বিএনপি বিভক্ত না হওয়ায় ওবায়দুল কাদের ‘অন্তর্জ্বালায় আর্তচিৎকার করছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে শনিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ওবায়দুল কাদের গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বলেছেন, ‘বিএনপি ভেঙে যাবে, বিএনপির পরিণতি মুসলিম লীগের দিকে যাচ্ছে কিনা তিনি আশঙ্কা করছেন। বাহ! বাহ! বিএনপি নিয়ে এতো মাথা ব্যাথা ওবায়দুল কাদেরের। এটা তো আমার কাছে খুব বিস্ময়কর মনে হচ্ছে, মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি সেটাই মনে হচ্ছে। আমি বলতে চাই- আওয়ামী লীগ তো ভেতর থেকে ভেঙ্গে চুপসে গেছে। সেখানে নানা পন্থী এবং সিনিয়র-জুনিয়র এর নানা ধারা। যে কারণে তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেনি, পুলিশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে রাতের আঁধারে জাল ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স পূর্ণ করতে হয়েছে। পুলিশী ক্ষমতা যখন থাকবে না তখন তো আওয়ামী লীগের বাতি জ্বালানোর লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
রিজভী বলেন, বিএনপির মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ। এই ঐক্যে ফাটল ধরাতে পারেনি বলেই ওবায়দুল সাহেবের বুকে বড় জ্বালা। এজন্য তিনি বিএনপির ছিদ্র খুঁজতে আর্তচিৎকার করছেন। ওবায়দুল কাদের সাহেবকে মনে রাখার জন্য বলবো-শকুনির দোয়ায় গরু মরে না।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে গত শুক্রবার তার আত্মীয়স্বজনরা দেখা করতে গিয়েছিলেন। কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার বাস করার জায়গাটির কোনো পরিবর্তন হয়নি। অস্বাস্থ্যকর, স্যাঁতস্যাঁতে ও ধুলাবালিতে আকীর্ণ কক্ষটিতে তাকে বাস করতে বাধ্য করা হচ্ছে। বারবার এ বিষয়ে কারাকর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও তারা ভ্রুক্ষেপহীন থেকেছে। বেগম জিয়ার সাথে যে আচরণ করা হচ্ছে সেটি অমানবিক ও দু:খজনক। বিপুল জনপ্রিয় নেত্রীকে পরিকল্পিতভাবেই মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিকে পর্যুদস্ত করতে দমনের নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগ করে লাল দেয়ালের মধ্যে মুক্তিহীন অন্তরীণ করে রেখেছেন।
রিজভী বলেন, বেগম জিয়ার জামিনকে বিলম্বিত করা হচ্ছে নানা কায়দা-কৌশল করে। তাই মুক্তিপণ আদায়ের মতো আচরণ করছে সরকার তার সাথে। অর্থাৎ তাকে বন্দী করে একের পর এক শুন্য জনপদে ভোটারবিহীন নির্বাচন করা। তবুও গণতন্ত্র পুন:রুদ্ধারের সংগ্রামে অবিচল বেগম জিয়াকে কোনোভাবেই টলাতে পারেনি সরকার। দেশনেত্রী মুক্ত থাকলে আওয়ামী সরকার কোনভাবেই ভোটের আগের দিন ‘নিশীথ রাতের ভোট’ করতে পারতেন না। তার অসুস্থতার কথা বিবেচনা না করে তাকে ঘনঘন আদালতে হাজির হতে বাধ্য করা হচ্ছে। আদালতে অপরিসর এবং বসার অনুপযোগী এমন একটি পরিবেশে তাকে নিয়ে আসা হয়। বারবার বেগম জিয়া এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। এটাও ধারাবাহিক জুলুমের একটি অংশ। আমি দলের পক্ষ থেকে বেগম জিয়ার প্রতি সরকারের এধরনের ঘৃণ্য আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে দেশনেত্রীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত ও নি:শর্ত মুক্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, গতকাল (শুক্রবার) ‘নিশীথ রাতের ভোটের প্রধানমন্ত্রী’ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে যারা তাকে ভোট দিয়েছেন এবং যারা দেননি তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আসলে দেশের আসল মালিক জনগণের প্রকৃত ভোট দেয়ার অধিকার ও সাংবিধানিক দাবিকে উপহাস করার নতুন মাত্রা যোগ করলেন ২৯শে ডিসেম্বর রাতের ভোটের প্রধানমন্ত্রী। ভোটের আগের দিন রাতে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে এখন তিনি জ্ঞানতাপস সেজে সফলতা-বিফলতার পরিসংখ্যান দিচ্ছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী ভোট ডাকাতিতে জড়িত নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ দিতে ভুলেননি-আসলে এটিই হচ্ছে তার প্রকৃত ধন্যবাদ। আসলে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ জনগণের সাথে নিচু মানের (সেন্স অব হিউমার)। কেননা কয়েক মাস ধরে চালানো মামলা ও গ্রেফতারের হিড়িকের সাথে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে নানাবিধ দমন-পীড়ণ ও নিপীড়ণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনী-এজেন্সি ও দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে চারিদিকে রক্তপাত ও হত্যার মর্মর পদশব্দে ভোটের যে নজির স্থাপন করেছেন সে কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রীর। নির্বাচনের পূর্বাপর অগুনতি সহিংস সন্ত্রাসের প্রতাপে এখনো জনজীবন নির্ভয়, নি:শঙ্ক হতে পারেনি। ভয়-কষ্ট-ক্লান্তি ও হতাশার অনুভূতি মানুষের মনে জেঁকে বসেছে। জনগণ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণকে সম্পূর্ণরুপে প্রত্যাখান করেছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, শওকত মাহমুদ, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।