-মুহাম্মদ আবদুল জব্বার
ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য মুসলমানদেরকে আবারো বিশ্বে শন্তি প্রতিষ্ঠার তরে নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হওয়ার প্রেরণা দেয়। মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস-ঐতিহ্যে সর্বকালের সেরা জাতি হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু ইসলাম বিদ্বেষীরা মুসলমানদের জগৎজোড়া সকল যশ-খ্যাতিকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে যুগে যুগে নানামুখী ফন্দি এঁটেছিল। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়ে চলছে একের পর এক। সে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। গ্রানাডা ট্র্যাজেডি তার একটি উপাখ্যান মাত্র।
মুসলমানদের ওপর গ্রানাডার সে লোমহর্ষক ঘটনার ধারাবহিকতা এখনো ঘটে চলছে পৃথিবীর দিকে দিকে। মুসলমানরা কোন ঘটনা থেকেই শিক্ষা গ্রহন করতে পারেনি। মহান আল্লাহ চেষ্টা ছাড়া কোন জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন করেন না। যেখানে বান্দার চেষ্টা শেষ সেখানে আল্লাহর সাহায্য শুরু। নেতৃত্ব, দূরদর্শী পরিকল্পনা ও অবিরাম লক্ষ্য অর্জনে পথচলার ব্যত্যয় ঘটায় ইসলাম বিরোধীদের আক্রমনের তীব্রতা যেন বেড়েই চলছে। গ্রানাডা ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তির যাঁতাকলে মুসলমানদের আর কতকাল নিষ্পেষিত হতে হবে? এর উত্তর যেন কারো জানা নেই। এরপরও শোককে শক্তিতে পরিণত করে দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়ে মুসলমানরা এগিয়ে গেলে নিঃসন্দেহে একদিন সুদিন ফিরে আসবেই। এখনও সারা বিশ্বের সিংহভাগ সম্পদ ও জনবল মুসলমানদেরই। তাই মুসলমানদের পক্ষেই সব সম্ভব।
বেদনা বিধুর গ্রানাডা ট্রাজেডি
ইসলামের সুমহান সৌন্দর্য্য বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল রাসুল (সঃ) এর সময় থেকেই। কালের পরিক্রমায় সে আলো আছড়ে পড়ে ইউরোপের মাটিতেও। উমাইয়া সালতানাতের বীর সেনাপতি তারেক বিন যিয়াদের নেতৃত্বে স্পেনের মাটিতে ইসলামের পতাকা উড়তে শুরু করে অষ্টম শতাব্দীর শেষের দিকে। ১৪৯২ সালের আগ পর্যন্ত প্রায় আটশত বছর ধরে স্পেনে মুসলমানদের স্বর্ণযুগ ছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, চিকিৎসা, রাজনীতি, স্থাপত্যশিল্প ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সে সময়কালে স্পেনই ছিল একমাত্র স্পেনের উদাহারণ। মুসলমানদের এমন উন্নতি খৃষ্টানরা মোটেও পছন্দ করলো না। মুসলমানদের অভ্যন্তরে বিভেদ সৃষ্টি করে সাজানো বাগানকে তছনছ করার জন্য খৃষ্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ড এক ভয়ঙ্কর ফন্দি এটেছিল।
রাসুলের (সা) যুগে যেভাবে মুনাফিক সরদার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মুসলমানদের কাতারে থেকে মুসলমানদেরই ক্ষতি করত, তেমনি আবু দাউদ নামক জনৈক গাদ্দার স্পেনের গ্রানাডার শেষ সুলতান আবুল হাসানের ছত্রছায়ায় থেকে খৃষ্টান রাজা ফার্ডিন্যান্ডের স্পেন ধ্বংসের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখলো। তার সাথে যোগ দিল রাজ্যের আরো কিছু ক্ষমতালোভী ব্যক্তিবর্গ। সে হত্যাযজ্ঞের মিশনকে পাকাপোক্ত করতে পার্শ্ববর্তী দেশের রানী ইসাবেলাকে হাত করতে ফার্ডিন্যান্ড তাকে বিয়ে করে। এরপর ষড়যন্ত্রের বীজ বুনিত হলো সারা স্পেনে। মুসলিম নেতৃবৃন্দের অন্তঃকোন্দোলে যখন এমনিতেই অবস্থা বিপর্যস্ত, ঠিক সে সময়ই ফার্ডিন্যান্ড হামলে পড়ল মুসলমানদের উপর। ইতিহাস বলে সে অভিযানে মুসলমানদের খুনের দরিয়া বয়ে গিয়েছিল স্পেনের চারদিকে। নেতৃত্বহীন মুসলমানরা জীবন বাঁচানোর জন্য যখন দিশেহারা, ঠিক তখন ফার্ডিন্যান্ড এর পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হলো- যারা মসজিদে ও জাহাজে আশ্রয় নিবে, শুধু তারাই রেহাই পাবে। খৃষ্টানদের ছলনাময়ী প্রস্তাবে রাজী হয়ে সবাই মসজিদে ও জাহাজে আশ্রয় নিল।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যারা মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিল তাদেরকে তালাবদ্ধ করে দাহ্য তেল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে এবং জাহাজে আশ্রিতদের সাগরে ডুবিয়ে করুণ মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছিল। আশ্রিতদের একটি বড় অংশ ছিল শিশু-বৃদ্ধ, অসুস্থ ও অসহায়। আগুনে পুড়ে লাখো বনী আদম যখন প্রাণ হারাচ্ছিল, আর্তচিৎকারে যখন আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওষ্ঠাগত, ঠিক তখন মানব ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকারী কুখ্যাত ঘাতক ফার্ডিন্যান্ড ও তার স্ত্রী ইসাবেলা হামযা (রাঃ) এর কলিজা ভক্ষণকারী আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দার মত আত্মতৃপ্তিতে বিকৃত অট্টহাসিতে মাতোয়ারা হয়ে বলতে থাকল- হায় এপ্রিল ফুল (এপ্রিলের বোকা)! এরপর পর সকল মসজিদে আযান বন্ধ হয়ে গেল। সবাইকে খৃষ্টধর্ম গ্রহনে বাধ্য করা হল। ফজরের সময় যারা নামায পড়তে উঠত বা যে সকল ঘরে সে সময় বাতি দেখা যেতো, নামাজ পড়ার অভিযোগে তাদের করুন মৃত্যু নিশ্চিত করা হতো। এভাবেই একটি সাজানো বাগান নিঃশেষ হয়ে যায়।
এপ্রিল ফুল!
মুসলমানেরা তাদের সেদিনের করুণ আর্তনাদের ইতিহাস ভুলে গেলেও খৃষ্টান সম্প্রদায় তাদের প্রতারণাকে স্মরণীয় করে রাখতে আজো সে দিনটিকে জমকালোভাবে জমিয়ে রেখেছে। ‘এপ্রিল ফুল’ নাম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়ে। আর সারা দুনিয়ার মুসলিম তরুণ-তরুণীরাও নিজেদের পূর্বসূরীদের করুণ আর্তনাদের দিনকে পরস্পরকে ধোঁকায় ফেলে চরম মজায় লুটোপুটি খায়! সেলুকাস! সেই বোকাতত্ত্বে মুসলমানরা এখনো ধরাশায়ী। আগামী প্রজন্মের কাছে নিজেদের করুন পরিণতির কথা অজানার তিমিরে ধামাচাপা রয়ে যাওয়া একটি জাতির জন্য কত দূর্ভাগ্যের তা বলে বা লিখে আদৌ ব্যক্ত করা কি সম্ভব? তা জানার ও অনুধাবন করার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার দায়িত্ব মুসলিম শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের, এই দায়িত্ব উম্মাহর সব সদস্যের! তবেই কেবল নিজেদের করুণ আর্তনাদের দিনের শোককে শক্তিতে পরিণত করা সম্ভব।
মুসলিম শাসনের স্বর্ণযুগ কালান্তরে নিঃশেষের পথে
শুধু গ্রানাডা ট্র্যাজেডি স্পেনের মুসলমানদের সোনালী দিনগুলোকে করুণ ইতিহাসের ফ্রেমে বন্দি করে রেখেছে তাই নয়, ভিন্ন ভিন্ন কায়দায় অভিন্ন লক্ষ্য হাসিলের হীন লক্ষ্যে মুসলিম স্বর্ণকালগুলোকে ইসলাম বিদ্বেষীরা প্রতিনিয়ত কফিন বন্দি করে চলছে। এইতো সেদিন ইরাকে স্বৈরাচারী সাদ্দাম নিধনের ছুঁতোয় মুসলমানদের শতশত বছরের ঐতিহ্যের লীলাভূমিকে তারা ধুলোয় মিশিয়ে দিল। সাম্প্রতিক কালে মিশরের কথা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে? ইসলাম বিরোধী শক্তি তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সম্ভবনাময়ী মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত করে রেখেছে। কখনো মুসলিম দেশের ভেতরে সংকট তৈরি করে, আবার কখনো পার্শ্বদেশ দ্বারা সংকট তৈরি করে। ইরান, তিউনিশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দিকেই এখন তাদের লোলুপ দৃষ্টি। এ সকল দেশের সম্পদ লুন্ঠন করতে পারলেই বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদীদের শক্তির আর দ্বিতীয় কোন প্রতিদ্বন্দী থাকেনা।
ঘটনার ধারাবাহিকতা
খৃষ্টানরা ৮৯৮ হিঃ ১৪৯৩ সালের পয়লা এপ্রিলে ধোঁকা দিয়ে মুসলমানদের সলিল সমাধি ঘটিয়েছিল, ঠিক একই কায়দায় পৃথিবীর নানাপ্রান্তে মুসলমানদেরকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ষড়যন্ত্র এখনো অব্যহত রেখেছে । ১৯৯৩ সালের এই দিনে ৫০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে খৃষ্টান সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা মিলিত হয়ে “হলি মেরী ফান্ড” গঠন করে। বৈঠক করে তারা এ সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা মুসলমানদেরকে কোথাও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিবে না। মুসলিম দেশে দেশে শুধু ঘটেই চলছে একের পর এক ঘটনার পূনারাবৃত্তি। বিট্রিশ কলোনাইজের সাবেক মন্ত্রী গ্লাসস্টোন এর একটি বক্তব্যে বলেছিলেন, “মুসলমানদেরকে ধ্বংস করার দু’টি প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রথমত: তাদের কাছ থেকে কুরআন কেড়ে নিতে হবে, কিন্তু তা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত: তারা যেন কুরআনের প্রতি ভালবাসা হারিয়ে ফেলে! সে কাজ করতে হবে কৌশলে; আর তা হবে কার্যকরী। বছরের পর বছর মায়ানমারে মুসলমানদেরকে গ্রানাডার আদলে পুড়িয়ে, গুলি করে পাখির মত মারা হচ্ছে। হয়তোবা সময়ের পরিক্রমায় মায়ানমারও হবে আরেক স্পেন। মুসলমানদের নিধন করতে ইহুদী-খৃষ্টান, হিন্দু- বৌদ্ধ ও জয়নবাদীরা একজোট।
মায়ানমারে শুধু নয়, একই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চলছে ফিলিস্তিন, বসনিয়া, ইরাক, আফগানিস্থান, কাশ্মীর, সিরিয়াসহ বিশ্বের নানা অঞ্চলে। আমাদের দেশও সে নারকীয় হত্যাকান্ড থেকে নিষ্কৃতি পায়নি। বাংলাদেশে ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্ত্বরে আলেম-ওলামাদের সমেবেত করে আগাম কোন সতর্কবাতা না দিয়ে ঘুমন্ত, ইবাদতরত আলেম-ওলামা-মুসল্লীদের ওপর চলে এক বর্বর নারকীয় হত্যাকান্ড। এই হত্যাকান্ডের পরিসংখ্যান এখনো দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট নয়, বরং যারাই এ হত্যাযজ্ঞের ব্যাপারে মুখ খুলতে চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছে নানামুখী নির্যাতন। মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলতে গেলে মানবাধিকার সংস্থা “অধিকারের” পরিচালককে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘদিন জেলে পুরে অধিকারের অধিকার সরকার নির্লজ্জভাবে হরণ করেছে।
নিশ্চিতভাবে এখন ব্রিটিস কলোনাইজের সাবেক মন্ত্রী গ্লাসস্টোনের বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী এখন কুরআনের অবমাননা করে চলছে ইহুদী খৃষ্টানদের পাশাপাশি নামধারী মুসলমানরাও। কিন্তু যারা নিজেদের মুসলমান দাবি করে, কুরআনের প্রেমিক অথবা কুরআনের কর্মী দাবি করে, তারা কি এর বিরুদ্ধে কোন কর্মসূচী পালন করতে বা প্রতিবাদ করতে সক্ষম হয়েছে? ইসলাম বিরোধীরা ইসলামকে সেকেলে, জঙ্গী, সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী বলে নানা প্রকার বিকৃত প্রচারণা চালাচ্ছে। মুসলিম তরুণদের মস্তিকে পচন ধরাতে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতে সহজলভ্যভাবে বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে সন্তর্পনে মগজ ধোলাইয়ের বীজ বোপন করে দেয়া হচ্ছে। যার ফলে ইসলামের প্রতি তরুণদের আগ্রহ হারিয়ে যাচ্ছে, দায়িত্ব ভুলে তারা নিজেদের অজান্তেই নিজেরা ভোগবাদী জীবনে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। যা মুসলিম মিল্লাতের জন্য বড় অশনি সংকেত বৈ কি বলা চলে?
লক্ষ্যহীন যাত্রা…
আত্মবিস্মৃতির ইতিহাস আমাদের বিবেককে শুধু গ্রানাডা ট্র্যাজেডির দিন পয়লা এপ্রিলে ভাবিয়ে তুললেও আমরা কোন শিক্ষাই যেন গ্রহন করতে পারিনি। গ্রানাডা ট্র্যাজেডির পর মুসলমানদের ওপর আরো কত ট্র্যাজেডি বয়ে গেছে তার ইয়াত্তা নেই। ইহুদী-খৃষ্টান ও জায়নবাদীরা মুসলিম শক্তিকে নিধন করতে অবিরত মরিয়া হয়ে একের পর এক ট্র্যাজেডির জন্ম দিয়ে চলেছে। মুসলমানদের দিয়ে মুসলমানদের হত্যা করে চলছে। এরপরও মুসলিম নেতৃবৃন্দ অজানা উদ্দেশ্যে ইসলাম বিদ্বেষীদের গোলামী করেই চলছে। যত দিন আমরা শিক্ষা গ্রহন করব না, হয়তো তত দিন এ দূর্দশা স্কন্ধে নিয়ে মুসলমানদের চলতে হবে।
যে কোন সচেতন মানুষকে জিজ্ঞেস করলে অকপটে বলতে পারে- ইহুদী ও খৃষ্টান দুনিয়ার স্বার্থ রক্ষায় কারা নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে মুসলমানদের নেতৃত্ব কে দিচ্ছে, তা কেউ বলতে পারে না। এ যেন লক্ষ্যহীন যাত্রা, মাঝিহীন তরী। যে যার মত করে অগোছালো, অপরিপক্ক পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। নিজেদের ভেতর নানা জাতের বিভেদে। ইসলাম বিদ্বেষীদের গোলামী করতে মুসলিম শাসকরা ব্যতিব্যস্ত। কৌশলের নামে নিজেদের আত্মপরিচয় জলাঞ্জলি দিয়েই যেন আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছে।
প্রয়োজন আত্মোপলদ্ধি ও সময়োপযোগী কার্যকর পরিকল্পনা
আমরা নগদ পেতে চাই। আর যখন নগদ মিলে না, তখন হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিই। অথচ আল্লাহ নামায ও ধৈর্য্যের মাধ্যমে তার সাহায্য কামনার নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলমানরা এখন আত্মকেন্দ্রিক; মুসলিম জনগোষ্ঠির স্বাথের্র চেয়ে তাদের কাছে সাম্রাজ্যবাদীদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন মুখ্য বিষয়। বিশ্বব্যাপী সস্তা কিছু শ্লোগান দিয়ে আরো ভিন্ন রকমের গ্রানাডা ট্র্যাজেডি সৃষ্টির পায়তারা চলছে। এখন নতুন শ্লোগান হল- গ্লোবালাইজেশান “বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়”। বাস্তবে এ সকল সস্তা শ্লোগান দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী খৃষ্টান শাসক ও যায়নবাদীরা দূর্বল শান্তিপ্রিয় রাষ্ট্রগুলোকে অশান্ত করে তুলে ফায়দা লুটতে চায়। নিজেরা কাজীর আসনে বসে আমাদের সর্বনাশ করতে চায়। ইতিহাস বলে, আমেরিকা রাশিয়াকে টুকরো টুকরো করার জন্য তালেবানদের প্রয়োজনীয় রসদ দিয়েছিল। স্বার্থ শেষে সে তালেবানদেরকে সন্ত্রাসী গোষ্টি হিসেবে দাবি করে তাদের নিধনে আমেরিকা সর্বশক্তি নিয়োগ করে একটি স্বাধীন দেশকে তছনছ করে দিয়েছে। লাদেন সৃষ্টি তাদেরই পরিকল্পনার অংশ। স্বার্থ শেষে লাদেনকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে তারাই নির্মম ভাবে হত্যা করেছে।
এ সকল সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে যে কোন স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী বানায়, আবার কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে স্বার্থ হাসিলের জন্য স্বাধীনতাকামী বা নিপীড়িত জনগোষ্ঠি হিসেবে দুনিয়ার কাছে উপস্থাপন করে। দুনিয়ার যত বড় বড় ঘটনা ঘটেছে সকল ঘটনাই তাদের পরিকল্পনা মাফিক এগিয়েছে। ৯/১১ এর ঘটনা দিয়ে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের এক নম্বর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যে ঘটনার সাথে ইহুদীদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে প্রমাণিত ।
বর্তমানে সিরিয়াতে আসাদ বিরোধীদেরকে স্বাধীনতাকামী বলে আমেরিকার মিত্র শক্তিগুলো সার্বিক সহযোগিতা করছে, এ যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা। এখন কেউ জানেনা এর সমাধান কবে হবে। মিশরে ইসলামপন্থীদের হাজার হাজার সমর্থককে হত্যা করেছে তাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। সম্প্রতি প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকে বিচারের নামে অযৌক্তিকভাবে ফাঁসির রায় দিয়েছে। এই প্রক্রিয়া তারা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের দেশেও সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন চলছে পুরোদমে। এরপরও কি আমাদের আত্মোপলদ্ধি হবে না? এরপরও কি মিল্লাতের স্বার্থরক্ষায় মুসলিম নেতাদের কোন কার্যকরী পরিকল্পনা থাকবে না?
মুসলিম উম্মাহর শিক্ষা
গ্রানাডা এখন শুধুই ইতিহাস। মুসলমানদের অনুভূতি জাগ্রত করার এক ঐতিহাসিক ইমারত। এর আসল ইতিহাস ব্যাপকভাবে সবখানে ছড়িয়ে দিতে হবে। আমরা গ্রানাডা থেকে শিক্ষা নিতে পরিনি, শিক্ষা নিতে পারিনি আরো অনেক ঘটনার পর ঘটনার। এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না। আমাদেরকে আল্লাহর ওপর আস্থাশীল হয়ে মজবুত কদমে এগিয়ে যেতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা আর ইসলাম বিদ্বেষীদের পাতানো ফাঁদে নিজেদের জলাঞ্জলি দিব না। এখন নিজের পায়ে নিজেরা দাঁড়িয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে হবে। জনবল ও সম্পদে মুসলমানরা এখনো এগিয়ে আছে। তৈরি করতে হবে দক্ষ জনবল এবং সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
এখন বড় প্রয়োজন বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সুষ্ঠু ও দূরদর্শী পরিকল্পনা। এমন নেতা প্রয়োজন যে নেতা শক্তিধর গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে না, যাদের উদ্দেশ্যই থাকবে নিপীড়িত মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা। দুনিয়ার কাছে তারা নিজেদের পদানত করবে না, বরং দুনিয়া তাদের কাছে পদানত হবে। আর এমন সুষ্ঠু দূরদর্শী সুবিন্যাস্ত পরিকল্পনা নিতে হবে যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাতিলের সকল পরিকল্পনাকে কাবু করে মুসলিম মিল্লাতকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন করা সম্ভব হবে। যার ফলে চলমান অশান্তির দাবানল নির্বাপিত হয়ে পৃথিবী বাসযোগ্য শান্তির নীড়ে পরিণত হবে। যেখানে থাকবে না জুলুম, মজলুমের বুকফাঁটা চিৎকার। যেখানে সকল ধর্মমতের অধিকার হবে সুনিশ্চিত। হতাশার সকল গ্লানি ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে মুসলিম উম্মাহর নেতৃবৃন্দকে। তাই সময় এসেছে আর নয় পিছুটান, কবির কন্ঠে কন্ঠ মিলাই-
‘সাহসের সাথে কিছু স্বপ্ন জড়াও,তারপর পথ চলো নির্ভয়ে
আঁধারের বুক চিরে আসবে বিজয়, মুক্তির পথ সেতো নিশ্চয়।’
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট
ই-মেইল: [email protected]