অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গত দুই বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলেছিলেন, বিসিএসে ছাত্রলীগকে পরীক্ষায় পাস করার দরকার নেই। শরীরের ক্ষত চিহ্নই তাদের জন্য যথেষ্ট। তারা শুধু পরীক্ষায় অংশ নিলেই চলবে। আর এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. নাইমা হক বললেন, তৃতীয় বর্ষে ফেল করা ছাত্রলীগ সেক্রেটারিকে মানবিক বিবেচনায় চতুর্থ বর্ষে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাহলে এখন থেকে ছাত্রলীগ নেতাদেরকে আর পড়ালেখা করতে হবে না। ফেল করলেও মানবিক বিবেচনা নামের বিশেষ কোটায় তাদেরকে পরের বর্ষে পড়ার সুযোগ দেয়া হবে।
জানা গেছে, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন ২০১১-১২ সেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষ পার হতে তিনি তিন বছর সময় নেন। ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় তিনি অকৃতকার্য হন। পরে চতুর্থবারের প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে তিনি প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সেটাও নকল করে পাস করেছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
এরপর ২০১৬ সালের দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা পাস করতে পারেননি সাদ্দাম হোসেন। পরে ২০১৭ সালের ফাইনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৮ সালে তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করেন। সেই তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি শুরু হয়। সেই পরীক্ষায়ও অকৃতকার্য হয়েছেন সাদ্দাম। সর্বোপরি এই ছাত্রনেতা গত সাত বছরে পাঁচবার ফাইনাল পরীক্ষায় ফেল করেন।
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো-তৃতীয় বর্ষে ফেল করেও তাকে চতুর্থ বর্ষে পড়ালেখার সুযোগ দিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী, সাধারণত কোনো শিক্ষার্থী সেমিস্টার বা বার্ষিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হলে ফলাফলের খাতায় নাম আসে না। তবে যারা একটি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হন তাদের নাম ফলাফলের তালিকায় থাকে। এবং তারা পরবর্তী সেমিস্টার বা বর্ষে ভর্তি হতে পারেন। তবে ফলাফলের তালিকায় যাদের নাম আসে না তাদের আগের সেমিস্টার বা বর্ষে পুনরায় পড়াশোনা করে উত্তীর্ণ হতে হয়।
এদিকে সাদ্দাম কয়েকটি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হওয়ায় ফলাফলের খাতায় তাঁর নাম না এলেও তিনি পরবর্তী বর্ষে পদোন্নতি পেয়েছেন। কয়েকটি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হয়ে পরবর্তী বর্ষে পদোন্নতি পাওয়ার নজির নেই আইন বিভাগে। কিন্তু কোনো নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে শুধু ছাত্রলীগের নেতা হওয়ার কারণে সাদ্দামকে অন্যায়ভাবে চতুর্থ বর্ষে পড়ার সুযোগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এরপর শুধু এখানেই শেষ হয়, ছাত্রলীগের এই নেতাকে সুবিধা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো আইনও পরিবর্তন করেছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পদোন্নতি পাওয়ার পর চতুর্থ বর্ষের প্রথম পর্বের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন তিনি। এর মধ্যে দুটি পরীক্ষা শেষও হয়েছে। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া জন্য তাঁর ক্লাসে উপস্থিতি রয়েছে ২০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। যদিও কারো ২০ শতাংশ উপস্থিতি থাকার শর্তে এর আগে কাউকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। তাই এবার নিয়ম করা হয়েছে, যাদের ২০ শতাংশের বেশি উপস্থিতি আছে তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। এর কম উপস্থিতি আছে এমন অনেকের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একমাত্র সাদ্দামের জন্যই নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে একের পর এক সুবিধা নিচ্ছেন তিনি।
এদিকে চতুর্থ বর্ষের পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল (৪০৪) কোর্সেও ১৮টি ক্লাসের মধ্যে তাঁর উপস্থিতি দেখানো হয়েছে ১২টি। যদিও চতুর্থ বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, সাদ্দাম কোনো কোর্সেই নিয়মিত ক্লাস করে না। তাঁকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার জন্যই তাঁর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।
কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকাণ্ডে প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করছে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ঢাবি কর্তৃপক্ষ এখন ফেল করা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জন্য বিশেষ কোটা সৃষ্টি করেছে। ছাত্রলীগ নেতাদের এখন আর পড়ালেখা করতে হবে না। দলীয় কোটাতেই তারা পার পেয়ে যাবেন।