অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
এবার রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসছে গোপন বৈঠক। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদিনই এখন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গোপন বৈঠকের তথ্য ফাঁস হচ্ছে। এসব নিয়ে এখন সারাদেশে তোলপাড় চলছে।
গোপন বৈঠক কি? কতজন লোক নিয়ে বৈঠকে বসলে এটাকে গোপন বৈঠক বলা হয়? বিগত দশ বছর আগে দেশবাসীর এসব জানা ছিল না। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরই মূলত আওয়ামী লীগ সরকার এদেশে গোপন বৈঠক আবিষ্কার করে। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা সাংগঠনিক কোনো বৈঠক করলেই সরকারের অনুগত পুলিশ বাহিনী বলছে গোপন বৈঠক। জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির এদেশে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। রাষ্ট্রের সংবিধান মেনে গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে তারা তাদের কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের দলীয় বাহিনী হিসেবে পরিচিত পুলিশ সদস্যরা জামায়াত শিবির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেই অপপ্রচার চালায় যে তারা নাশকতার উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক করছিল।
এমনকি ২০০ থেকে ৩০০ লোক নিয়ে কোনো রুমে প্রকাশ্যে আলোচনা সভা করলেও সরকার এটাকে বলছে গোপন বৈঠক। মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া মাহফিল ও বিবাহ অনুষ্ঠানে গেলেও পুলিশ বলছে তারা নাশকতার জন্য একত্রিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার এইভাবেই কথিত গোপন বৈঠকের নামে জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীদেরকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে যাচ্ছে। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো জামায়াতের কেন্দ্রীয় বয়োবৃদ্ধ নেতাদেরকে বাসা থেকে গ্রেফতার করেও সরকার মিডিয়ায় প্রচার করে যে গোপন বৈঠক থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে কারা গোপন বৈঠক করে? কারা মানুষের অধিকার হরণের জন্য গোপনে বসে ষড়যন্ত্র করে? দীর্ঘদিন পরে হলেও তা দেশবাসীর কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে ভোট ডাকাতির জন্য কারা গোপনে বসে বসে চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করছে মানুষের কাছে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রশাসনের লোকদের সঙ্গে প্রতিদিন যা করছে সেটাকে শুধু গোপন বৈঠক বললে ভুল হবে। এগুলো গণতন্ত্র, মানুষের মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ গভীর ষড়যন্ত্র।
গত সপ্তাহে রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের একটি গোপন বৈঠকের তথ্য গণমাধ্যমে এসেছে। এবার প্রকাশিত হয়েছে আরও ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের গোপন খবর।
গত মঙ্গলবার অফিসার্স ক্লাবে আগামী নির্বাচনে গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগকে জেতানোর জন্য ভয়াবহ গোপন পরিকল্পনা করেছে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা। আর বৈঠকটি হয়েছে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে। গোপন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব সাজ্জাদুল হাসান, নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমদ, পানিসম্পদ সচিব (শেখ হাসিনার অফিসের প্রাক্তন ডিজি) কবির বিন আনোয়ার, বেসামরিক বিমান পরিবহন সচিব মহিবুল হক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও মহানগরী রিটার্নিং অফিসার সদস্য সচিব আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ (বিচারক কাজী গোলাম রসুলের মেয়ে) কাজী নিশাত রসুল। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ওই দিন রাত সাড়ে ৭টা থেকে আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ মিটিংয়ে সারা দেশের ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সেট-আপ ও প্ল্যান রিভিউ করা হয়। ডিআইজি হাবিব বৈঠকে জানান, পুলিশ সূত্রের খবর অনুযায়ী ৩৩টি সিট নৌকার কনফার্ম আছে এবং ৬০-৬৫ টিতে কনটেস্ট হবে, বাকি আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কাজেই সাংঘাতিক কিছু করা ছাড়া এটি উৎরানো যাবে না।
বিস্তারিত আলোচনা শেষে ওই বৈঠকে মূল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়- নির্বাচন কমিশন থেকে বিএনপি-ফ্রন্টকে চরম অসহযোগিতা করা হবে, যতই চাপ দেয়া হোক প্রশাসনে হাত দেয়া যাবে না, ধরপাকড় বাড়ানো হবে, প্রার্থী গুম খুন করে এমন অবস্থা তৈরি করা হবে যাতে তারা নির্বাচন থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এই গোপন বৈঠক নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সারাদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, ক্ষমতা ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ যে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র করছে সেটাই প্রকাশ হলো।
কেউ কেউ বলছেন, এতদিন সরকার ও পুলিশ বাহিনী বলতো জামায়াত শিবির গোপন বৈঠক করে। এবার সরকার নিজেই গোপন বৈঠক শুরু করে দিল। অনেকে আবার বলছেন, জামায়াতের গেপান বৈঠক আওয়ামী লীগ ছিনতাই করেছে।