মুসাফির রাফি
মানুষ আসলে পরিবর্তন চাইছে। কিন্তু সত্যিকারের কাংখিত পরিবর্তন করতে পারবে এমন নেতা জনগনের সামনে খুব একটা নেই। সেদিক থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী বেশ সৌভাগ্যবান। তারা নুরুল ইসলাম বুলবুলের মত একজন চেঞ্জমেকারকে পেয়েছে। এমনই বলছিলেন চাঁপাই নবাবগঞ্জের এক ভোটার।
তার সাথেই চায়ের আড্ডার ছলে জানতে চাইছিলাম, কেমন বুঝছেন এলাকার হালচাল। তিনি আরো বললেন, গোটা দেশে কি হবে তা জানিনা, তবে চাঁপাইয়ের মানুষ সত্যিকারের মানুষ চিনতে ভুল করেনা।
তার কাছে অবাক হয়ে শুনছিলাম, স্থানীয় মানুষগুলোর কষ্টের কথা। তারা বিগত ১০ বছরে পুরোদমে সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ছাত্রদল-ছাত্রশিবিরের কর্মীদেরকে দমিয়ে রাখা হয়েছে। চাঁপাইয়ের মানুষ এখনও ভুলেনি কিভাবে প্রশাসনের সহযোগিতায় একজন শিবির কর্মীকে হত্যা করে তাকে আবার ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যা করেছিল স্থানীয় দুর্বৃত্তরা।
এমনিতেও চাঁপাই নবাবগঞ্জের মানুষ ইসলামপ্রিয়। কুরআন দিবসের ঘটনা ঘটেছিল এখানেই। কুরআনের অপমান সহ্য করতে পারেনি এখানকার জনগন। আর নির্বিচারে সেই মানুষগুলোর উপর তৎকালীন যেই ম্যাজিস্ট্রেট গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল, অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়েছিল সেই মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান আওয়ামী সরকারের আমলেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হয়েছিল, তাও মানুষ জানে।
বিএনপির নেতারা এখানে দুধের মাছি। নির্বাচনের সময়ে তাদেরকে দেখা যায়। এর আগে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন হারুন-পাপিয়া দম্পতির দুর্নীতির খেসারত জনগনকে দিতে হয়েছে। এই নেতারা নির্যাতিত কর্মীদের পাশে কখনোই দাঁড়ায়নি। তারা ঢাকায় সেন্ট্রালের সাথে কানেকশন রাখে, আর টকশোতে গলাবাজি করে বেড়ায়। কিন্তু মানুষের সুখে দুখে তারা কখনোই ছিলনা।
অন্যদিকে নুরুল ইসলাম বুলবুল ছাত্রজীবন থেকেই সংগ্রামী নেতা। ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি এবং সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের একসময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হওয়ায় ছাত্রশিবির আর ছাত্রদল উভয় শিবিরেই তিনি ভীষনভাবে গ্রহনযোগ্য। তারুন্যের ভোট বুলবুল যে একাধারে পেয়ে যাবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হলো মাত্র, এরই মধ্যে তরুণরা নিজেদের উদ্যেগেই এলাকায় নানা রকমের গান গেয়ে, প্রচারপত্র বিলি করে এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বুলবুলের পক্ষে জোয়ার তুলেছে।
নুরুল ইসলাম বুলবুল সম্পর্কে বলতে গিয়ে চাঁপাই নবাবগঞ্জ-৩ আসনের এক ভোটার তার প্রতিক্রিয়ায় বললেন, বুলবুল মাঝবয়সী একজন মানুষ। কিন্তু দেখতে কেমন বুড়ো হয়ে গেছে। আসলে বিগত ১০ বছরে তার মত ত্যাগ স্বীকার করেছে, নির্যাতন সহ্য করেছে খুব কম সংখ্যক নেতা। জেলে গিয়েছে একাধিকবার। পায়ে ব্যথা। ঠিকমত হাটতেও পারেনা। মাসের পর মাস পরিবার থেকে দূরে আত্মগোপনে দিন কাটিয়েছে। অল্পবয়সেই নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় লোকটা এমন হয়ে গেলো।
তিনি ক্ষোভের সাথে বললেন, এরকম ত্যাগী নেতা বিএনপি জামায়াতের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে খুব বেশী নেই। অথচ সেই বুলবুলকে জোটের মনোনয়ন দিলনা, এটা স্থানীয় জনগন ভালোভাবে নেয়নি। হারুন অন্তত এবার বুলবুলের সম্মানে বসে যাবে, এটাই জনগন আশা করেছিল। অথচ সে কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করে বুলবুলকে নোমিনেশন পেতে দেয়নি, এটাও মানুষ বুঝে গেছে।
হারুন ও তার দল মনে করেছিল, ধানের শীষ না পেয়ে বুলবুল হয়তো দুর্বল হয়ে যাবে। কিন্তু হয়েছে উল্টো। এটাকে অন্যায় আচরণ বলে মনে করছে স্থানীয় জনতা। ফলে তারা দিনে দিনে বুলবুলের প্রতি সহানুভুতিশীল হয়ে পড়ছে। সারা বাংলাদেশে ধানের শীষ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। ধানের শীষকে সত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু চাঁপাইতে এসে সেই হিসেব পাল্টে গেলো। এখানে নুরুল ইসলাম বুলবুল আর তার প্রতীক আপেল হয়ে গেছে মজলুম জনতার একমাত্র প্রতিনিধি।
স্থানীয় ভোটাররা মনে করছেন, গত ১০ বছর যেভাবে তারা নিষ্পেষিত হয়েছেন, বঞ্চিত হয়েছেন, অবিচারের শিকার হয়েছেন, সেটার প্রতিকার করতে গেলে সুবিধাবাদী হারুন নয়, বরং নুরুল ইসলাম বুলবুলই হবেন সত্যিকারের যোগ্য প্রার্থী। তাই জোটের নোমিনেশন না পেলেও নুরুল ইসলাম বুলবুলের প্রতি জনগনের সহানুভুতি বেড়েই যাচ্ছে।
এর আগে চাঁপাই নবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী দাঁড়ালেও তাদের উভয়ের যুক্ত ভোটের চেয়েও বেশী ভোট পেয়ে জামায়াতের প্রার্থী পৌরসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে। চেয়ারম্যান হিসেবে জামায়াতের প্রার্থী ইতোমধ্যেই জনগনের আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন। তার দুর্নীতিমুক্ত জীবনযাপন জনগনের মনে জামায়াতের ব্যপারে ইতিবাচক অনুভুতি সৃষ্টি করেছে। তাই আশা করা হচ্ছে পৌরসভা নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে সংসদ নির্বাচনেও। বাজেটের একটা টাকাও আমার পেটে ঢুকবেনা-নুরুল ইসলাম বুলবুলের এই প্রতিশ্রুতি জনগনকে আশান্বিত করেছে। নির্বাচনের ফলাফলে নুরুল ইসলাম বুলবুলকে জনগন তার হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় জয়যুক্ত করবে- এটাই চাঁপাই নবাবগঞ্জ-৩ আসনের সর্বশেষ বাস্তবতা।