অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ১১ বছরের শাসনামলে অনাচার, অবিচার ও ব্যাভিচারসহ এমন কোনো অসামাজিক ও অপরাধ কর্মকাণ্ড নেই যা দেশে ঘটছে না। আ.লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা খুন, হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, জমিদখল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির ঘটনায় দেশের মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের লোকদের তত্ত্বাবধায়নে সারাদেশে ইয়াবা ও মাদক ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ছাত্রলীগের মাদকের গোডাউন হিসেবে পরিচিত।
গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা করেছিল সেই তালিকার সবাই ছিল ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা কিছু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক পাচার করে থাকে। তাদের এই মাদকে আসক্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে দেশের তরুণ-তরুণীরা। এমনকি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ব্যাপকভাবে মাদকে জড়িয়ে পড়ছে। এই মাদকাসক্ত তরুণরাই এখন রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার ও মহল্লার অলি-গলিতে নেশার টাকার জন্য চুরি-ছিনতাই করছে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো-সমাজের অপরাধ কর্মকাণ্ড দমনে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশ সদস্যদের একটি অংশও আজ মাদক ব্যবসায় নেমে পড়েছে। আর আরেকটি অংশ অর্থের বিনিময়ে মাদকব্যবসায়ীদেরকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক চাপের মুখে খুনি, ধর্ষক, মাদকবাসায়ীদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও টাকার বিনিময়ে আবার ছেড়ে দেয়।
এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শেখ হাসিনার ডিজিটাল উন্নয়ন। দেশকে কথিত ডিজিটাল করার নামে ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা এখন পড়ালেখা বাদ দিয়ে সারাদিন ডিভাইসে মগ্ন থাকে। সহজভাবে বলা যায়-শেখ হাসিনার কথিত ডিজিটালের কল্যাণে আজ দেশের যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা একেবারে ধ্বংসের পথে। শেখ হাসিনার ১১ বছর শাসনের পর বাংলাদেশ এখন একটি অসভ্য দেশে পরিণত হয়েছে।
এই অবস্থায় যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষকে সুপথে তথা ভাল পথে আনার জন্য ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশের ওলামায়ে কেরাম। ভেঙ্গে পড়া এই সমাজ ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের জন্য তারা কাজ করছেন। কুরআন-হাদীসের কথা শুনিয়ে মৃত্যুর পরবর্তীকাল তথা কবর, হাশরের দিন ও জাহান্নামের আযাবের ভয় দেখিয়ে ওলামায়ে কেরামগণ মানুষকে অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়ে যাচ্ছেন। সরকার আইন করেও যেসব অপরাধ বন্ধ করতে পারছে না ওলামায়ে কেরাম ওয়াজ নসিহতের মাধ্যমে সেটা করতে সক্ষম হচ্ছেন।
বিশেষ করে বর্তমান সময়ের আলোচিত একজন ইসলামি বক্তা হলেন মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারি। তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও প্রাঞ্জল ভাষায় মানুষের কাছে আল্লাহ ও তার রাসুলের কথাগুলো তুলে ধরছেন। তিনি দেশের যেখানেই যাচ্ছেন দূর-দুরান্ত মানুষ পঙ্গপালের মতো ছুটে যাচ্ছে। বিশেষ করে যেসব যুবকরা সারাদিন বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকতো তারা এখন নিয়মিত আজহারির মাহফিলে যাচ্ছেন। যারা সারাক্ষণ ফেসবুক ও ইউটিউবে অশ্লীল-বেহায়া পনায় নিমজ্জিত থাকতো তারা এখন আজহারির শুনে। বলা যায়-দেশের যুব সমাজের বড় একটি অংশ এখন মিজানুর রহমান আজহারির ভক্ত।
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো-অধপতিত যুবসমাজের ইসলামের পথে আসাকে একটি গোষ্ঠী সহ্য করতে পারছে না। প্রথমে একদল মাজার পূজারী মিজানুর রহমান আজহারির বিরুদ্ধে মাঠে নামে। কিছু দিন তাদের সঙ্গে যোগ দেয় কথিত হক্কানি আলেম নামদারী কিছু মানুষ। নিজের পীর ও খানকা ব্যবসায় ধস নামায় তারা আজহারির বিরুদ্ধে অসত্য, মিথ্যা, ভিত্তিহীন প্রচার চালিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, মজার বিষয় হলো-এসব কথিত হক্কানি আলেমরা যত বিরোধীতা করছে আজহারির মাহফিলে দিন দিন সাধারণ মানুষ বিশেষ করে যুব সমাজের উপস্থিতি ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপপ্রচার চালিয়ে আজহারিকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন সরকারের কাছে ধরণা দিয়েছে। সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও সরকারি দলের নেতাদেরকে তারা আজিহারির বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলছে।
আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো-সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহও এসব মাজার পূজারি ও কথিত হক্কানি আলেমদের খপ্পরে পড়ে গেছেন। মিজানুর রহমান আজহারিকে তিনি দেশ থেকে বিতাড়িত করার ঘোষণা দিয়েছেন।
মঙ্গলবার জামালপুরে একটি অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, জামায়াতের অর্থে শিক্ষিত হয়ে আজহারি মাজহারিরা কৌশলে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে জামায়াতের প্রচারণা চালাচ্ছেন আজহারী-মাজহারীসহ কিছু বক্তা। বর্তমানে প্রকাশ্যে জামায়াতের রাজনীতির সুযোগ না থাকায় কৌশলে বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে জামায়াতের পক্ষে কথাবার্তা বলছেন এ সব বক্তা। তারা কোরআন-হাদিসের যে সব ব্যাখ্যা দেন তার অধিকাংশই মিথ্যা এবং আজেবাজে কথা।
এদিকে, ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পরই এনিয়ে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে আজহারির ভক্ত নেটিজনেরাও। শুধু যুব সমাজই নয়, সকল শ্রেণি পেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে। অনেকেই তাকে ইসলামের শত্রুদের বন্ধু হিসেবে আখ্যা দিচ্ছে।
কেউ কেউ বলছেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগ যেখানে সারাদেশে খুন-হত্যা, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে রাখছে সেখানে মিজানুর রহমান আজহারি ওয়াজ মাহফিল করে যুব সমাজকে ভাল পথে নিয়ে আসছেন। শেখ আব্দুল্লাহ একটি মুসলিম দেশের ধর্মমন্ত্রী হয়েও আজহারির কুরআন-হাদীসের কথাগুলো সহ্য করতে পারছেন না। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আসলে কী চান? দেশটা কি আব্দুল্লাহর বাব-দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি। মিজানুর রহমান আজহারিকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার তিনি কে? কুরআন-হাদীসের কথা ভাল না লাগলে আব্দুল্লাহরা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যেতে পারেন। আজহারিরা এদেশেই থাকবেন।
আবার কেউ বলছেন, আজহারি যদি জামায়াতের সৃষ্টি হয় তাহলে সমস্যা কোথায়? জামায়াত তো আর আওয়ামী লীগের মতো চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারী ও ধর্ষক সৃষ্টি করে না। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির এদেশে সোনার মানুষ তৈরি করছে।