অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রতীক বরাদ্দের পর সারাদেশে শুরু হয়েছে গণগ্রেফতার। আর এই গ্রেফতারের শিকার সরকার বিরোধী জোট বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত। প্রতীক বরাদ্দের পর যখন সারাদেশে উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করার কথা তখন থেকেই কোণঠাসা বিএনপি ও জামায়াত।
সরকারের নির্দেশে আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ এনে সাতক্ষীরায় শতাধিক বিএনপি ও জামায়াত নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অথচ এরা আচরণ করার সুযোগই পেল না। কোন সমাবেশ বা মিছিল-মিটিং তো দূরের কথা বিএনপি জামায়াত তাদের নিজেদের বাড়িতেই থাকতে পারছে না।
এছাড়া কুমিল্লা, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরে অর্ধশতাধিক বিরোধী জোটের নেতাকর্মী আটক হয়েছেন। এদের কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। কেউ কেউ প্রার্থীর মিছিল করার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আজ পিরোজপুর-১ আসনে শামীম সাঈদীর মনোনয়ন পত্রে প্রস্তাবক মো. সোহরাব হোসেন, সমর্থক মাওলানা শওকত, মাদরাসা শিক্ষক মোঃ নূরুল ইসলাম ও মাইক্রোচালক মোস্তফাকে ডিবি পুলিশ আটক করেছে। ডিবি পুলিশের ওসি মোঃ মিজানুল হক আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন তারা একটি মিটিং করছিল। এ জন্য তাদের এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার মানে বিরোধী জোটের প্রার্থীরা মিটিং পর্যন্ত করতে পারবে না। এমনই নির্দেশ সরকারের। অথচ এসব দেখেও নির্লিপ্ত ইসি।
এদিকে ইসির বিশেষ সূত্রে জানা যায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন ও সহিংসতামুক্ত রাখতে সারাদেশে দুই লাখ ৪০ হাজার জনের একটি তালিকা হাতে নিয়ে মাঠে নেমেছে পুলিশ। নির্বাচনের আগে তাদের গ্রেফতার করে একটি সংঘাতমুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষেই এই অভিযান।
সূত্র জানাচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ও ভোট কেন্দ্রকেন্দ্রিক সহিংসতা ছড়াতে পারে, ভোট কেন্দ্রে হামলা ও ভোটারদের ওপর জোর খাটাতে পারে এমন সব ব্যক্তিদের এই তালিকায় আনা হয়েছে। সবগুলো গোয়েন্দা সংস্থার করা পৃথক তালিকা ধরে একটি সমন্বিত তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। যাতে সারা দেশে এমন ব্যক্তির সংখ্যা দুই লাখ ৪০ হাজার দাঁড়িয়েছে বলে জানায় সূত্র।
সূত্র আরও জানায়, প্রাথমিক তালিকায় এ সংখ্যা আরও বেশি ছিলো। তবে সবগুলো তথ্য যাচাই বাছাই করে চুড়ান্ত তালিকা প্রনয়ন করে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, একাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দ চূড়ান্ত হওয়ার পর এই চিহ্নিত ব্যক্তিদের ধর-পাকড় শুরু হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারনায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী ও সমর্থকরা মাঠে থাকবেন। তবে তাদের মধ্যে যারা সহিংস কিংবা প্রতিপক্ষর ওপর হামলা করতে পারে এমন রয়েছেন, তাদেরকেই চিহ্নিত করে আটক করা হবে। নিবার্চন কমিশনের তরফ থেকে এই আটকাভিযানের পক্ষে সম্মতি রয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি। এরই মধ্যে ওই তালিকা পুলিশ সদর দফতর থেকে পুলিশের প্রতিটি ইউনিট প্রধান ও পুলিশ সুপার বরাবর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
গড়ে দেশের প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের বিপরীতে অন্তত ৬ জন করে নাম রয়েছে। কোনও কোনও ভোট কেন্দ্রে ৭ থেকে ১০ জনের নামও রয়েছে বলে জানায় সূত্র। সন্ত্রাসবিরোধী তালিকা বলা হলেও মূলত এটি হচ্ছে বিরোধী দলের প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের তালিকা। আগামী ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে চিরুনী অভিযানের মাধ্যম এসব তালিকার আড়াই লাখ বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হবে, এমনটাই টার্গেট পুলিশের।
পুলিশের গ্রেপ্তারের সাথে সাথে সারা দেশে চলছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের তাণ্ডব। তাদের তাণ্ডবের হাত থেকে রেহাই পায়নি বিএনপির মহাসচিব মির্যা ফখরুলও। ঠাকুরগাঁওয়ের ডানারহাটে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্বাচনী সমাবেশে হামলা করেছে আওয়ামী লীগ। সেই সাথে তারা ৪টি গাড়িও ভাংচুর করে।
কবিরহাট উপজেলার কবিরহাট বাজার জিরো পয়েন্টে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদের পূর্ব ঘোষিত পথসভায় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা হামলা চালায়। এসময় সংঘর্ষে উভয় দলের ৪০ জন আহত হয়েছে।
ধুনটে পুলিশের অনুমতি পাওয়ার পর বিএনপি কয়েকশত মোটরসাইকেল নিয়ে ধুনট বাজারে প্রবেশ করলে আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালায়। তারা দা, কুড়াল ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপস্থিতে হামলা করে তারা। তারা ৩টি প্রাইভেট মাইক্রো-জিপ গাড়িসহ অন্তত ৫০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২০জন বিএনপির নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকনসহ তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে রাজাপুরের বাঘড়ি বাজার থেকে নাসিম আকনকে আটক করা হয়। অপর দুজনকে সোমবার রাতে আটক করা হয়।
আজ বিকালে লোহাগড়া বাজারসংলগ্ন ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নির্বাচনী কার্যালয় কর্মিসভা হওয়ার কথা ছিল। কর্মিসভার আগেই আওয়ামীলীগ প্রার্থী ক্রিকেটার মাশরাফির অনুগত ছাত্রলীগ লাঠি ও লোহার রড দিয়ে কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে অফিসের চেয়ার, টেবিলসহ অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এতে ফরিদুজ্জামান ফরহাদের আয়োজিত কর্মিসভা পণ্ড হয়ে যায়।
এভাবে সারাদেশে ধানের শীষ প্রার্থীদের সকল নির্বাচনী অফিস ও মিছিল সমাবেশে হামলা চালায় আওয়ামীলীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠন। অথচ এসব ঘটনায় একজন আওয়ামীলীগ কর্মীকেও গ্রেপ্তার করে নি পুলিশ। পুলিশের এসব আচরণ ইসির সক্ষমতা ও একইসাথে নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।