অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রশাসনকে একতরফা না থাকার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ভাইয়েরা সন্ত্রাস থেকে সরে আসুন। প্রশাসন একতরফা থাকলে সেটার পরিণতি ভালো হবে না।’
শনিবার বিকেলে নিজ নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁও-১ আসনের ২৯ মাইল নামক স্থানে নির্বাচনী পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ২১ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের এক হিন্দুবাড়িতে আগুন লেগেছে শটসার্কিটের ফলে, যা পত্রিকায় দেখেছি। কিন্তু এসে শুনতেছি ওই ঘটনায় আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মামলা করা হয়েছে। এটা তো ঠিক নয়। আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির এমন কোনো নেতা নেই যে এই ধরনের কাজ করবে। প্রশাসনকে বলি, আপনার এই আগুনের সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। একতরফা হয়ে কোনো কাজ করবেন না। প্রশাসন একতরফা থাকলে সেটার পরিণতি ভালো হবে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিঙ্গিয়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে আগুন লাগার ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট। সরকারি ছত্রছায়ায় মানুষের ওপর অন্যায়-অত্যচার ও নির্যাতন চালাচ্ছে। এই অবস্থা আর চলতে দেওয়া যাবে না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এই সন্ত্রাস বেশ কিছু দিন ধরে, এই এলাকায় মানুষের ওপরে নির্যাতন করে আসছে। আমরা নির্বাচন করছি সন্ত্রাস দূর করার জন্য। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে, অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে।
এর আগে দুপুর ২টায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর বাসটার্মিনালে নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপির মহাসচিব বলেন, যে নেত্রী (বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া) গণতন্ত্রের জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন যিনি, তাঁর সবি হারানোর পরেও থেমে থাকেননি। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত গণতন্ত্রের গান গেয়ে বেড়িয়েছেন, সেই নেত্রী সেই মাতা ১০ মাস ধরে ঢাকার একটি পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে বন্দি।
নির্বাচনী প্রচারণায় দিনাজপুর-৫ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী এজেডএম রেজওয়ানুল হক ও ৪ আসনের প্রার্থী সাবেক সাংসদ আক্তারুজ্জামান মিয়াকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আপনার একটি ভোট গণতন্ত্রের মাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারে। তিনি আরো বলেন, সবাই ৩০ ডিসেম্বর সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিবেন, ভোট গণনা করে বিজয় নিয়ে তারপর বাসায় ফিরবেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি, নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে নির্বাচন কমিশন। একটি ঠুঁটো জগন্নাথ, তাদের কোনো ক্ষমতা নেই। সরকার আজ অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করছে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে। আমি প্রশাসনকে বলতে চাই, নিরপেক্ষভাবে কাজ করুন। এদেশের মানুষ এখন পরিবর্তন চায়। এদেশের মানুষ আর স্বৈরাচারের অধীনে থাকতে চায় না। এখন তারা দুর্নীতি থেকে মুক্তি চায়, আমাদের যুবক তরুণরা চাকরি চায়, আমাদের মা-বোনেরা নিরাপত্তা চায়, কৃষক তার ফসলের দাম চায়। আমরা রাতে শান্তিতে ঘুমাতে চাই, আমাদের সন্তানের নিরাপত্তা চাই, যেনো দিন শেষে তারা নিরাপদে বাসায় মা ও সন্তানের কাছে ফিরতে পারে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে বিরোধী দলের মানুষেরা কী অপরাধ করেছে গত ১০ বছর থেকে তারা বাসায় ঘুমাতে পারে না, কী অপরাধ করেছে আমার সেই মা, যার সন্তানকে তুলে নিয়ে গেছে তাদের কোনো খোঁজ নেই, কী অপরাধ করেছে সেই স্ত্রী যার স্বামীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুম করেছে। এ সকল নির্যাতন শেষ করতে হবে। এই গুম খুন বন্ধ করতে হবে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। আজকে আমরা ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট একসাথে এই সরকারকে পরাজিত করতে কাজ করছি।
এরপর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দিনাজপুর-৪ আসনের চিরিরবন্দর উপজেলার ঈদগাহ মাঠে এবং এর আগে সকালে নীলফামারীর সৈয়দপুরের ফাইভ স্টার মাঠে নির্বাচনী প্রচারণায় বক্তব্য দেন। এ সময় জেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এরপর তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের পথসভায় যোগদানের উদ্দেশে দিনাজপুর ত্যাগ করেন।