একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘তথাকথিত’ আখ্যায়িত করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সুস্থ মানসিকতার কেউ এসব করতে পারে না। জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে সংবিধান মেনে নির্বাচন করে সরকার গঠন করার আহ্বানও জানান তিনি।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গণফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় কামাল হোসেন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীন সার্বভৌম দেশে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবে। চুপিচুপি রাতে কী হলো, আর সকালে বলে দিল হয়ে গেছে। রাষ্ট্রকে নিয়ে তো এভাবে খেলা করা যায় না। যারা এগুলো করছে, তারা না বুঝে করছে। যারা উপদেশ দিচ্ছে, তারা সঠিক উপদেশ দিচ্ছে না। এই যে তৃতীয়বারের মতো পাঁচ বছরের জন্য যাচ্ছি, এই ধরনের তথাকথিত নির্বাচন…এটা কোনো সুস্থ মানুষের করার কথা না। মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে কেউ এগুলো করতে পারে না। এটি অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়। সংবিধান অনুযায়ী এটা হয় না।’
বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ টেনে কামাল হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের কাজকে বঙ্গবন্ধু বলতেন রাজ চালাকি। আমরা রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছি রাজ চালাকিতে। ৩০ ডিসেম্বর ছিল রাজ চালাকির সুন্দর উদাহরণ।’ তিনি আরও বলেন, তৃতীয়বারের মতো একজন প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেছেন। ৩০০ লোক সাংসদ হয়ে গেছে। আর বিরোধী দলে সাতজন। এটা কোনো খেলা নয়। ১৭ কোটি মানুষকে নিয়ে খেলা করা যায় না।
জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানিয়ে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক বলেন, ‘আসুন বছরের প্রথমদিকে সংকট সৃষ্টি না করে, জাতীয় সংলাপ হবে সবচেয়ে ভালো পথ। সংলাপের মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক, কীভাবে আমরা সংবিধানকে মেনে নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকার গঠন করব।’
আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মৃতিচারণা করেন ড. কামাল। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একই উড়োজাহাজে দেশে ফিরেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নীতির প্রশ্নে আপসহীন ছিলেন। ওই মাপের নেতৃত্ব ছিল বলেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু বাস্তবতাকে মূল্যায়ন করতে পারতেন। সঠিকভাবে সঠিক সময়ে সঠিক জিনিসটাকে তুলে ধরতেন।
জেএসডি সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা আ স ম আবদুর রব বলেন, কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যাঁরা ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছেন তাঁরা বিদেশের কোনো নির্দেশে রাজনীতি করেন না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অতি ক্ষমতার লোভ। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কথা স্মরণ করে রব বলেন, বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা সমার্থক। একটা বাদ দিয়ে আরেকটাকে উপলব্ধি করা যায় না।
গণফোরাম নেতা আবু সাইয়িদ বলেন, বিদেশে সংবিধান প্রণেতাদের সম্মান করা হয়। কিন্তু এ দেশে অসম্মান করা হয়। মুজিব কোট গায়ে দিলেই মুজিবের আদর্শ ধারণ করা যায় না। বঙ্গবন্ধু কোনো জাতির, দলের বা পরিবারের নন—তিনি বিশ্ব নেতা।
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন গণফোরামের নেতা সুব্রত চৌধুরী, মোকাব্বির খান, মফিদুল ইসলাম খান কামাল, আমসা আমিন প্রমুখ।
সূত্র: প্রথম আলো