অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার সম্মান রক্ষায় মঙ্গলবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে ৩০ টাকার ইফতার খাওয়াল বিএনপি। ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি। কারাবিধি অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতিদিন ৩০ টাকার ইফতারি দেয় কারাকর্তৃপক্ষ। তার এই ইফতারির প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকেও ৩০ টাকার ইফতারি দেয় বিএনপি।
এই ৩০ টাকার ইফতারির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার ইফতারের প্রতি সম্মান জানানোর কথা বলা হলেও এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিমধ্যে ব্যাপক গুঞ্জন ও কানাঘুষা শুরু হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিএনপির এই কর্মসূচি নিয়ে চলছে সমালোচনা।
কথিত দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রায় ১ বছর ৪ মাস ধরে কারাগারে বন্দি আছেন। তার শারীরিক অবস্থা মারাত্মক খারাপ। জাউ ছাড়া তিনি এখন কিছুই খেতে পারেন না। বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা আশঙ্কা করছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে যেকোনো সময় বড় ধরণের কোনো দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে।
কিন্তু, কারাগারে বন্দি অসুস্থ তিনবারের সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীর জামিন ও মুক্তি নিয়ে সরকার প্রতিনিয়ত ছলচাতুরি করে যাচ্ছে। একটি মামলায় জামিন দিয়ে আরও দুইটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। সবই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই। তিনি আসলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে চান না। তার টার্গেট খালেদা জিয়াকে কারাগারে এবং তারেক রহমানকে বিদেশে রেখে বিএনপি নামক দলটিকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়া।
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো- খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর থেকেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতারা বলে আসছেন যে, আমরা সরকারের উস্কানিতে পা দেবো না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই খালেদা জিয়াকে আমরা মুক্ত করবো। আসলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য আজ পর্যন্ত বাস্তবসম্মত কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি বিএনপি। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি যত শান্তির বাণী প্রচার করছে, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপির ওপর শেখ হাসিনা তত আগ্রাসী হয়ে উঠছে।
দেখা গেছে, দলীয় প্রধানের মুক্তির জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীরা কর্মসূচি দেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত সিনিয়র নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। নেত্রীর মুক্তির জন্য তারা যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু, রহস্যজনক কারণে বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শক্ত কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করছে না। বরং উল্টো ড. কামাল ও জাফরুল্লাহর পরামর্শে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য মানববন্ধনের নামে অসহায় কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। যা নিয়ে সর্বত্রই চলে সমালোচনা। এমনকি ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কর্মসূচি ঘোষণা দিতে বিএনপিকে বলা হচ্ছে। কিন্তু বিএনপি নেতারা সেটাও করছে না। তারা চলছে কামালের বুদ্ধিতে।
দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীরা চাপ দিচ্ছে আন্দোলনের জন্য, আর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল তা না করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে গিয়ে নেত্রীর জন্য কান্নাকাটি করছেন। ফখরুলের এসব কর্মকাণ্ডে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, বিএনপি নেতাকর্মীরাও এখন তার ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।
এরপর সর্বশেষ বিএনপি নেতারা যা করলেন তা নিয়েতো নীতিমতো মানুষ হাসি মশকরা করছেন। খালেদা জিয়ার প্রতি সম্মান দেখাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে মঙ্গলবার ৩০ টাকার ইফতার খাওয়াল বিএনপি। শুধু রাজনৈতিক অঙ্গন নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এনিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
অনেকেই বলছেন, এই ৩০ টাকার ইফতার খাওয়াইয়া বিএনপি নেতারা খালেদা জিয়ার প্রতি সম্মান দেখাননি, এটার মাধ্যমে তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে মশকরা করেছেন। কারাগারে খালেদা জিয়া যা খাবেন বাইরে নেতারা সেটা খাওয়ার নাম সম্মান নয়। আসল সম্মান হলো আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আনা।