, করোনার ভুয়া সনদ দেয়ার কারণে বিদেশেও দেশের ভাবমুর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে।
জেকেজির চেয়ারম্যান পরে জানালেন, স্বাস্থ্য ডিজি আবুল কালাম আজাদকে এসব বিষয়ে আগেই জানানো হয়েছিল।
কিন্তু আবুল কালাম আজাদ বিষয়গুলো জানার পরও চাপা দিয়ে আসছিলেন। মনে করা হচ্ছে, ডা. সাবরিনার স্বামী আরিফ চৌধুরী থেকে স্বাস্থ্য ডিজি মোটা অংকের টাকা খেয়েছে। যার দরুণ, জানার পরও জেকেজির এসব প্রতারণা তিনি বন্ধ করেননি।
তারপর বেরিয়ে আসে রিজেন্ট হাসপাতালের ভয়াবহ কেলেংকারি। কোনো প্রকার খোঁজ খবর না নিয়েই প্রতারক সাহেদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন ডিজি আবুল কালাম আজাদ।
তিনি দাবি করেছেন, টকশো ছাড়া সাহেদকে এর আগে আর দেখেন নি। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তিনি প্রতারক সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, ডিজির অনুরোধে তিনি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রণালয় কিছুই জানে না।
ডিজি আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিনই নিত্যনতুন অভিযোগ উঠছে। তার বিরুদ্ধে পাহাড় সম অভিযোগ উঠলেও এনিয়ে নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছেন শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা।
সচেতন মহল মনে করছেন, ডিজি আবুল কালাম আজাদের ক্ষমতার ভিত্তি শেখ হাসিনার গণভবন। শেখ হাসিনার আশ্রয়-প্রশ্রয়েই স্বাস্থ্য ডিজি দীর্ঘদিন ধরে অপকর্ম করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে যেসব অনিয়ম, দুর্নীতি লুটপাট হচ্ছে সবগুলোর সঙ্গেই ডিজি কালাম আজা জড়িত। আর গণভবনের লোকজন এখান থেকে মোটা অংকের টাকা পাওয়ার কারণেই শেখ হাসিনা ডিজিকে কিছু বলতে পারছেন না।