অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাটপারি, প্রতারণা, অনিয়ম-দুর্নীতি করে অবশেষে ধরা খেল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ।
ডায়াগনিস্ট সেন্টারের অনুমোদন নিয়ে মো. সাহেদ দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল পরিচালনা করে আসছেন। আবার এটার অনুমোদনের মেয়াদও শেষ হয়েছে ২০১৪ সালে। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনুমোদন ছাড়াই এতদিন হাসপাতালটি চালিয়ে আসছে। শুধু তাই নয় করোনা নমুনা সংগ্রহ করার অনুমতি নিয়েও নতুন প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
জানা যায়, সরকারি দলের নেতা হওয়ার সুবাদে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সহজেই করোনা চিকিৎসার অনুমতি নিয়ে নেন। এরপর থেকেই করোনা চিকিৎসার নামে শুরু করেন প্রতারণা। তাই অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন একটি অনুমদনহীন হাসপাতাল কিভাবে করোনা টেস্টের অনুমতি কিভাবে?সরকার এসব প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়ে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।
জানা গেছে, করোনা আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে কোনো প্রকার পরীক্ষা ছাড়াই পজেটিভ-নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়ে দিচ্ছেন। তারপর, পরীক্ষা কোনো প্রকার ফি নেয়া যাবে না মর্মে সরকারের সঙ্গে চুক্তি থাকলেও তিনি ৫ হাজার টাকা করে ফি নিচ্ছেন।
রিজেন্ট হাসপাতালের এসব অনিয়মের কথা জানতে পেরে সোমবার দুপুরে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে তারা এসব অনিয়মের সত্যতা পেয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। এসময় সেখান থেকে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপকসহ আটজনকে আটক করা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা মো. সাহেদ পলাতক।
সারোয়াল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রিজেন্ট হাসপাতাল, তারা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেছিল ঠিকই কিন্তু কোনোটাই তারা পরীক্ষা করেনি। পরীক্ষা ছাড়াই তারা নেগেটিভ-পজিটিভ রিপোর্ট দিয়েছে। আমরা কয়েকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে কিছু রিপোর্ট সংগ্রহ করি। এরপর সেই রিপোর্টগুলো আমরা সত্যতা যাচাই করেছি। সেগুলো ছিল ফেক (ভুয়া) রিপোর্ট।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযানকালে ২৮টি রিপোর্ট হাতেনাতে পাওয়া গেছে। যেগুলোর নমুনা আসলে পরীক্ষার জন্য যায়ইনি। সবগুলোই ভুয়া রিপোর্ট।’
সারোয়ার আলম আরও বলেন, ‘এই নমুনা পরীক্ষার নামে প্রত্যেকের কাছে থেকে তারা ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে নিয়েছে। এভাবে প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল।’
সারোয়ার আলম আরও জানান, অভিযানে দেখা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স ২০১৪ সালে শেষ হয়ে যায়। এরপর আর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। কীভাবে সরকার এমন একটি হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা চুক্তিতে গেল, তা খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে র্যাবের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সরেজমিনে ঔষধ প্রশাসনের পরিচয়সংবলিত লোকজনকে দেখা গেছে।
সারোয়ার আলম আরও বলেন, র্যাব এমন একটি অভিযান চালাবে তা টের পেয়েছেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ। অন্য কেউ তাঁর নামে এমন অপকর্ম করছেন, এমন মর্মে সাহেদ দিন দুয়েক আগে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সারোয়ার আলমের ভাষ্য, মূলত নিজের অপরাধ ঢাকতে সাহেদ জিডির আশ্রয় নিয়েছেন।