আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে রাজনীতিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কথা শুনলেন কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা।
বুধবার কানাডা, নির্বাচন ও রাজনীতি পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত দুটি বিদেশি সংস্থার (আইআইডি ও এনডিআই) উদ্যোগে গুলশানের একটি হোটেলে মতবিনিময় সভায় অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইডেন, নরওয়ে, জাপানের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ মতবিনিময় হয়।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখনও অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়নি। জবাবে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিরা জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। আমরা তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি।
বৈঠকে নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, বিগত সিটি নির্বাচনের মতো সংসদ নির্বাচন যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সব দলকে সহযোগিতা করতে হবে। বৈঠকের বিষয় নিয়ে কূটনীতিকরা কিছু বলেননি।
কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম ও গওহর রিজভী, আওয়ামী লীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন। এছাড়া সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর শারমিন মুরশিদ, সুজনের ড. বদিউল আলম মজমুদারসহ বিভিন্ন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠক শৈষে এইচটি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব কিছু করেছেন। কিছু বিষয়ে সমস্যা আছে। তা সমাধানের চেষ্টা করছি। শুধু ইসিকে গালাগাল না করে সহযোগিতা করতে হবে সব রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমকে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখানে মূলত নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন তা বলেছি আমরা। বর্তমান যে প্রেক্ষাপট তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না হওয়া সত্ত্বেও আমরা নির্বাচনে এসেছি। নির্বাচনে আসার পর দেখছি আমাদের জার্নি হচ্ছে লং, হিল জার্নি, আমরা আরও নিচের দিকে যাচ্ছি।
আমরা আশা করি, বাকি দিনগুলোতে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এ পর্যন্ত জনগণের কোনো আস্থা সৃষ্টি হয়নি। বস্তুতপক্ষে নির্বাচনটি আগেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন কারণে এবং এ থেকে যদি বেরিয়ে আসতে চান তাহলে তাদের প্রমাণ করতে হবে তারা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। নাহলে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আরও ‘খারাপ’র দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেন, নির্বাচনটা কিভাবে আরও ভালো করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের বক্তব্য হল- গত ১০ বছরে ও তারও আগে ২০০৭-০৮ সালে নির্বাচনী পুরো প্রক্রিয়ায় যে ধরনের সংস্কার করা হয়েছে, যার প্রত্যেকটি ছিল আওয়ামী লীগের উদ্যোগ। আজ একটা সিস্টেম দাঁড়িয়েছে, যার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। শুধু অভিযোগের জন্য অভিযোগ না করে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যেন তা করা হয়। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, ভেতরে আলোচনার কথা এখানে বলার কথা নয়। তবে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে ভালো পরিবেশ তৈরি হচ্ছে সেটিকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখানে যে জিনিসটা উঠে এসেছে, আগামী নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হয় দেশে-বিদেশে যদি দৃশ্যমান ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন না দেখা যায়, যেটার এখন কিছু আলামত দেখা যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায়। এগুলো তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। এটা হয়তো বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যেসব অর্জন আছে, খুব ভালো ভালো অর্জন আছে তা ম্লান করতে পারে। সেটাই হল তাদের ধারণা। যেটা আলোচনায় উঠে এসেছে। এটুকুই আমি বুঝতে পেরেছি।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিগত পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সেরকম না হয় সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেন, আমরা আগামী দিনের দিকে তাকাতে চাই। আমরা মনে করি যে, রাজনৈতিক দলগুলো যেন একটু সহনশীল হয়। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। সেই ভূমিকাটা শক্ত করার জন্য সরকারি দল কমিশন থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে।
সূত্র: যুগান্তর